ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

২ বছরে খুঁজে পায়নি পুলিশ, আসামি ধরলো পিবিআই

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৯
২ বছরে খুঁজে পায়নি পুলিশ, আসামি ধরলো পিবিআই পিবিআই’র হাতে গ্রেফতার দুই আসামি

ঢাকা: খুনের দুই বছর পর অপরাধ প্রমাণিত হলেও আসামিকে খুঁজে পায়নি বলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। পরে ভুক্তভোগী পরিবারের অসন্তুষ্টিতে আদালতের নির্দেশে খুনের তদন্ত ভার পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। দায়িত্ব পাওয়ার প্রায় এক বছরের মধ্যেই মামলার রহস্য উদঘাটনসহ দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের বিশেষায়িত সংস্থাটি।

২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর রাজধানীর কদমতলী এলাকায় রাসেল (২২) নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এর প্রায় তিনবছর পর পিবিআই'র জালে ধরা পড়লো প্রধান আসামি সজল ওরফে পিচ্চি সজল (২২) ও মো. হোসেন বাবু ওরফে হুন্ডা বাবু (২৫)।

গ্রেফতার সজল বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের আমতলী এলাকার কামাল হোসেনের ছেলে ও হুন্ডা বাবু ডিএমপির শ্যামপুর থানাধীন ফরিদাবাদ এলাকার হাজিগেট ব্যাংক কলোনির মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে।

পিবিআই সূত্রে জানা যায়, রাসেল তার গ্রামের বাড়ি খুলনার রূপসা এলাকায় কৃষি কাজ করতো। ২০১৫ সালের গত ২৭ সেপ্টেম্বর তার মায়ের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে চাকরির সন্ধানে ঢাকায় আসে।  

খবর পেয়ে ঢাকায় এসে রাসেলের মা রাশিলা বেগম জানতে পারেন, ২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর কদমতলী থানাধীন বড়ইতলা মোড়ে অজ্ঞাত পরিচয় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে মারা গেছে তার ছেলে। এ ঘটনায় রাশিলা বেগম বাদী হয়ে কদমতলী থানায় একটি মামলা (নং-১৯) দায়ের করেন।

কদমতলী থানা পুলিশ দীর্ঘ তদন্ত শেষে ঘটনাটি পেনাল কোডের ৩০২/৩৪ ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হলেও কে বা কারা জড়িত তা উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে ২০১৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। তবে খুনের ঘটনার রহস্য উদঘাটিত না হওয়ায় চূড়ান্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে ভিকটিমের মা আদালতে না-রাজির আবেদন করেন। এরপর আদালতের আদেশে পিবিআই, ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) এসআই আল-আমিন শেখ মামলাটির তদন্ত শুরু করেন।

পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জানান, মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে ক্লু-লেস রাসেল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে ব্যাপক তদন্ত করেন এসআই আল আমিন। এর ধারাবাহিকতায় গত ৯ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ থানার আমতলী এলাকা থেকে সজল ওরফে পিচ্চি সজলকে গ্রেফতার করে। তার দেওয়া তথ্যে ওইদিন রাতেই রাসেল হত্যায় জড়িত আরেক আসামি হোসেন বাবু ওরফে হুন্ডা বাবুকে শ্যামপুরের হাজিগেট ব্যাংক কলোনি থেকে গ্রেফতার করা হয়।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, নিহত রাসেল ও সজল একই গ্রামে বিয়ে করেন। সেই সুবাদে উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। সজল বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামি হওয়ায় প্রায়ই রাসেলের বাসায় রাত্রিযাপন করতো। রাসেলকে ফ্যাক্টরিতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ঢাকায় নিয়ে আসে সজল। এরপর কথামতো চাকরি দিতে না পারায় তাদের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়।

সজলের পরিচিত পিংকি এবং পারভেজ কদমতলী ও শ্যামপুর এলাকার মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী। পিংকি ও পারভেজের মধ্যে এলাকার মাদক ব্যবসার প্রভাব বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল।

বিরোধের জেরে মাদক সম্রাজ্ঞী পিংকি পারভেজকে খুন করার জন্য বাবু ওরফে হুন্ডা বাবু ও পিচ্চি সজলকে ভাড়া করে। সে অনুযায়ী পারভেজকে খুন করার জন্য সুকৌশলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর রাতে পিচ্চি সজল, হুন্ডা বাবু, জুয়েল, আল-আমিন একত্রিত হয় কদমতলী থানাধীন বড়ইতলা মোড়ে।

মনোমালিন্যের শোধ নিতে সেখানে পিচ্চি সজল কৌশলে রাসেলকেও নিয়ে আসে। পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী ইয়াবা সেবন শেষে চাকু দিয়ে এলোপাথাড়িভাবে পারভেজ ও রাসেলকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় পিচ্চি সজল, হুন্ডা বাবু, জুয়েল, আল-আমিন। গুরুতর অবস্থায় পারভেজ ও রাসেল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে রাসেল মারা যায়।

আটক পিচ্চি সজল ও হুন্ডা বাবুর বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতি, হত্যা চেষ্টা ও অস্ত্রসহ একাধিক মামলা রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত অন্য সহযোগী আসামিদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৯
পিএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।