তাই রাজশাহীসহ গোটা উত্তরাঞ্চলে আবারও বেড়েছে শীতের তীব্রতা। হিমালয় ছুঁয়ে আসা কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস কাঁপিয়ে তুলছে উত্তর জনপদের ছিন্নমূল মানুষদের।
শীতবস্ত্রের অভাবে পথের ধারের ছিন্নমূল মানুষগুলো এখন দুর্বিষহ দিন পার করছেন। রৌদ্রোজ্জ্বল দিন শেষে প্রতিটি রাতই ভয়াবহ হয়ে উঠছে তাদের কাছে। এক টুকরো কম্বলের মধ্যে কোনোরকমে গুটিশুটি মের রাত কাটাচ্ছেন। শীতের তীব্রতায় অনেকের হাড় হিম হয়ে যাচ্ছে।
অতিরিক্ত ঠাণ্ডার কারণে উত্তরাঞ্চলের অন্যতম চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিকে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। এদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যাই বেশি। আক্রান্তদের বেশিরভাগই কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, অ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন।
বেশ কয়েক দিন থেকে রাত ও দিনের তাপমাত্রা ওঠা-নামা করছে। রাতে কমে আসছে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধানও। এর মধ্যে গত ১০ জানুয়ারি থেকে রাজশাহীতে তাপমাত্রার পারদ নিম্মমুখী। মাঝখানে ১২ ও ১৩ জানুয়ারি কেবল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ এর ঘরে ছিল। এছাড়া বাকিটা সময় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ এর নিচে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান, ১০ জানুয়ারি থেকে রাজশাহীতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল। তবে তাপমাত্রা কমে আসায় আবারও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বুধবার (১৬ জানুয়ারি) রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বুধবার রাজশাহীতেই। এর আগে গত ২৯ ডিসেম্বর রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ফলে রাজশাহীর ওপর দিয়ে টানা শৈত্যপ্রবাহ চলছে। কখনও মৃদু কখনও মাঝারি কখনও আবার তীব্রতর হচ্ছে চলমান এই শৈত্যপ্রবাহ।
জানতে চাইলে রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত আবহাওয়া কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, রাতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে আসায় বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসের বলা হয়েছে আগামী সপ্তাহে রাজশাহীসহ দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের ওপর আরও একটি মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আর রাজশাহীর ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সময় এই অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্তও নেমে আসতে পরে। এর পর থেকে অবস্থার উন্নতি হবে। দিনের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করবে। এতে চলমান শৈত্যপ্রবাহ কেটে যাবে বলেও জানান রাজশাহীর এই আবহাওয়া কর্মকর্তা।
এদিকে, তীব্র শীত মোকাবেলায় নিম্ন আয়ের মানুষগুলো ভিড় জমাচ্ছেন মহানগরীর পুরাতন কাপড়ের মার্কেটে। কম দামে শীতবস্ত্র নিচ্ছেন নিজের ও পরিবারের অন্যদের জন্য। তবে সেখানেও স্বস্তি নেই। এবার শীতের কাপড়ের দাম অনেক বেশি বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা।
তবে মহানগরীর গণকপাড়া কাপড়পট্টির ফুটপাত ব্যবসায়ী জয়নাল হোসেন বলেন, গতবারের তুলনায় এবার বেচা-বিক্রিতে তেমন সুবিধা না হচ্ছে না। পুরনো কাপড়ের সরবরাহ কম থাকায় এবার দাম কিছুটা বেশি। এতে ক্রেতা কম, বেচাকেনা জমে উঠছে না বলেও দাবি করেন জয়নাল।
জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক এস.এম. আব্দুল কাদের বলেন, সংসদ নির্বাচনের পর থেকে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ চলছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষে তিনি নিজে প্রায় দিনই শীতার্ত মানুষদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করছেন।
এছাড়াও রাজশাহীর ৯ উপজেলার জন্য ৩৭ হাজার ৮০০ কম্বল পাঠানো হয়েছে। মহানগর এলাকার জন্য দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার কম্বল। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে এগুলো বিতরণ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৯
এসএস/এমজেএফ