ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দাফনের জন্য বাড়ি নেয়ার পথে নড়ে উঠলেন আশাদুজ্জামান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯
দাফনের জন্য বাড়ি নেয়ার পথে নড়ে উঠলেন আশাদুজ্জামান

পঞ্চগড়: কথায় আছে ‘রাখে আল্লাহ মারে কে??’ সবার চোখে ‘মৃত’ হওয়ার পর যখন দাফনের জন্য বাড়ি নেওয়া হচ্ছিলো, তখন কেউ নড়ে উঠলে এই কথাটিই যেন পুনরুচ্চারিত হয় আবার। দেশের সর্ব উত্তরের প্রান্তিক জেলা পঞ্চগড়ের সীমান্ত উপজেলা তেঁতুলিয়ায় ‘মৃত’ ঘোষিত হওয়ার পর জীবন ফিরে পেয়েছেন আশাদুজ্জামান নামে এক গাড়িচালক।

তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের মাগুড়মারি গ্রামের মৃত মশির উদ্দীনের ছেলে আশাদুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরে হার্টের রোগে ভুগছিলেন। তিন সন্তানের এ জনক দীর্ঘদিন ঢাকায় গাড়ি চালিয়ে পরে গ্রামের বাড়ি এসে দিনমজুরের কাজ শুরু করেন।

কয়েকদিন ধরে আশাদুজ্জামান উপজেলার বিভিন্ন বাজার থেকে তার চিকিৎসার জন্য অর্থ সাহায্য তোলেন। বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) তেঁতুলিয়ার ভজনপুর বাজারে সাহায্য চাইতে গেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে তিনি। পরদিন শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে চিকিৎসার জন্য রংপুরের উদ্দেশ্যে নিয়ে যায় তার পরিবার।  পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার অবস্থা গুরুতর দেখে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দিয়ে ওষুধ লিখে দেন চিকিৎসকরা।

কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা করানো নিয়ে দিশাহীন হয়ে পড়েন স্বজনরা। কিছুক্ষণ পর রোগীর অবস্থার অবনতি হলে স্বজনদের অনেকে প্রায় তার ‘আশা’ ছেড়ে দেন। তারপরও ঝামেলার আশঙ্কা ও ময়না-তদন্তের ভয়ে রমেক হাসপাতালে ভর্তি না করে রাস্তার পাশে এক চিকিৎসককে দেখান তারা। তখন ওই চিকিৎসক আশাদুজ্জামানকে ‘মৃত’ ঘোষণা করলে ‘দাফন’র জন্য মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন স্বজনরা।

এ পেয়ে মাটি দেওয়ার জন্য গ্রামের বাড়িতে কাফনের কাপড় কেনা হয় এবং কবর খোঁড়া শুরু হয়। আশাদুজ্জামানকে শেষবারের মতো দেখতে তার বাড়িতে আসতে থাকেন প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনরা।  

কিন্তু গাড়িতে করে রংপুর থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় পঞ্চগড় সদর উপজেলার জগদল বাজারের কাছাকাছি এলে হঠাৎ নড়ে ওঠেন আশাদুজ্জামান। পরে সবাই বুঝতে পারেন তিনি বেঁচে আছেন।

এরপর আশাদুজ্জামানকে জীবিত অবস্থায় বাড়ি নিয়ে এলে প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনরাও চমকে ওঠেন। এ খবর ছড়িয়ে যায় পুরো গ্রাম ছাড়িয়ে ইউনিয়ন-উপজেলায়।

যোগাযোগ করা হলে দেবনগড় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাটি শুনে অবাক হয়েছি। হতদরিদ্র পরিবারটি টাকার অভাবে আশাদুজ্জামানের চিকিৎসা না করাতে পেরে বিপাকে পড়েছিল। বর্তমানে অসুস্থ আশাদুজ্জামান ওই বাড়িতেই রয়েছেন।

এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তারুল হক মুকু বাংলানিউজকে বলেন, পঞ্চগড়ে এমন ঘটনা আগে শুনিনি। ঘটনাটি শোনার পর আমিও অবাক হয়ে যাই। সরকারিভাবে সাহায্য পেলে ওই ব্যক্তি পুরোপুরিভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৯
জিপি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।