ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সুচিত্রা সেনের পঞ্চম প্রয়াণ দিবস বৃহস্পতিবার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৯
সুচিত্রা সেনের পঞ্চম প্রয়াণ দিবস বৃহস্পতিবার

পাবনা: কিংবদন্তি মহানায়িকা সুচিত্রা সেন নামটির সঙ্গে পরিচিত নন এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি বাংলা চলচ্চিত্রের এই মহানায়িকা সবাইকে শোক সাগরে ভাসিয়ে চলে যান না ফেরার দেশে। বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) সেই লাখো তরুণের স্বপ্নরাণীর পঞ্চম প্রয়াণ দিবস।

মহানায়িকার পৈত্রিক বাড়িটি পাবনার সাংস্কৃতিক কর্মীদের আন্দোলন ও প্রশাসনের সহযোগিতায় জামায়াতের হাত থেকে দখল মুক্ত হয়। বাড়িটিকে সংগ্রহশালায় করেছেন পাবনা জেলা প্রশাসন।

দেশ-বিদেশ থেকে দেখতে আসা দর্শনার্থীরা সংগ্রহশালাটিকে আরও সৌন্দর্যবর্ধন করার দাবি জানান। শুধু ছবি নয় তার ব্যবহার্য জিনিসপত্র সংগ্রহশালাতে রাখার দাবি জানান তারা।

সম্প্রতি মহানায়িকার পৈত্রিক বাড়িটি দখলমুক্ত করতে পাবনা সাংস্কৃতিক কর্মীরা রাজপথে নানা কর্মসূচি পালন করেছে। পাবনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে সুচিত্রাসেন চলচ্চিত্র উৎসব। আইনি লড়াই শেষে ২০১৪ সালের ১৪ জুলাই জামায়াতের হাত থেকে সুচিত্রা সেন বসতভিটা দখলমুক্ত করা হয়।

সংস্কার কাজ সম্পন্ন করে ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল বাড়িটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত দেয় পাবনা জেলা প্রশাসক। তবে দখলমুক্ত হওয়ার দীর্ঘ তিন বছর অতিক্রান্ত হলেও সংগ্রহশালাটির তেমন কোনো পরিবর্তন বা সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হয়নি বলে দাবি করেন এখানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা।

নাট্য সংগঠন পাবনা ড্রামা সার্কেলে সভাপতি ফারুক হোসেন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘পাবনাবাসী জানতোই না এই মহানায়িকার বাড়ি পাবনায়। সংস্কৃতিকর্মী ও পাবনা সাংবাদিকরা এ বিষয়টিকে জনসম্মুখে তুলে ধরেন। চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে ওই বাড়িটি লিজ নিয়ে দখল করে রেখে ছিল জামায়াত। পাবনার সব সাংস্কৃতিমনা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষদের বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাড়িটি দখলমুক্ত করা হয়। তবে এ বিষয়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসকও সহযোগিতা করেছেন। ’

‘পাবনায় দেশের বরেণ্য চলচ্চিত্রের ব্যক্তিদের নিয়ে এসে আমরা উৎসব করেছি। কিন্তু উৎসবের আমেজ আজ তেমন নেই। আমরা এখনো সুচিত্রা সেনকে স্মরণ করছি। ’ 

প্রতি বছর চলচ্চিত্র উৎসব হোক। সুচিত্রার সেনের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি চলচ্চিত্র প্রশিক্ষণশালা করার দাবিও জানান ফারুক হোসেন চৌধুরী।

সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি কমরেড জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পাবনার সংস্কৃতি কর্মীরা বাড়ি দখলমুক্ত করতে নানান ভূমিকা রেখেছে। সাংবাদিকদের লেখনীর মাধ্যমে ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। চেয়েছিলাম এখানে চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হোক, যাতে সারা দেশ থেকে চলচ্চিত্র প্রশিক্ষণ নিতে শিক্ষার্থীরা পাবনায় আসে।  

পাবনা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. জসিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘বেশি দিন হয়নি আমি পাবনায় এসেছি। পাবনা একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা। অনেক জ্ঞানীগুণী কবি, সাহিত্যিক, চলচ্চিত্রকার, গায়কের জন্মস্থান পাবনা। তাদের মধ্যে অন্যতম সুচিত্রা সেন। এ জেলায় আসার পরে প্রথমে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িটি সংস্কার করি। সম্প্রতি বাড়িটিতে দর্শনার্থীদের দেখার জন্য ভিডিও প্রজেকশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সুচিত্রা সেনের বাড়িতে একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। সরকারিভাবে মন্ত্রণালয়ে উন্নয়নের প্লান দেওয়া হয়েছে। ’

আশা করছি শিগগিরই মহানায়িকার বাড়িটির সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য একটি সুপার প্লান করা হবে। সরকারি অনুদান আসার সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়নে কাজ শুরু করা হবে বলেও জানান তিনি।

সুচিত্রা সেনের জন্ম ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনার গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনে। সুচিত্রার শৈশব কৈশর কেটেছে পাবনাতে। বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন পাবনা পৌরসভার সেনেটারি ইন্সপেকটর ও মা ইন্দ্রিরা দাশ গুপ্ত ছিলেন গৃহিনী। বাবা-মায়ের পঞ্চম সন্তান ছিলেন সুচিত্রা সেন। ১৯৪৭ সালে কলকাতার বিশিষ্ট বাঙালি শিল্পপতি আদিনাথ সেনের ছেলে দীবানাথ সেনের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। তাদের ঘরে একমাত্র সন্তান মুনমুন সেন।

সুচিত্রার ডাক নাম ছিল রমা সেন। পাবনার মহাখালি পাঠশালায় প্রাইমারি পাঠ চুকিয়ে তিনি ভর্তি হন পাবনা গার্লস স্কুলে। এখানে দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন তিনি। ১৯৬০ সালে তার বাবাও তাদের বসতভিটাটি রেখে সপরিবারে পারি জমান কলকাতায়। মৃত্যুর আগে দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর আড়ালে ছিলেন চলচ্চিত্রে ইতিহাস সৃষ্টি করে যাওয়া এ নায়িকা।  

১৯৮২ সালের কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এবং ১৯৮৯-এ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভরত মহারাজের মৃত্যুর পর সর্বশেষ তাকে জনসমক্ষে দেখা গিয়েছিল। সুচিত্রা সেনের অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে অনেকেই চলচ্চিত্রে ঝুঁকেছেন। তার বাচনভঙ্গি ও অভিনয় শৈলী অনুকরণ-অনুসরণ করে ‘নায়িকা’ হবার চেষ্টা করেছেন।  

দীর্ঘ ২৫ দিন লড়াই করে ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি মৃত্যুর কাছে হার মানেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতার বেলভিউতে বেসরকারি একটি হাসপাতাল শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালীন তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। ১৯৫২ সালে শেষ কোথায় ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে তার যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু ছবিটি মুক্তি পায়নি। এরপর ১৯৫৩ সালে মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে সাড়ে চুয়াত্তর ছবি করে তিনি চলচ্চিত্র অঙ্গনে সাড়া ফেলে দেন।

সুচিত্রা সেন বাংলা ও হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন। তার অভিনীত প্রথম হিন্দি ছবি দেবদাস (১৯৫৫) ও ১৯৭৮ সালে প্রণয় পাশা তা শেষ ছবি।

মহানায়িকা পঞ্চম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে পাবনা জেলা প্রশাসক, সুচিত্রাসেন চলচ্চিত্র সংসদ, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ ও নাট্য সংগঠন পাবনা ড্রামা সার্কেলসহ স্থানীয় সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৯
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।