ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এটা আমার তৃতীয় মেয়াদ৷ এর আগেও প্রধানমন্ত্রী হয়েছি (১৯৯৬-২০০১)। সব মিলিয়ে চতুর্থবার।
বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ডয়চে ভেলের প্রধান সম্পাদক ইনেস পোল ও এশিয়া বিভাগের প্রধান দেবারতি গুহ৷
গত নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের পর টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। এর আগে ১৯৯৬ সালেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে তার রাজনৈতিক জীবন ছাড়াও গত এক দশকে সরকারের উন্নয়নচিত্র, রোহিঙ্গা সঙ্কট, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা তার সম্ভাব্য শেষ মেয়াদে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইকেই অগ্রাধিকার দিতে চান। তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান- এসব মৌলিক চাহিদা। প্রত্যেক মানুষই তার অবস্থার উন্নতি ঘটাতে চায়। আমাদের সেটাই নিশ্চিত করতে হবে৷
নারীর বিকাশে চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখেননি দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত নারী শিক্ষা পুরোপুরি অবৈতনিক করে দিয়েছি৷ তাদের বৃত্তিও দিচ্ছি।
তিনি বলেন, আগে বাবা-মায়েরা চিন্তা করতেন যে, মেয়েকে পড়িয়ে লাভ কী, সে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে৷ এখন সেভাবে চিন্তা করেন না তারা৷ এখন ভাবেন যে, মেয়েকে শিক্ষিত করা উচিত যেন সে নিজে উপার্জন করতে পারে৷ এরপর সে বিয়ে করবে৷ খুব ধীরে ধীরে আমরা পরিবর্তন আনছি৷ বাল্যবিবাহ এখন অনেক কমে গেছে৷
যে লক্ষ্য অর্জনে শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন, তাতে কি হেফাজতের মতো মৌলবাদীরা বাধা হবে কি-না? ডয়চে ভেলের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অবশ্যই না৷ আমি যা করেছি, তা করেছি এবং এটা চলবে।
রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকার হাজার হাজার শিশু-কিশোর-তরুণ; যারা বেড়ে উঠছে, তাদের জন্য মধ্যবর্তী বিকল্প উপায় ভাবার চেষ্টা করছে? এর উত্তরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা একটা দ্বীপ বেছে নিয়েছি, সেখানে আমরা বাঁধ দিয়েছি৷ সাইক্লোন শেল্টার ও ঘরবাড়ি তৈরি করেছি৷ আমরা তাদের সেখানে নিয়ে যেতে চাই এবং কাজ দিতে চাই৷ তাহলে তরুণ ও নারীরা অর্থ উপার্জন করতে পারবে৷
তবে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত যাওয়াকে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান বলে মনে করেন শেখ হাসিনা৷ তার মতে, মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই এই দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে যেতে চায় বাংলাদেশ৷ এক্ষেত্রে ভারত ও চীনের সহযোগিতা প্রয়োজন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নও ভূমিকা রাখতে পারে৷
‘আমরা কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে ঝগড়া করতে চাই না৷ আমাদের সঙ্গে একটা চুক্তিও হয়েছে যে, তারা ফেরত নিয়ে যাবে৷ চীন ও ভারতের সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি এবং মিয়ানমারের সঙ্গে যে পাঁচটি দেশের বর্ডার আছে, চীন, বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ড ও লাওস, আমরা সকলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছি যে, কীভাবে এই সমস্যা সমাধানে তাদের কাজ করা উচিত। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এটাই চাই যে, তারা (প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো) মিয়ানমারকে এ কথাটি বুঝাক যে, এরা যখন মিয়ানমারে চলে যাবে, তখন তাদের যা যা সাহায্য দরকার, থাকার বাড়িঘর, তাদের খাওয়ার ব্যবস্থা, এখানে যা যা দিচ্ছে, তা ওখানেই দেবে এবং তাদের একটা নিরাপত্তার ব্যবস্থাও তারা করবে৷ জাতিসংঘ এ ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে৷’
বাংলাদেশ সময়: ০৩২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৯
এমএ/