ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মাত্র একজন ছাত্রের ক্লাস নিলেন শিক্ষক! 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৯
মাত্র একজন ছাত্রের ক্লাস নিলেন শিক্ষক!  মাত্র একজন ছাত্রের ক্লাস নিলেন শিক্ষক! ছবি : বাংলানিউজ

সিরাজগঞ্জ: ছাত্র মাত্র একজন। তাকে  ইংরেজি বিষয়ে পাঠ দিচ্ছেন শিক্ষক ফজলুল করিম। এ দুইজন ছাড়া শ্রেণিকক্ষ পুরোটাই ফাঁকা! দৃশ্যটি অভাবনীয় হলেও সত্যি।

সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার মীরের দেউলমুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণী কক্ষে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। পাশেই তৃতীয় শ্রেণীর কক্ষে শিক্ষার্থী ছিল ৫ জন।

সেখানে ক্লাস নিচ্ছিলেন নার্গিস খাতুন নামে এক শিক্ষিকা।

ক্লাসে মাত্র একজন ছাত্র কেন? অন্য শিক্ষার্থীরা কোথায়? এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রেণী শিক্ষক ফজলুল করিম বলেন, এ ক্লাসে শিক্ষার্থী মোট ১৪ জন। সাত-আট জন করে প্রতিদিনই ক্লাসে উপস্থিত হয়। গতকাল ছুটি থাকায় আজ সবাই উপস্থিত হয়নি। তবে শুধু একজন ছাত্র এসেছে। তারপরও ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।

ক্লাসে উপস্থিত একমাত্র ছাত্র মোহাম্মদ আলী জানায়, ক্লাসে ৪/৫ জনের বেশি ছাত্র আসে না। মাঝে মধ্যে দু-একটা ক্লাসও হয় না।

এদিকে বিদ্যালয় অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্কুলটির ৫টি শ্রেণিতে মোট ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ৮৩ জন। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে ১৭, ২য় শ্রেণিতে ১৬, তৃতীয় শ্রেণিতে ১৫, চতুর্থ শ্রেণিতে  ১৪ ও  ৫ম শ্রেণিতে ১০ জন। এছাড়াও চলতি বছর শিশু শ্রেণিতে মাত্র ১১ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। মোট ৮৩ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ৫ জন শিক্ষক রয়েছেন। এরপরও শিক্ষার্থীদের ফলাফল আশানুরূপ নয়। গত বছর পিইসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া ১৪ জন ছাত্রের সবাই পাশ করলেও জিপিএ-৫ পায়নি কেউই।

এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষক নার্গিস খাতুন ও মজলেকা খাতুন বলেন, কয়েক বছর আগে এই স্কুলের ছাত্ররা বৃত্তি পেয়েছে। কিন্তু গত ৩/৪ বছর ধরে রেজাল্ট ভালো হচ্ছে না।

অন্য দিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিদ্যালয়টিতে পড়াশোনার মান ভালো নয়। এ কারণে অভিভাবকরা তাদের বাচ্চাদের নিজ গ্রামের স্কুল বাদ দিয়ে পাশের গ্রামের স্কুলে পাঠান। এ কারণে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক কম।

সোহেল রানা নামে এক কলেজ ছাত্র জানান, আমি এক সময় এই স্কুলে পড়তাম। তখন পড়াশোনার মান ছিল ভাল। ছাত্র-ছাত্রী দিয়ে এই প্রতিষ্ঠান মুখরিত ছিল। আগের শিক্ষকরা বদলি হয়ে যাওয়ার পর এখানে পড়াশোনার মান নষ্ট হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুস ছালামের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।  

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক মো. ইউসুফ রেজা বলেন, বিধি মোতাবেক একটি স্কুলে সর্বনিম্ন ১৫০ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা। একজন ছাত্রকে পড়াচ্ছেন একজন শিক্ষক—এটা অবিশ্বাস্য। এমন ঘটনা হলে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।