ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৭ শর্ত মেনে আত্মসমর্পণ করেন ইয়াবা কারবারিরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯
৭ শর্ত মেনে আত্মসমর্পণ করেন ইয়াবা কারবারিরা আত্মসমর্পণ করছেন ইয়াবা কারবারিরা

কক্সবাজার: ইয়াবা কারবারিদের কী শর্তে আত্মসমর্পণ করানো হচ্ছে, তাদের সাধারণ ক্ষমা দেওয়া হচ্ছে নাকি আত্মসমর্পণের নামে কৌশলে তারা পার পেয়ে যাচ্ছেন— এসব প্রশ্ন শোনা গেলেও মূলত ৭টি শর্তে চিহ্নিত ইয়াবা কারবারি, পৃষ্ঠপোষক ও গডফাদাররা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।

আত্মসমর্পণের ৭ শর্ত—
১. আত্মসমর্পণকারী মাদক কারবারিরা এই ঘৃণ্য পেশা ত্যাগ করে সমাজে সুন্দর ও পরিচ্ছন্নভাবে বসবাসের লক্ষ্যে ভবিষ্যতে মাদক সংক্রান্ত কোনো অপরাধে আর জড়িত হবেন না।
২. সমাজে ফিরে গিয়ে এলাকাকে মাদকমুক্ত রাখার জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করবেন।

 
৩. যেসব মাদক কারবারি এখনো ব্যবসা অব্যাহত রেখেছেন এবং ব্যবসায় সক্রিয় আছেন তাদের তথ্য কক্সবাজার জেলা পুলিশের কাছে সরবরাহ করবেন। ৪. চতুর্থত আত্মসমর্পণের আগে তাদের বিরুদ্ধে যে সকল মামলা রুজু হয়েছে বা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন আছে এসব মামলাগুলো তারা নিজ দায়িত্বে আইনগতভাবে মোকাবেলা করবেন।  
৫. আত্মসমর্পণকারী মাদক কারবারিদের হেফাজতে যে সকল মাদকদ্রব্য, অবৈধ অস্ত্র রয়েছে অত্মসমর্পণের সময় এসব মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র পুলিশের কাছে হস্তান্তর করবেন।  
৬. আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ায় তাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা রুজু করা হবে সরকারি অনুমতি সাপেক্ষে সেসব মামলায় তাদের আইনগত সুবিধা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।  
৭. মাদক ব্যবসার মাধ্যমে নিজে/পরিবারের/আত্মীয় স্বজনের নামে ও বেনামে অর্জিত সকল স্থাবর/অস্থাবর সম্পত্তি যাচাইয়ের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সিআইডি (মানিলন্ডারিং শাখা), এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ঠ সরকারি সকল সংস্থার কাছে তাদের তথ্যাদি প্রেরণ করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট এসব সংস্থার মাধ্যমে তাদের অর্জিত সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি যাচাই সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মূলত এই সাতটি শর্তে স্বরাস্ট্রমন্ত্রীর হাত থেকে ফুল নিয়ে টেকনাফের চিহ্নিত ১০২ জন ইয়াবা কারবারি পৃষ্ঠপোষক, গডফাদাররা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। এ সময় সাড়ে তিন লাখ ইয়াবা, ৩০টি দেশীয় তৈরি বন্দুক এবং ৭০ রাউন্ড তাজা কাতুর্জও জমা দেন তারা।

আত্মসমর্পণকারী ১০২ ইয়াবা কারবারির মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির চার ভাই— আব্দুর শুক্কুর, আবদুল আমিন, মো. শফিক ও মো. ফয়সাল, বেয়াই সাহেদ কামাল, চাচাতো ভাই মো. আলম, ফুফাতো ভাই কামরুল ইসলাম, ভাগিনা সাহেদুর রহমান নিপু, খালাতো ভাই মং মং সিংসহ অন্তত দশজন নিকটাত্মীয় রয়েছেন।

আত্মসমর্পণকারী ১০২ ইয়াবা কারবারিকে শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) কারাগারে পাঠানো হয়। পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণের পর সন্ধ্যায় তাদের কক্সবাজার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (টেকনাফ) বিচারক দেলোয়ার হোসেনের আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।  

কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আত্মসমর্পণ করা এসব ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে পুরনো মামলা ছাড়াও নতুন করে অস্ত্র ও মাদক আইনে পৃথক দুটি মামলা রুজু করা হয়েছে।

পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও গোয়েন্দা সংস্থার তালিকা অনুযায়ী সারাদেশে তিন হাজারেরও বেশি চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। এদের মধ্যে কক্সবাজার জেলায় আছে ১ হাজার ১৫১ জন। এর মধ্যে ৭৩ জন প্রভাবশালী ইয়াবা কারবারিকে (গডফাদার) চিহ্নিত করা হয়েছে। যারা বেশিরভাগই টেকনাফের।  

এছাড়াও তালিকায় আব্দুর রহমান বদিসহ ৩৪ জন সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধি এবং বদির পাঁচ ভাই আবদুস শুক্কুর, আবদুল আমিন, মৌলভী মুজিবুর রহমান, মো. শফিক ও মো. ফয়সালসহ ২৬ জন নিকটাত্মীয়ের নাম রয়েছে।  

গত বছরের ৪ মে থেকে দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’  কক্সবাজার জেলায় ৫৪ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হন। এর মধ্যে টেকনাফে মারা গেছেন ৫০ জন। এরপরেও বন্ধ করা যায়নি ইয়াবা চোরাচালান।

বাংলাদেশ সময়: ০২৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।