সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ৯টার দিকে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা এসব মরদেহ দেখতে পান। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশকে বিষয়টি জানানো হলে তারা মরদেহগুলো উদ্ধারের পাশাপাশি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শুরু করেন।
রাত সাড়ে ১০টায় হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, রাত ৮টার দিকে বিষয়টি সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানায়। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতাল ক্যাম্পাসের পশ্চিম দিকে, যেখানে হাসপাতালের ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয় সেখানে বেশ কিছু অপরিণত শিশুর (ফিটাস) মরদেহ পড়ে রয়েছে।
তিনি জানান, এর পরপরই খোঁজ নিয়ে জানতে পারি এগুলো হাসপাতালের গাইনী বিভাগ থেকে ফেলা হয়েছে।
তিনি বলেন, হাসপাতালের ভবন সংলগ্ন ময়লার স্তুপের মধ্যে পাওয়া অপরিণত শিশু বা ফিটাসগুলো মূলত গাইনি বিভাগে সংরক্ষণ করে রাখা ছিলো। যা মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজে আসতো। এগুলো মেডিকেল কলেজেও হাসপাতালের মতো একইভাবে সংরক্ষিত থাকে।
দীর্ঘ ২০ থেকে ২৫ বছর আগে থেকে এগুলো সংরক্ষণ করায় এখন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে। ফলে ফিটাসগুলো বাতিল হিসেবে গণ্য হওয়ায় তা নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধিত করা উচিত ছিলো। কিন্তু এভাবে ময়লার স্তুপের মধ্যে উন্মুক্তভাবে ফেলার কোনো নির্দেশনা যেমন নেই, তেমনি উচিতও হয়নি।
তিনি জানান, হাসপাতাল প্রশাসন কিংবা আমাকে এ বিষয়ে জানানো না হলেও এ দ্বায় এড়ানোর সুযোগ কারো নেই। পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং বিধি অনুযায়ী দায়িত্ব অবহেলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
মরদেহগুলো উদ্ধারের সময় ঘটনাস্থলে থাকা হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মোদাচ্ছের কবির জানান, অনেক মায়েদের ইনকমপ্লিট বাচ্চা জন্মায়। যা অনেক সময় পরিবারের লোকেরা নিয়ে যায়। আবার অনেকে ফেলে যায়। রেখে যাওয়া বাচ্চাগুলো দিয়ে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল ক্লাস নেওয়া হয়। পরে তা কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মাটিচাপা দেওয়া হয়। ‘কিন্তু বাচ্চাগুলোর মরদেহ মাটিচাপা না দিয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে এভাবে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হলো কেন? সে বিষয়টি আমার জানা নেই। ’
এদিকে ঘটনাস্থল বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোশারেফ হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন। পুলিশ কমিশনার সাংবাদিকদের জানান, উদ্ধার হওয়া ৩১ অপরিণত শিশুর (ফিটাস) মরদেহের বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। বর্তমানে এগুলোর সুরতহাল করা হচ্ছে। পরবর্তীতে ময়নাতদন্ত করে আইনগত প্রক্রিয়া শেষে সমাধিত করা হবে।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম বলেন, হাসপাতাল প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশও বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। প্রাথমিকভাবে যতটুকু জানা গেছে, গাইনি ওয়ার্ডের আয়া মালেকার মাধ্যমেই এগুলো এখানে ফেলা হয়েছে। এ মুহূর্তে একটি সাধারণ ডায়েরির মাধ্যমে ৩১টি অপরিণত শিশুর (ফিটাস) মরদেহের বিষয়ে আইনগত সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মরদেহ উদ্ধারের পর কাউকে কিছু না জানিয়ে ওই স্থানেই মাটিচাপা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তার আগেই বিষয়টি চাউর হয়ে গেলে থানা পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহগুলো তাদের জিম্মায় নেয়।
বাংলাদেশ সময়: ০০১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৯
এমএস/এসএইচ