ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চর জাগলে চরেই ফিরবেন নদীভাঙন মানুষেরা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৯
চর জাগলে চরেই ফিরবেন নদীভাঙন মানুষেরা!

মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার পদ্মা বেষ্টিত কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন। ইউনিয়নটির কিছু গ্রাম পদ্মার চরে অবস্থিত। প্রায় ৬০-৭০ বছর আগে চরাঞ্চল হয়ে উঠে জনবসতিপূর্ণ এক আদর্শ গ্রাম। স্কুল, মাদ্রাসা, বাজার, মসজিদ, মাঠ, গড়ে ওঠে গ্রামটিতে। তবে এবার পদ্মার ভাঙা-গড়ার খেলায় হেরে গেলেন ওই চরের প্রায় সাড়ে ৪০০ পরিবার।

পদ্মার গর্ভে পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে গ্রামটি। আবার হয়তো পরে পদ্মার বুকে জেগে উঠবে চর।

শুরু হবে বসতি। এই স্বপ্ন এখনো দেখছেন কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের সদ্য বিলুপ্ত মাগুরখণ্ড এলাকাবাসী।

কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, ৭ দশমিক ৫৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তন ছিল মাগুরখণ্ড এলাকা। সেখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বাজার, একাধিক মসজিদ, ঈদগাহ মাঠসহ নানা স্থাপনা ছিল। প্রায় সাড়ে ৭০০ পরিবারের বসবাস ছিল এখানে। চলতি বছর নদী ভাঙনে পুরো ভূ-খণ্ডটি বিলীন হয়ে গেছে।

নদী ভাঙনের শিকার মর্জিনা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, নদীতে সব ভেঙে নিয়ে গেছে আমাদের। এখন অন্যের জমিতে বছর চুক্তি করে থাকতে হবে। ঘর ভেঙে এনে রাখা হয়েছে।

‘অন্যের জমিতে কতোদিন থাকবেন’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাঁচ বছরের জন্য জমি ভাড়া করা হয়েছে। তারপর কোথায় যাবো জানি না। তবে চর জাগলে চরেই যাবো।

‘নদীতে বিলীন হওয়া গ্রাম কি জাগবে’ জানতে চাইলে কিছুটা থেমে বলেন, একদিন না একদিন তো জাগবেই!’

ইসমাইল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৮৮-১৯৯১ সাল পর্যন্ত ভাঙনে মাগুরখণ্ড গ্রামটি পুরোপুরিই নদীতে বিলীন হয়েছিল। ১৯৯৫ সালের দিকে আবার চর জাগে ওখানে। ৯৮ সাল থেকে বসতি শুরু হয়। তখন ভাঙনের শিকার হয়ে যারা বিভিন্নস্থানে আশ্রয় নিয়েছিল তারা আবার চরে তাদের জায়গায় ফিরে যান।

তিনি আরও বলেন, আবার ২০ বছর পর গ্রামটি বিলীন হয়ে গেল। তবে আবার জাগবে! চর পড়বে ওখানে। আমাদের বিশ্বাস এটা। তখন সবাই ফিরে যাবে চরে নিজ নিজ জায়গায়।  

তামিম নামের এক যুবক বাংলানিউজকে বলেন, নদীতে পুরো গ্রামটিই ভেঙে গেছে। আমরা অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছি। এই কষ্ট বোঝানো যাবে না।
চর জাগলে চরেই ফিরবেন নদীভাঙন মানুষেরা, ছবি: বাংলানিউজ
কাঁঠালবাড়ী ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মাহাবুব ফকির বাংলানিউজকে বলেন, ১ নম্বর ওয়ার্ডের মাগুরখণ্ড এলাকাটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এ এলাকার প্রায় সাড়ে ৭০০ পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। তাদের ভবিষ্যত কী হবে কেউ জানে না।

নাড়ির টান কেউ উপেক্ষা করতে পারে না। জীবনের শেষ সময়ে এসেও নিজের চিরচেনা গ্রামে থিতু হতে চায় অধিকাংশ মানুষ। চরের জীবন বড়ই বিচিত্র। নির্মল প্রকৃতিতে বেড়ে ওঠা চরের মায়া কাটানো অসম্ভব চরের মানুষের। নদীতে ভেঙে নিয়ে গেছে পুরো গ্রাম। অন্যের জমিতে, রাস্তার পাশেসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে নদী ভাঙন মানুষেরা। তবে এখনো আশায় বুক বেঁধে আছেন। ভেঙে যাওয়া গ্রামটি চর পড়ে আবার জাগবে নদীর বুক ফুঁড়ে। যতো বছরই লাগুক। এক প্রজন্ম পরে হলেও চরেই ফিরে যাবেন তারা। তখন শুরু হবে নতুন জীবন!

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।