বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন মিলনায়তনে বঙ্গমাতা সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে জেলহত্যা দিবসের আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুরাদ হাসান একথা বলেন।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তর-পরবর্তী সামরিক শাসক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান এবং এরশাদের সময়ে ক্যান্টনমেন্টে কোর্ট মার্শাল করে কী পরিমাণ মুক্তিযোদ্ধাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে আমরা জানতে চাই এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমাদের এটা জানা উচিত।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাঙালির জাতির পিতাকে হত্যা করা এতটা সহজ ছিল না। খন্দকার মোশতাক আহমেদের মতো এমন ভীতু, কাপুরুষ, বেইমান, মীরজাফরের কী এমন সক্ষমতা ছিল বঙ্গবন্ধুর মতো এমন একজন মহাপুরুষকে হত্যা করার?
সাবেক সেনাশাসক জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গে মুরাদ হাসান বলেন, জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের দালাল বিপথগামী চর ছিলেন। যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পারে তারা কীভাবে মুক্তিযোদ্ধা হয়? এরা মুক্তিযুদ্ধ করেছে বাধ্য হয়ে। আমি এখানে উপস্থিত সবাইকে প্রশ্ন করতে চাই, এমন কোনো ইতিহাস আছে- জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে বাংলাদেশের কোথাও কোনো জায়গায় যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। তিনি করেছেন- এমন প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না।
জাতির পিতা প্রসঙ্গে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কখনোই বিশ্বাস করতেন না- এই বাংলাদেশের মানুষ তাকে হত্যা করতে পারে। তিনি বঙ্গভবনে থাকতেন না। রাষ্ট্রপতি হয়েও সাধারণ মানুষের মতো একটি সাধারণ বাড়িতে থাকতেন। সে কারণেই খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পেরেছিল।
ডা. মুরাদ হাসান বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর এই বাংলাদেশটা যেন একটা অন্ধকার সময়ে প্রবেশ করে, একের পর এক হত্যাকাণ্ড, ক্যু পাল্টা- ক্যু সংঘটিত হতে থাকে। হত্যা করার পর হত্যাকারীদের বিচার করা যাবে না মর্মে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হলো। হত্যাকারী মোশতাক চক্র বাংলাদেশকে ঘোষণা করলো ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ হিসেবে।
জেলহত্যা দিবস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিদিন জাতীয় চার নেতাকে কোর্টে নিয়ে যাওয়া হতো। প্রতিদিন একই প্রশ্ন করা হতো, তোমরা কী কী ষড়যন্ত্র করছো? তোমরা তো ভারতের চর। প্রতিদিন জাতীয় চার নেতাকে অমানুষিক নির্যাতন করা হতো। খন্দকার মোশতাক তাদেরকে ডেকে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব এবং লোভ দেখিয়েছে। তারা উত্তর দিয়েছিলেন, আমাদের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যেতে হবে। কোনো লোক তাদের বশ করতে পারেনি। নিজেদের জীবন দিয়েছেন তারা, কিন্তু তারা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বেইমানি করেননি।
খুনি চক্র মনে করেছিল বাংলাদেশে তারা হত্যা-খুন করবে, বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাবে। কিন্তু তাদের জীবনটা আজকের দুর্বিষহ জীবনে পরিণত হয়েছে। মৃত্যু না হলেও তার চেয়ে বেশি মৃত্যুযন্ত্রণায় প্রতিদিন তারা বিবেকের দংশনে মানুষের ঘৃণায় জীবন কাটায়। বঙ্গবন্ধুর খুনিসহ প্রত্যেকটা খুনিকে বাংলাদেশের মাটিতে ফিরিয়ে এনে বিচার করা হবে।
শেখ শাহ আলমের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় আরও বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, সংসদ সদস্য প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়, সৈয়দ রূবিনা আক্তারসহ বঙ্গমাতা সাংস্কৃতিক জোটের নেতারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৯
আরকেআর/এইচএ/