বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে চকবাজারের চুরিহাট্টা এলাকার ওই ভবনে এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। এলাকাবাসী মনে করছেন, ভবনটির কেমিক্যাল কারখানা থেকে আগুন ছড়িয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের সাড়ে ৩ ঘণ্টা পরও ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের আগুন নেভানোর কাজে ব্যস্ত দেখা যায়। দেখা যায়, অগিকাণ্ডকবলিত ভবন ও এর পাশের ভবনগুলো থেকে লোকজনকে ক্রেনের মাধ্যমে উদ্ধার করে নিয়ে আসতে।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের পর খোলা আকাশের নিচে রাতযাপন করছেন পুড়ে যাওয়া ভবনগুলোর আতঙ্কিত বাসিন্দারা। ঘটনাটির পর পুরো এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে। ফায়ার সার্ভিস ও এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এলেও আবার হঠাৎ জ্বলে উঠতে দেখা গেছে।
অগ্নিকাণ্ডের পর বাসা থেকে বেরিয়ে আসা মোহাম্মদ কাজী তানভীর অপেক্ষা করছেন ঘটনাস্থলে। তিনি কখন আগুন নিভে গিয়ে সব স্বাভাবিক হবে তার অপেক্ষায়। তানভীর বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাস্থলে দু’টি কার দাঁড়িয়ে ছিল। সেগুলোর কোনো অস্তিত্ব আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এখন। সব পুড়ে ছাই। আশেপাশে বাসায় যারা ছিল অনেকে লাফ দিয়ে আবার অনেকে স্বাভাবিকভাবে নেমেছে। তবে আমাদের স্বজনদের অনেকেরই খোঁজ পাচ্ছি না। জানি না তারা কোথায়।
একই এলাকার রাসেল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সঙ্গে একযোগে আগুন নেভাতে কাজ করে যাচ্ছে এলাকাবাসী, তবু আগুন নিভছে না। আমি এখানে যে হোটেলটিতে কাজ করতাম সেটিও পুড়ে ছাই। আমার সঙ্গে কাজ করা অন্যদের কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। ঠিক কখন সবকিছু স্বাভাবিক হবে বুঝতে পারছি না। একটু আগেই সবকিছুই ঠিক ছিল। এখন সবকিছু এলোমেলো মনে হচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের পাগলের মত খুঁজেছেন হোসনে আরা নামের এক নারী। তিনি যাকে পাচ্ছেন তাকে জিজ্ঞেস করছেন ১৩ বছরের ছেলে সোহেলের কথা। কিন্তু তার ছেলের কোনো হদিস মিলছে না। আগুনের ঘটনার সময় একসঙ্গে নেমে এসেছিলেন ভবন থেকে।
অগ্নিকাণ্ড নেভানোর তদারকি করতে আসা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন সাংবাদিকদের বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে সব কিছু তুলে ধরা হবে।
হতাহতের ব্যাপারে কোনো তথ্য আছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, এই মুহূর্তে দুর্যোগকালীন ম্যানেজমেন্ট করি আমরা। তারপর সব আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবো। তবে ৪০-৪৫ জনের মতো ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।
অগ্নিকাণ্ডের পর এখন পর্যন্ত যে দগ্ধ ব্যক্তিরা ঢামেকে ভর্তি হয়েছেন তারা হলেন- রেজাউল (২১), জাকির হোসেন (৫০), সেলিম (৪৫) আনোয়ার (৫০) মোস্তাফিজ (৪০), জাহিদুল (২৮), ইভান (৩০), মাহমুদ (৫৭), রামিম (১২), সালাউদ্দিন (৫০), মোজাফ্ফর হোসেন (৩২) সোহাগ (২৬) সোহান (৩৫) ফজর আলী (২৫), হেলাল (২৫) ও সুজন (৪০)। এদের মধ্যে প্রথম দু’জনের অবস্থা গুরুতর।
যারা আহত হয়েছেন তাদের মধ্যে- আল আমিন (৩৫), কাউছার (৩০), জাহাঙ্গীর (২৩), ছালাম (৩০), রবিউল (৪০), সালাউদ্দিন (৩৪), আনিছুর রহমান (৫০), তানজিল (১৪), রমজানের (১২) নাম জানা গেছে। এদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত আছে।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বাংলানিউজকে জানান, দগ্ধদের কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। জরুরি বিভাগ ও বার্ন ইউনিটে তাদের চিকিৎসা চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৯
এজেডএস/পিএম/ওএইচ/ডিএসএস/এমএমআই/এইচএ/
** চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ ১৬
** চকবাজারে ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৩৭ ইউনিট- দগ্ধ ১৬