ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রবীন্দ্র স্মরণোৎসবে শতবছর আগের একাত্মতায় সিলেটবাসী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৯
রবীন্দ্র স্মরণোৎসবে শতবছর আগের একাত্মতায় সিলেটবাসী রবীন্দ্র শতবর্ষ স্মরণোৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন

সিলেট: শতবর্ষ আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সিলেটে এলেও সুরমায় তখন ক্বিন ব্রিজ ছিল না। তার বজরা যখন সুরমা নদী পার হচ্ছিল, তখন নদীর দুই তীরে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্মিলনে এক কাতারে দাঁড়িয়ে কবিকে সংবর্ধনা জানিয়েছিল। আজ শতবর্ষ পরে হিন্দু, মুসলিম সবাই একাত্ম হয়ে রবীন্দ্র স্মরণোৎসব সফল করেছেন।

আবেগাপ্লুত মন্ত্রী বলেন, সারা পৃথিবীতে যখন হিংসা-সংঘাত লেগে আছে, এই সময়ে সিলেটের মানুষ দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে রবীন্দ্র স্মরণোৎসবে এসেছেন। সিলেটবাসীর এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য মুগ্ধ করেছে।

আজ থেকে শতবর্ষ আগেও সিলেটের মানুষ এক ছিল।

শুক্রবার (৮ নভেম্বর) রাতে সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে রবীন্দ্র শতবর্ষ স্মরণোৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন একথা বলেন। সমাপনীর মাধ্যমে পর্দা নেমেছে রবীন্দ্র স্মরণোৎসবের।

আব্দুল মোমেন বলেন, সিলেটের মাটিতে বাংলাদেশ ও ভারতের জ্ঞানী-গুণীর নেতৃত্বের সমন্বয়ে বিরাট একটি অনুষ্ঠান রবীন্দ্র স্মরণোৎসব। তিন বছর নয় মাস আগে সিলেটে এসে বেঙ্গল সাংস্কৃতিক উৎসব সম্ভব হয়েছিল সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সহযোগিতায়। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অনুষ্ঠান এটিরও উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক তিনি।  
 
তিনি বলেন, বাঙালির দ্রোহে, নান্দনিক উচ্ছ্বাসে রবীন্দ্রনাথ অপরিহার্য মানব। শ্রীহট্ট তথা সিলেটের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সম্পর্কের গভীরতা অতলস্পর্শী। শতবর্ষ আগে বিশ্বকবি এসেছিলেন শ্রীভূমে। শতাব্দীর কালপটে দাঁড়িয়ে তাই আয়োজন করা হয় ‘সিলেটে রবীন্দ্রনাথ: শতবর্ষ স্মরণোৎসব’।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, সিলেটে একটি স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করার দাবি উঠেছে। এতে তার দ্বিমত নেই।  

এর একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে পাঠানোর জন্য মেয়রকে আহ্বান জানান তিনি।

এরআগে সিলেটের সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটে স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের দাবি তুলে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

সভাপতির বক্তব্যে আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, রবীন্দ্রনাথের প্রতি প্রেম ও ভালোবাসা থেকে মানুষ এখানে ছুটে এসেছেন। কারণ রবীন্দ্রসঙ্গীতের একটি বিশেষত্ব রয়েছে।  

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইনাম আহমদ চৌধুরী, রবীন্দ্র গবেষক ঊষা ভট্টাচার্য, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

গত ১ নভেম্বর থেকে সিলেটে চলে আসা রবীন্দ্র স্মরণোৎসবের মূল পর্ব বৃহস্পতিবার সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে শুরু হয়। শুক্রবারে বিকেল ৪টায় জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্র স্মরণোৎসব শুরু হয়। এরপর ছিল একক ও সম্মিলিত আবৃত্তি, নৃত্য, সঙ্গীত ও আলোচনা প্রভৃতি।

রবীন্দ্র স্মরণোৎসবের সমাপনীতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, লাইসা আহমেদ লিসা, অনুপম কুমার পাল, অসীম দত্ত, ভারতের পদ্মশ্রী পূর্ণদাস বাউল, অগ্নিভ বন্দোপ্যাধ্যায় প্রমুখ।
 
এদিকে, ফটোগ্রাফিক সোসাইটি আয়োজিত রবীন্দ্রনাথের দুর্লভ ৪শ ছবি ও বাংলাদেশের ক্ষুদে শিল্পীদের আঁকা রবীন্দ্রনাথের আরও অন্তত অর্ধশতাধিক ছবি প্রদর্শনী করা হয় জেলা স্টেডিয়াম সংলগ্ন মোহাম্মদ আলী জিমনেশিয়ামে। ভারতের আসামের শীলচরের অজপা ধর ছবিগুলোর সংগ্রাহক।  

স্মরণোৎসবে আগন্তুকরা ‘রবির আলোয় রবির ছায়’ শিরোনামে রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা থেকে শুরু করে ঠাকুর বাড়ির ইতিহাস-ঐতিহ্য, রবি ঠাকুরের পরিবারিক বন্ধন সবকিছু ছবিতে চোখ বুলিয়ে নেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৪২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৯
এনইউ/এমআইএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।