ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিমা মালিকদের সামাজিক দায়বদ্ধতার দিকে নজর দেওয়ার আহ্বান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৯
বিমা মালিকদের সামাজিক দায়বদ্ধতার দিকে নজর দেওয়ার আহ্বান ১৫তম আন্তর্জাতিক ক্ষুদ্রবিমা সম্মেলন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী/ছবি- পিআইডি

ঢাকা: বিমা কোম্পানির মালিকদের শুধু মুনাফার দিকে নজর না দিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও মানব কল্যাণের বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার (০৫ নভেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ১৫তম আন্তর্জাতিক ক্ষুদ্রবিমা সম্মেলন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিমা কোম্পানির মালিকদের প্রতি মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি।

বিমাশিল্পকে মানবিক কল্যাণে কাজে লাগাবেন বলে আমি মনে করি।

তিনি বলেন, উৎপাদন এবং অর্থনীতিকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে বিমা কোম্পানিগুলোকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ব্যক্তি, পরিবার এবং প্রাতিষ্ঠানিকখাতের অদৃশ্য ঝুঁকি হ্রাসে বিমাশিল্প সহায়তা করে। সম্ভাব্য ঝুঁকি কমিয়ে আর্থিক নিশ্চয়তা দেয়। জীবন ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতিতে নিরাপত্তা দেয়। পাশাপাশি দেশের পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগখাতের জন্য তহবিল সৃষ্টিতে সহায়তা করে। ধনি, দরিদ্র নির্বিশেষে সবার জন্য বিমা প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিমাও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়জনিত ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশে বিমা ব্যবস্থার প্রয়োগ এখনও অপ্রতুল এবং এর প্রসার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ঘটেনি। ফলে সামগ্রিকভাবে ক্ষতিপূরণ সম্ভবপর হলেও নিম্ন ও স্বল্পআয়ের জনগোষ্ঠী এবং প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি বলেন, জলবায়ুজনিত ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য বিশেষ ধরনের বিমা স্কিম এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এ ধরনের বিমা ব্যবস্থা একটি নতুন ধরনের পদক্ষেপ। এটি অল্প সংখ্যক দেশে চালু করা হয়েছে এবং কিছু কিছু দেশে পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে।

বিমাখাতের অবদানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে দারিদ্র্যের হার আমরা উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে সক্ষম হয়েছি। এতে বিমাখাতেরও অবদান রয়েছে। কেননা বিমাখাত সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের কাছ থেকে সঞ্চয় সংগ্রহের মাধ্যমে বিনিয়োগ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। এর মাধ্যমে কর্মক্ষেত্র তৈরি হয় এবং দারিদ্র্য দূর হয়।  

দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিমাশিল্পের গুরুত্ব বিবেচনা করে বর্তমান সরকার এই খাতের আধুনিকায়ন এবং উন্নয়নে যথাযথ গুরুত্ব দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

১৯৩৮ সালে প্রণীত বিমা আইনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে আমরা বিমা আইন ২০১০ চালু করেছি। একইসঙ্গে আগের কন্ট্রোলার অব ইন্স্যুরেন্স অধিদপ্তর অবলুপ্ত করে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বা আইডিআরএ আইন ২০১০ প্রণয়ন করার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

অন্তর্ভূক্তিমূলক বিমা নিশ্চিতের জন্য বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বেশকিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। তার কয়েকটি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে

হাওর অঞ্চলে আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবং সার্বিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রাথমিক পর্যায়ে হাওর অঞ্চলে কৃষকদের আর্থিক ক্ষতি নিরসনের লক্ষ্যে কৃষি বিমা চালু করা হচ্ছে।

প্রবাসী কর্মীদের জন্য বিমা প্রবর্তনের লক্ষ্যে প্রবাসী কর্মী বিমা নীতিমালা জারি করা হয়েছে। এতে প্রায় ১২ মিলিয়ন কর্মীর (এক কোটি ২০ লাখ) বিমাঝুঁকি গ্রহণ সম্ভব হবে। এ বিমার আওতায় একজন প্রবাসী কর্মী সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকার বিমা সুবিধা পাবেন।  

বিমা দাবি নিষ্পত্তি বিমাশিল্পের একটি পুঞ্জীভূত সমস্যা। এ সমস্যা থেকে বিমাশিল্পকে বের করে আনা এবং গ্রাহকদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। যার ফলে বিমাশিল্পে বিগত ২ বছরে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার বিমা দাবি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। দাবি নিষ্পত্তিতে কর্তৃপক্ষের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বজায় থাকায় দাবি নিষ্পত্তির হার আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।  

তথ্যের অপর্যাপ্ততা বিমা গ্রাহকদের জন্য একটি বড় সমস্যা। যার ফলে কয়টি কিস্তি জমা হয়েছে, কিস্তির টাকা প্রধান কার্যালয়ে প্রকৃত অর্থে জমা হয়েছে কিনা- সে বিষয়ে গ্রাহকরা অন্ধকারে থাকে। ফলে বিমাশিল্পের প্রতি গ্রাহকদের অনাস্থা বৃদ্ধি পায়। ক্ষেত্র বিশেষে গ্রাহকরা প্রতারিতও হন। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সমন্বিত মেসেজিং প্লাটফর্মের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে উন্নয়ন মেলায় বিমা কোম্পানিগুলো অংশগ্রহণ করছে। এছাড়া বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন বিভাগে সব বিমা কোম্পানিগুলোকে নিয়ে বিমামেলার আয়োজন করছে।  
 
দেশের ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন শহরে অসংখ্য উঁচু ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব ভবনে অগ্নিকাণ্ড থেকে সৃষ্ট ঝুঁকির আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ভবন বিমা প্রচলনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।  

বেসরকারি কোম্পানিগুলোর মধ্যে যে সব কোম্পানি এখন পর্যন্ত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি এমন ২৭টি বিমা কোম্পানির তালিকাভুক্তির জন্য ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

বিমাশিল্পে লেনদেনে স্বচ্ছতা আনার জন্য ১০ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে সব লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পাদনের নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সব বিমা কোম্পানিকে তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে হালনাগাদ অনিষ্পন্ন বিমা দাবির তালিকা প্রদর্শন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, জীবন বীমা কর্পোরেশন, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন ও বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমির সক্ষমতা বৃদ্ধি, অটোমেশন ও মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে ৬৩২ কোটি টাকার প্রকল্পের কার্যক্রম ২০১৮ সাল থেকে চলমান রয়েছে।

বাবা-মায়ের অবর্তমানে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখার জন্য ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা’ প্রবর্তনের কাজ চলমান রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তৎকালীন আলফা ইন্স্যুরেন্সে আঞ্চলিক প্রধান হিসেবে যোগদানের তারিখ ১ মার্চকে ‘জাতীয় বীমা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাবনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারী, মাইক্রো ইন্স্যুরেন্স নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান দুবেল চেম্বারলিন, বিআইএ’র ফার্স্ট ভাইস-প্রেসিডেন্ট প্রফেসর রুবিনা হামিদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৯
এমইউএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।