বুধবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টা ২০ মিনিটের দিকে সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক রেজাউল করিম চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় দেন।
রায়ে ৩০২/৩৪ ধারায় ও নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে সংশোধিত ২০০৩ সালের ৮ এর ৩০ ধারায় আসামিদের মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাতিরকান্দি গ্রামের সালেহ আহমদ (পলাতক), একই গ্রামের রফিক, জায়েদ ও উপজেলা ব্রাহ্মণজুলিয়া গ্রামের সু্য়েবুর রহমান সুজন।
প্রায় ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট মামলাটির নথি ও পর্যবেক্ষণ পড়ে শোনান বিচারক। মামলার পর্যবেক্ষণে বলা হয়, আসামিরা একে অপরের যোগসাজশে শিশু মোস্তাফিজুর রহমান ইমনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা পেলেও শিশুটি আসামিদের চিনে ফেলায় তাকে বিষ প্রয়োগের পর গলাকেটে হত্যা করা হয়। মরদেহ গুম করতে মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে মাটিচাপা দেওয়া হয়। আসামির জবানবন্দি ও আদালতে সাক্ষিদের সাক্ষ্য প্রমাণে অপরাধ সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় চার আসামির প্রত্যেককে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া পলাতক আসামির বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট তামিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরআগে গত সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের দিন ধার্য করেন বিচারক। শিশু ইমন হত্যা মামলায় গত ২৪ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক শুরু হয়। দ্রুত সময়ে রায়ের তারিখ ঘোষণা করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী প্রবাস ফেরত জহুর আলী।
আলোচিত এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন, বর্তমানে হবিগঞ্জের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতের বিচারক মোহাম্মদ শহীদুল আমিন ও সুনামগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্যাম কান্ত সিনহা, চিকিৎসক, তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নিহতের মা-বাবাসহ ২৩ জন।
ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের বাতিরকান্দি গ্রামের সৌদি প্রবাসী জহুর আলীর ছেলে ও লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কারখানার কমিউনিটি বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণীর ছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান ইমনকে ২০১৫ সালের ২৭ মার্চ অপহরণ করা হয়। মুক্তিপণের টাকা পাওয়ার পরও অপহরণকারীরা শিশু ইমনকে হত্যা করে।
এরপর ৮ এপ্রিল মোবাইল ট্যাকিংয়ের মাধ্যমে সিলেটের কদমতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে শিশু ইমনের হত্যাকারী স্থানীয় মসজিদের ইমাম সুয়েবুর রহমান সুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি, বিষের বোতল ও রক্তমাখা কাপড় উদ্ধার করে। এমনকি বাতিরকান্দি হাওর থেকে ইমনের মাথার খুলি ও হাতের হাড় উদ্ধার করে এবং জড়িতদের গ্রেফতার পুলিশ।
অপহরণ ও মামলা দায়েরের প্রায় সাড়ে ৭ মাস পর ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর ৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
অভিযুক্তদের মধ্যে ৩ জনকে আদালতে অভিযোগ গঠনের সময় বাদ দেওয়া হয়। অপর চার আসামির মধ্যে বাতিরকান্দি গ্রামের সালেহ আহমদ ছাড়া একই গ্রামের রফিক,জায়েদ ও উপজেলা ব্রাহ্মণজুলিয়া গ্রামের সুজন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। রায় ঘোষণার সময় সালেহ আহমদ (পলাতক) ছাড়া অন্য আসামিরা উপস্থিত ছিলেন।
অ্যাডভোকেট কিশোর কুমার কর বলেন, ইমন হত্যা মামলা একটি চাঞ্চল্যকর মামলা। লোমহর্ষক এ হত্যার বিষয়ে আমরা আদালতে আসামিদের অপরাধ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আদালতও ন্যায় বিচার করেছেন।
আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে মামলার বাদী শিশু ইমনের বাবা জহুর আলী সাংবাদিকদের বলেন, এ রায় থেকে এটাই শান্তনা যে, আর কোনো মায়ের বুক যেনো এভাবে খালি না হয়, কোনো বাবা যেনো সন্তানের হত্যার বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে না হয়। আসামিদের ফাঁসি দ্রুত কার্যকর করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শমিউল আলম বলেন, শিশু ইমন হত্যার ন্যায় বিচার হয়েছে। আমরা আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৯
এনইউ/এসএইচ