তাদের মধ্যে মেহেদির মরদেহ দাফন হয়েছে সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে। আতঙ্কের কারণে পারিবারিক কবরস্থানের কিছুটা বাইরে তাদের দাফন করা হয়।
বেঁচে থাকা নূরজাহান তার চোখের সামনে ছেলে, বউমা, ২ নাতি ও নাতজামাইকে সমাহিত হতে দেখলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৯ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) মরিচপাড়া গ্রামের তাহের আলী (৫৫) অসুস্থ হলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মারা যান তিনি।
২১ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) মারা যান তার জামাতা হাবিবুর রহমান (৩২), একই দিন বিকেলে মারা যান তাহেরের স্ত্রী মরিয়ম খাতুন ( ৪৭)।
এর পর ২৪ ফেব্রুয়ারি (রোববার) অসুস্থ হয়ে মারা যান তাহেরের বড় ছেলে ইউসুফ আলি (২৫)। বর্তমানে তার স্ত্রী ও এক সন্তান অসুস্থ হয়ে বর্তমানে রংপুর মেডিকেলে ভর্তি আছেন।
রোববার তাহেরের ছোট ছেলে মেহেদী হাসান গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯টায় তারও মৃত্যু হয়।
দাফনের সময় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ইউসুফের শ্বশুর রবিউল ইসলাম ও তাদের আত্মীয় সাবেক ইউপি সদস্য প্রতিবেশী সাইদুল হক। তাদের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
সেখানে তাদের জন্য আলাদা একটি ইউনিট কাজ করছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। তবে কোনো মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়নি।
স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মেহেদির মরদেহ বাড়িতে পৌঁছানোর পর স্থানীয় লোকজন তাতে হাতও দেয়নি। ৩ ঘণ্টা পর আত্মীয় স্বজন এসে গাড়ি থেকে মরদেহ নামিয়েছেন। আতঙ্কে অনেক লোক নিজেদের অসুস্থ মনে করে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান চিকিৎসক ফিরোজ জামান বলেন, রোগ নির্ণয়ের জন্য অসুস্থদের শরীর থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করা হয়েছে। তারা ভাইরাসজনিত সেরেব্রাল এনকাফালাইটিস রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে জানান তিনি।
বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসাব্বেরুল হক বলেন, আমি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফোন করে জানতে পেরেছি এটি ব্রেইনের ভাইরাস। আমরা বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, খবর পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফিরোজ জামান জুয়েলকে বিষয়টি দেখার জন্য বলেছি। তিনি মৃত ইউসুফ আলীর প্রেসক্রিপশন সংগ্রহ করেছেন। কী কারণে এমন ঘটনা ঘটছে, বিশেষজ্ঞ ছাড়া আপাতত বলা যাচ্ছে না।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জনকে অবগত করা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডা. খায়রুল কবির জানান, এনসেফালাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে এ পাঁচ জন মৃত্যুবরণ করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ঢাকায় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তারা মঙ্গলবারের মধ্যে এসে বিষয়টি পর্যবেক্ষণসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন। তারপরেই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৯
আরএ