জানা যায়, কুশিয়ারা নদীর চাঁনপুর মৌজা এলাকায় হায়দার আলী গংয়ের অলি মিয়া, ইমরান আহমদ ও মনসুর আহমদ কুশিয়ারা নদীতে চারটি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। মূলত মনু নদীর অংশে বালু উত্তোলনের জন্য তাদের ইজারা থাকলেও তারা ওই সুযোগ ব্যবহার করে অবৈধভাবে কুশিয়ারায় বালু উত্তোলন করছেন।
একাধিক ড্রেজার বসিয়ে এসব বালু উত্তোলনের ফলে নদীর পাড়ও দুর্বল হয়ে পড়ছে। ফলে নদীপাড়ের পাঁচটি গ্রামের মানুষ পড়েছে ঝুঁকিতে। গ্রামগুলো হলো- চাঁনপুর, মনুমুখ, সোনারুউয়া, ফাজিলপুর, ইশাপুর ও পয়লোয়ানপুর। গত বছর একই জায়গা বালু উত্তোলন করায় সোমারাই ও চারপুর এলাকায় বড় ভাঙন দেখা দেয়।
অন্যদিকে কুশিয়ারা নদীর বাহাদুরপুর এলাকায় তিনটি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তুলছে আশরাফ আহমদ ওরফে বালু আশরাফের প্রতিষ্ঠান তালুকদার এন্টারপ্রাইজ । নতুন করে সেখানে যুক্ত হয়েছে মাহাদী এন্টারপ্রাইজ নামে আরেক প্রতিষ্ঠান। এই দুই প্রতিষ্ঠানকে কিছু নির্দিষ্ট শর্তে শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলে বালু ভরাট করতে অনুমোদন দিলেও তারা কোনো শর্ত মানছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নদী খনন করে বালু উত্তোলন করতে বলা হলেও তারা সে নকশার কোনো কিছুই না মেনে একাধারে বালু তুলে তা শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল ও তার বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরেজমিনে দেখা যায়, হায়দার আলী গংয়ের চারপুর মৌজা এলাকায় চারপুর ঘাটে বালু উত্তোলনের কথা থাকলেও সেখানে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে না। তারা কুশিয়ারায় এসে বালু নিচ্ছে। এর কাছাকাছি স্থানে তালুকদার এন্টারপ্রাইজকে বালু তুলতে দেখা যায়। তার পাশেই নদীর পাড় ভাঙার আশংকা দেখা দিয়েছে। একই এলাকায় একাধিক ড্রেজার চালানোর ফলে আশপাশের পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা বাংলানিউজকে জানান, বালু উত্তোলনে তারা নদীপাড়ে ঝুঁকির মধ্যে আছেন। এ ব্যাপারে কথা বললে মামলা-হামলার হুমকি দেওয়া হয়। বালু উত্তোলনে আপত্তি করায় অনেকে মিথ্যা মামলার আসামিও হয়েছেন। প্রভাবশালীরা প্রশাসন ও রাজনীতিবিদদের ‘ম্যানেজ’ করে এই ‘বালুর রাজত্ব’ কায়েম করেছে। লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করে অপরাধীদের ছাড় দেওয়া হয়। মাঝখানে কথা বলে এলাকাবাসী নির্যাতনের শিকার হয়।
যোগাযোগ করলে বালু উত্তোলনকারী হায়দার আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের বৈধ অনুমোদন রয়েছে। ’ মনুতে বালু না তুলে কুশিয়ারায় কেন তুলছেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কুশিয়ারা নদী চাঁনপুর মৌজায় অবস্থিত তাই। ’
তালুকদার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আশরাফ আহমদ বলেন, ‘আমার বালু তোলার জন্য ২১ সাল পর্যন্ত মেয়াদ আছে। আমার এলাকায় এসে অবৈধ বালু উত্তোলন করছেন অন্যরা। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও কোনো ব্যবস্থা পাচ্ছি না। ’
এদিকে গত মাসের ২৭ তারিখ ভ্রাম্যমাণ আদালত কুশিয়ারা থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনে দায়ে আশরাফ আহমদের তালুকদার এন্টারপ্রাইজের ৬ শ্রমিককে আটক ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এরপর তাদের বালু উত্তোলন বন্ধ রাখার কথা বলা হলেও তা না মেনে এখনো বালু উত্তোলন চলছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অবৈধ বালু উত্তোলনে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাত্র একটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করলেও মূল সিন্ডিকেট অদৃশ্য কারণে ছাড় পেয়ে গেছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার-ভূমি (এসি ল্যান্ড) সনজিৎ কুমার দে বলেন, আমি ভ্রাম্যমাণ আদালত করেছিলাম। এখন আর এই বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারবো না।
অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে এসি ল্যান্ড হিসেবে তার বক্তব্য জানতে চাইলে এতেও কোনো কথা বলবেন না বলে জানান সনজিৎ কুমার দে।
জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবা) নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে কুশিয়ারায় কিছু শর্তে শুধু তালুকদার এন্টারপ্রাইজকে নকশা অনুযায়ী বালু উত্তোলন করে নদী খননের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। একইভাবে সিলেট থেকে আরেক প্রতিষ্ঠান হয়তো অনুমোদন পেয়েছে। তারা যদি নকশা অনুযায়ী নদী খনন না করে, তাহলে সেই চুক্তিও বাতিলের ক্ষমতা আমাদের আছে। এর বাইরে যারা অবৈধ বালু তুলছেন তাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মামুনুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, কিছুদিন আগে আমরা অবৈধ বালু উত্তোলনের ব্যাপারে জরিমানা করেছি। কুশিয়ারায় কোনো বালু মহাল নেই। যদি কেউ সেখানে বালু তুলতে যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযানে মূল অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই সময় সেখানে তাদের হয়তো পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৯
এএটি/এইচএ/