বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স লিমিটেডের সঙ্গে সিন্ডিকেট মেয়াদী ঋণের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আহমেদ আকবর সোবহান এসব কথা বলেন।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ব্যবসায়ীরা এখন সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণের সুদ নামিয়ে আনার কথা বলছেন।
ব্যাংকারদের উদ্দেশে আহমেদ আকবর সোবহান আরও বলেন, আপনারা যাচাই-বাছাই করে ঋণ দেন। ঋণ দেওয়ার পরে যেন তাদের পেছনে ঘুরতে না হয়। কোনো ঋণখেলাপি হলে তার দায়ভার যেন আমাদের ওপর না আসে। আমাদের মিডিয়ায় মাঝে মাঝে ব্যাংকারদের সতর্ক করি, খেলাপি ঋণ সম্পর্কে বলি। ভালো গ্রহিতাদের ঋণ দিতে বলি।
কোনো ঋণ যখন খেলাপি হয় তার দায় তখন আমাদের ঘাড়েও আসে। বসুন্ধরা গ্রুপ যাত্রা শুরুর পর থেকে আজ পর্যন্ত খেলাপি হয়নি। মাঝে মাঝে সমস্যা হলে সাউথ ইস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, উত্তরা ফিন্যান্স, জনতা, অগ্রণীসহ প্রত্যেকটি ব্যাংক আমাদের সহযোগিতা করেছে।
আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ শুধু নিজেদের উন্নতি করেনি। দেশের যারা কৃষক ছিলেন তারা আজ কোটি কোটি টাকার মালিক। এটাই আমাদের অবদান ও গর্বের বিষয়। দেশে এখন ৪ কোটি টন সিমেন্টের চাহিদা রয়েছে। দেশে যত বড় অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ হচ্ছে, সবগুলোতেই বসুন্ধরা সিমেন্ট ব্যবহার হয়েছে, হচ্ছে।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ১৯৯৭ সালে মেঘনা সিমেন্ট মিলের দায়িত্বে যিনি ছিলেন, আমি তাকে বলেছিলাম কোয়ালিটিতে কোনোদিন আপস করবেন না। আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে তিনি আজও আমার সেই কথা রেখেছেন। তিনি কারও কথা না শুনে কোয়ালিটির ব্যাপারে অবিচল। বসুন্ধরা সিমেন্টের যে স্ট্রেংথ, বাজারের কোনো সিমেন্টেরই তার ৭৫ শতাংশ স্ট্রেংথ নেই। সেই দিক থেকে আমরা শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ রেখেছি। ইনশাল্লাহ আগামী দিনেও দেশে যত অবকাঠামোর কাজ হবে আমাদের সিমেন্ট ব্যবহার হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন ব্যাংকের এমডিদের উদ্দেশে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের সব সাফল্যের মূলে এই ব্যাংকাররা। তাদের কাছে আমাদের আস্থা প্রমাণ করতে পেরেছি। আশা করি আমার পরবর্তী প্রজন্মও ব্যাংকারদের সেই আস্থা ধরে রেখে এগিয়ে যাবে। বসুন্ধরা গ্রুপ শুধু নিজের নয়, দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
আহমেদ আকবর সোবহান কক্সবাজারে দু'টি থিম পার্ক করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেন, ব্যাংককে ৫৫ বিলিয়ন ডলার আয় হয় শুধু পর্যটন থেকে। যেখানে আমাদের দেশে ১ বিলিয়ন ডলারও আয় হয় না। পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা সব ধরনের চেষ্টা করবো।
তুরস্কে ১ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি শপিং মলের উদাহরণ টেনে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, সপ্তাহে ৩০ লাখ পর্যটক সেখানে শপিং ও বিনোদনের জন্য যায়। এ ধরনের একটি শপিং মল আমাদের দেশে প্রয়োজন। আমাদের দেশেও পর্যটন থেকে ৫-১০ বিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব। এজন্য সরকার ও ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসতে হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কক্সবাজারে বেশ কিছু জায়গা কিনেছি। পূর্বাচলে আমাদের এক হাজার বিঘার বেশি আকারের একটি প্লট আছে। সেখানে আমরা নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারি।
অনুষ্ঠানে ব্যাংক এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী বলেন, বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স লিমিটেডের সিমেন্ট প্লান্ট সম্প্রসারণ কাজে অর্থায়ন করতে পেরে আমরা গর্বিত। এই প্রকল্পে অর্থায়নে ব্যাংক এশিয়া লিড অ্যারেঞ্জার এবং প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে। প্রকল্পের সম্প্রসারণ কাজ শেষ হলে উৎপাদন ক্ষমতা ২ দশমিক ১ মিলিয়ন থেকে ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টনে উন্নীত হবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান, বসুন্ধরা গ্রুপের ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের সংবাদ প্রতিষ্ঠান ডেইলি সান সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরী, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের সম্পাদক জুয়েল মাজহার, নিউজটোয়েন্টিফোর টেলিভিশনের নির্বাহী পরিচালক হাসনাইন খোরশেদ, জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস ছালাম আজাদ, পূবালী ব্যাংকের এমডি এম এ হালিম চৌধুরী, এনআরবি ব্যাংকের ডিএমডি খোরশেদ আলম, উত্তরা ফিন্যান্সের এমডি শামসুল আরেফিন প্রমুখ।
নারায়ণগঞ্জে বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স’র সিমেন্ট প্লান বর্ধিতকরণ প্রকল্পে চারটি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ২৮৫ কোটি টাকা অর্থায়ন করবে। এর মধ্যে জনতা ব্যাংক ৯৫ কোটি টাকা, ব্যাংক এশিয়া ৫০ কোটি টাকা, পূবালী ব্যাংক ৬০ কোটি টাকা, এনআরবি ব্যাংক ৩০ কোটি টাকা এবং উত্তরা ফিন্যান্স দেবে ৫০ কোটি টাকা।
অনুষ্ঠানে এ সংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং অর্থায়নকারী ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা। এই প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে আনুমানিক ৪৪৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৯
এসই/আরএ