শনিবার (৯ নভেম্বর) সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে ।
দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় তিন জেলা খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় প্রায় ৫০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। বুলবুলের প্রভাবে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন>>কক্সবাজারে এখনো ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত
অভিযোগ রয়েছে, অবৈধভাবে বেড়িবাঁধের নিচে ছিদ্র করে পাইপ বসিয়ে চিংড়ি ঘেরে তোলা হচ্ছে নদীর লবণপানি। ফলে দুর্বল হয়ে পড়ছে বাঁধ। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার মানুষকে বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় বেড়িবাঁধ দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা খুলনার কয়রা-দাকোপ, সাতক্ষীরার শ্যামনগর-আশাশুনি ও বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সিডর-আইলাসহ বিভিন্ন দুর্যোগের কবলে পড়া এসব এলাকার সাধারণ মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন আতঙ্কে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হলে বাড়িঘর, ফসল, মাছের ঘের ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
উপকূলীয় জেলা খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৮৫৩টি সাইক্লোন শেল্টার।
খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কয়রার বেড়িবাঁধের বেশ কিছু এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ। পানির যে চাপ তাতে যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে গ্রাম তলিয়ে সিডর-আইলার মতো ক্ষতি হতে পারে। এ অবস্থায় মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, আতঙ্কের নাম বেড়িবাঁধ, শঙ্কার নাম বেড়িবাঁধ, দুঃখের নাম বেড়িবাঁধ, নির্ঘুম রাতের নামও এই বেড়িবাঁধ। আবহাওয়ার সংকেত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শঙ্কিত আমরা। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে বেড়েছে বৃষ্টির সঙ্গে বাতাসের গতি। জোয়ারের পানি বৃদ্ধিতে ভাঙন আতঙ্কে কয়রার মানুষ। সৃষ্টিকর্তা যেন এই ভয়াবহ সংকট থেকে সবাইকে রক্ষা করেন।
এদিকে শুক্রবারের মতো শনিবার সকালেও দক্ষিণাঞ্চলে দমকা বাতাস আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি নামছে। উপকূলজুড়ে সিডরের পূর্ব মুহূর্তের পরিস্থিতি বিরাজ করছে। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ও সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকরা মাইকিং করে সতর্কতামূলক প্রচারণায় নেমেছে।
গভীর সমুদ্রে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আতঙ্কে উপকূলের লাখ লাখ মানুষ। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার জন্য মাইকিং করায় অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন সাইক্লোন শেল্টারে যেতে শুরু করেছেন। এদিকে এ তিন জেলার প্রতিটি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাইকিংসহ সব সাইক্লোন শেল্টার ও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সার্বক্ষণিক খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কন্টোল রুম খোলা হয়েছে।
শনিবার সকাল ১০টার দিকে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফকর উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর প্রভাবে সাগর ও সংলগ্ন সুন্দরবনের নদ-নদী খুবই উত্তাল রয়েছে। মোংলা বন্দরসহ সুন্দরবন উপকূলের আশপাশের এলাকায় হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়া বইয়ে যাচ্ছে। মোংলা সমুদ্রবন্দরে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। একইসঙ্গে খোলা হয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষের কেন্দ্রীয় একটিসহ দুইটি সাব কন্ট্রোল রুম। জাহাজের পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে।
এদিকে বুলবুল আঘাত আনলে খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি ও বরগুনাসহ উপকূলীয় জনপদে ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতার জন্য খুলনা নৌঘাঁটি তিতুমীরে পাঁচটি জাহাজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) খুলনার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সাইদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বেড়িবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান জরুরি মেরামত করে মোটামুটি একটি পর্যায় নিয়ে এসেছি। আমাদের কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। আশা করি, কোনও সমস্যা হবে না। সেখান থেকে প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানি কতদূর পর্যন্ত আসছে তা রেকর্ডিং করা হচ্ছে। আমাদের প্রধান প্রকৌশলী, তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী আমরা এসডি লেভেলে যারা আছি সবাই মাঠপর্যায়ে রয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৯
এমআরএম/এএটি