সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টার আগে র্যাবের পক্ষ থেকে এক বার্তায় ছিনতাইচেষ্টাকারীর নাম-পরিচয় জানানো হয়। এতে বলা হয়, নিহত সন্ত্রাসী র্যাবের অপরাধী ডাটাবেজের অন্তর্ভুক্ত।
পরে দুধঘাটায় পিয়ার জাহান সরদারের বাড়িতে গিয়ে আলাপ করে পলাশের পরিচয় নিশ্চিত হয় বাংলানিউজ। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক সাজ্জাদ রুমনও প্রাথমিকভাবে পলাশ সংক্রান্ত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তবে বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
দুপুরে দুধঘাটা গ্রামে পিয়ার জাহান সরদারের বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলে বাংলানিউজ। তাদের বাড়িতে ১১টি ঘর। পলাশদের পাকা বাড়ি। মা রীনা বেগম ও বাবা পিয়ার জাহানের একমাত্র ছেলে পলাশ। তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন বাবা। বাড়িতে আছে চার বছরের মেয়ে জান্নাত।
পিয়ার জাহান জানান, পলাশ তার একমাত্র ছেলে। ১৯৯০ সালে তিনি কাজ করতে ইরাক চলে যান। সেখানে চার বছর থাকেন। দেশে ফিরে তিনি আবার সৌদি আরব যান এবং ২০১২ সালে তিনি আবার দেশে ফেরেন।
এর মধ্যে পলাশ তাহেরপুর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে ২০১২ সালে দাখিল পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেন। এরপর তিনি সোনারগাঁও ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন। সেখানে পড়া অবস্থায় ঢাকায় চলে যান। তারপর থেকে তার আচরণে পরিবর্তন দেখতে পায় পরিবার।
পিয়ার জানান বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার ছেলে অবাধ্য ছিল। পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে প্রবাস থেকে আমার পাঠানো টাকা সে নানাপথে খরচ করেছে। ঢাকায় যাবার কিছুদিন পর পলাশ বাড়িতে জানায়, সে নাকি ঢাকায় চলচ্চিত্রে কাজ করার চেষ্টা করছে। তখন বাড়ির সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল না। মাঝে মাঝে বাড়িতে আসতো, তবে এলাকার মানুষের সঙ্গে মিশতো না, কথা বলতো না।
তিনি জানান, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের এক রাতে সিমলাকে নিয়ে বাড়িতে আসেন পলাশ। সিমলাকে চিত্রনায়িকা জানিয়ে নিজের প্রেমিকা বলে মা-বাবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। । এ নিয়ে বাবার সঙ্গে পলাশের ঝগড়া হয়। দুই ঘণ্টা ঝগড়াঝাটি হলেও পিয়ার জাহান এ সম্পর্ক মানেননি বলে পলাশ ফিরে যান সিমলাকে নিয়ে। আড়াই মাস পর ফের এনে পরিচয় করিয়ে দেন স্ত্রী হিসেবে। তখনো বাবার সঙ্গে পলাশের ঝগড়া হয়। এরপর ফের ঢাকায় চলে যান।
পিয়ার জাহান বলেন, ২০-২৫ দিন আগে সর্বশেষ পলাশ বাড়িতে আসে। বাড়িতে আসার পর তার আচরণে বিরাট পরিবর্তন দেখা দেয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া শুরু করে, মসজিদে গিয়ে আজানও দিয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবার বাড়ি থেকে যাওয়ার আগে বলেছে, সে কাজের সন্ধানে দুবাই যাবে।
এরপর রোববার (২৪ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামে দুবাইগামী প্লেন ছিনতাইচেষ্টার ঘটনায় পলাশের মৃত্যুর খবর ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারেন পিয়ার জাহান।
সোনারগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে জানান, প্লেন ছিনতাইচেষ্টার ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ছবি রোববার দিনগত রাত ১টার দিকে পিয়ার জাহানের বাড়িতে এসে দেখালে তিনি পলাশের পরিচয় নিশ্চিত করেন।
রোববার সন্ধ্যায় বিমানের চট্টগ্রাম থেকে দুবাইগামী বিজি-১৪৭ ফ্লাইটটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে পাইলট তা শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণ করান।
খবর পেয়ে দ্রুতই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিসসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। আর রানওয়েতে অবস্থান করা প্লেনটি ঘিরে রাখে পুলিশ, র্যাব ও সেনা কমান্ডোর সদস্যরা। পরে কমান্ডো অভিযানে নিহত হয় ছিনতাইচেষ্টাকারী। সোমবার সকালে র্যাব জানায়, নিহত ব্যক্তি র্যাবের অপরাধী ডাটাবেজের অন্তর্ভুক্ত। সে তালিকা অনুযায়ী তার নাম মো. পলাশ আহমেদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৯
এইচএ/