ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চৌহালী-এনায়েতপুর নৌ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৯
চৌহালী-এনায়েতপুর নৌ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অন্য পথে যাতায়াত করছে নৌকার মাঝিরা। ছবি: বাংলানিউজ

সিরাজগঞ্জ: যমুনা নদীর বুকে বিশাল চর জেগে ওঠায় সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর-চৌহালী নৌ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন এ অঞ্চলের অর্ধলক্ষাধিক নৌযাত্রী। 

সড়কপথে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে টাঙ্গাইল কিংবা নৌপথে পাবনার বেড়া হয়ে চৌহালী উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে হচ্ছে চরাঞ্চলের মানুষগুলোকে। ফলে সময়ের পাশাপাশি চারগুণ বেশি টাকা গুণতে হচ্ছে তাদের।

এদিকে এনায়েতপুর-চৌহালীর মানুষের যাতায়াতের একমাত্র এ নৌ-রুটটি সচল রাখতে দ্রুত নদী খননের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।  

বসন্তপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফ উদ্দিন ইয়াহিয়া, ইলেকট্রিক ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন, কৃষক আফছার আলী, নৌকার মাঝি মামুন ও স্বপনসহ স্থানীয়রা জানান, নভেম্বর মাস থেকে ক্রমান্বয়ে যমুনা নদীর পানি প্রবাহ কমতে শুরু করে। ধীরে ধীরে যমুনার মাঝখানে বেশ কয়েকটি বড় বড় চর জেগে ওঠে। এখন পানির গভীরতা সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। নদীতে জেগে উঠেছে অসংখ্য ছোট-বড় চর ও ডুবোচর।  

অপরদিকে সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের খাষ ইজারাপাড়া থেকে রানজানপুর পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিশাল চর জেগে উঠেছে। এ চরের কারণে এক দেড়মাস আগে থেকেই নৌ চলাচলে বিঘ্ন শুরু হয়। নৌ-চলাচল স্বাভাবিক রাখতে দু’সপ্তাহ আগে নৌকার মাঝিরা নিজ উদ্যোগে চাঁদা উঠিয়ে চর কেটে একটি অগভীর সরু চ্যানেল তৈরির চেষ্টা করে। কিন্তু বর্তমানে সেটাও বন্ধ  হয়ে যায়।

চৌহালী উপজেলার ঘোড়জান ইউপি চেয়ারম্যান রমজান আলী, স্থল ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও সদিয়া চাঁদপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম সিরাজ বাংলানিউজকে বলেন, এনায়েতপুর থেকে সদিয়া চাঁদপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে ১৫ কিলোমিটার দুরত্বের এ নৌরুটে যেতে সময় লাগতো মাত্র এক ঘণ্টা। কিন্ত যমুনায় চর জেগে ওঠায় চৌহালী উপজেলা সদর থেকে জেলা সদরে যাতায়াতের প্রধান নৌরুটটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বিকল্প পথে চলাচল করতে হচ্ছে যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযানগুলোকে।  

অন্য পথে যাতায়াত করছে নৌকার মাঝিরা।  ছবি: বাংলানিউজবিকল্প পথে এনায়েতপুর বেড়িবাঁধ ঘাট থেকে উত্তরদিকে প্রায় ৪০/৪৫ কিলোমিটার ঘুরে বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশ দিয়ে অথবা ৩০ কিলোমিটার ঘুরে পাবনার বেড়া উপজেলা হয়ে চৌহালীতে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে সময় ও টাকা দু’টোরই অপচয়ের পাশাপাশি যাত্রী ও নৌকার মাঝি-মাল্লাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।  

অনেকেই চৌহালী থেকে নাগরপুর ও টাঙ্গাইল হয়ে সিরাজগঞ্জ কিংবা এনায়েতপুরে যাতায়াত করছেন। এতে ২ ঘণ্টার রাস্তায় সময় ব্যয় হচ্ছে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা। অপরদিকে ৫/৭ গুণ বেশি ভাড়াও গুণতে হচ্ছে যাত্রীদের।  

এনায়েতপুর বেড়িবাঁধ খেয়াঘাটের ইজারাদার ইউসুফ আলী বেপারি বাংলানিউজকে জানান, যমুনা নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন চৌহালী উপজেলা সদরের সঙ্গে জেলা ও এনায়েতপুর থানার যোগাযোগের অন্যতম রুট ছিল এটি।  

অবিলম্বে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নৌ-রুটটি সচল করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে অর্ধশতাধিক মানুষ নৌকার মাঝি হিসেবে কর্মরত আছেন। নাব্যতা সংকটের কারণে অনেক মাঝি নৌকা চালাতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যাত্রী ও মাঝিদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে অবিলম্বে নদী খনন করে একটি চ্যানেল তৈরির দাবি জানান তিনি।  

চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু তাহের বাংলানিউজকে বলেন, যমুনার নাব্যতা সংকটের কারণে নৌ-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।