ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চাপাপড়ার পরও বাঁচার চেষ্টা করেছিল ওয়াজিদ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৯
চাপাপড়ার পরও বাঁচার চেষ্টা করেছিল ওয়াজিদ শিশু ওয়াজিদের মরদেহ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ শহরের বাবুরাইল এলাকায় নির্মাণাধীন চারতলা ভবন ধসেপড়ার ঘটনার প্রায় ৪৬ ঘণ্টা পর নিখোঁজ স্কুলছাত্র ইফতেখার আহমেদ ওয়াজিদের (১২) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা যারা ধসেপড়া ভবনটির উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছেন তারা বলছেন, চাপাপড়ার পর বাঁচার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিল ওয়াজিদ, কিন্তু সে সফল হয়নি।

মঙ্গলবার (০৫ নভেম্বর) দুপুর ২টার দিকে শিশুটিকে ভবনের একটি দেয়ালের নিচে চাপাপড়া অবস্থায় সন্ধান পাওয়া যায়। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

শিশুটি দেয়ালের নিচে চাপাপড়ে থাকায় তাকে উদ্ধার করা বা তার সন্ধান পেতে দেরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা।

শিশুটি মূলত পুরো ভবন ধসের নিচে চাপা পড়েছিল। নিচে নোংরা কাদাপানি থাকায় সেখানে উদ্ধার অভিযানে একাধিকবার নামতে গিয়েও নামতে পারেননি উদ্ধারকর্মীরা। অনেকবার এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে পানি দিয়ে এই কাদা দূর করে তল্লাশি চালানোর কথা বলা হলেও তা করা হয়নি।

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আরেফিন জানান, শিশুটির মাথা একদিকে ছিল আর পা এলোমেলো ছিল। এতে বোঝা যায় যখন চাপাপড়ে তখন সে পা দিয়ে বের হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সফল হয়নি। একটি স্লাব ও দেয়ালের মাঝে সে চাপা পড়েছিল। তার চেহারা একেবারেই পরিবর্তন হয়ে ঝলসে গেছে। উদ্ধারের পর শিশুটির মরদেহ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।  

নিহত ওয়াজিদ ধসে যাওয়া বাড়িটির কাছাকাছিই থাকতো। তার বাবার নাম আব্দুল রুবেল ও মায়ের নাম কাকলী বেগম। সে একই এলাকার ব্যাপারীপাড়ার সানরাইজ স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।  

রোববার (০৩ নভেম্বর) বিকেলে মুন্সীবাড়ি এলাকার এইচ এম ম্যানশন ভবনটি ধসে পড়ে। ভবনটির মালিক মৃত আব্দুর রউফ মিয়ার চার সন্তান।  

ফায়ার সার্ভিসে অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মন্ডলপাড়া স্টেশনের স্টেশন অফিসার বেলাল জানান, আমরা উদ্ধার অভিযানের এক পর্যায়ে দেয়াল ভাঙতে ভাঙতে শেষ পর্যায়ে নিচের দিকের দেয়ালের নিচে চাপাপড়া ওয়াজিদের পায়ের সন্ধান পাই। তখন তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধারে অভিযান শুরু করা হয়। তবে অনেক চেষ্টা করলেও তাকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

তিনি জানান, হয়তো সে বের হতে গিয়ে দেয়ালের নিচে চাপা পড়েছিল। যে কারণে আমরা ভবনের ভেতরে দেয়াল কেটে আসবাবপত্র সরিয়েও তার সন্ধান পাচ্ছিলাম না। নিচের কাদাপানির কারণে পানির নিচে নেমেও অনুসন্ধানে অনেক বেগ পেতে হয়, নামাটাও হয়ে পড়ে কঠিন।  

স্থানীয়রা জানান, ভবনটি মূলত একটি ডোবার উপর নির্মাণ করা হয়েছিল। সেখানকার লোকজনও এ ব্যাপারে অনেকবার ভবন মালিককে নিষেধ করেছিলেন। ভবনটি কোনো সয়েল টেস্ট কিংবা রাজউকের অনুমতি ও পাইলিং ছাড়া নির্মাণ করা হয়েছিল। ছিল না কোনো ফাউন্ডেশনও। ভবনটি তিনতলা পর্যন্ত করার পরও ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু সম্প্রতি চারতলার ছাদ ঢালাই দেওয়া হয়। আর এ লোড নিতে না পেরেই রোববার ধসে পড়ে ভবনটি।

আরও পড়ুন
** যেভাবে উদ্ধার হয় ওয়াজিদের মরদেহ
** ৪৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার হলো শিশু ওয়াজিদের মরদেহ
** নিহত ওয়াজিদের পরিবারকে অনুদান, পাশে থাকবে প্রশাসন

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৯
জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।