ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘মাথাপিছু স্টিল ব্যবহারে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৯
‘মাথাপিছু স্টিল ব্যবহারে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ’ বক্তব্য রাখছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: মাথাপিছু স্টিল ব্যবহারে বাংলাদেশ পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, একটা দেশের উন্নয়ন বিবেচনা করা হয় সেদেশের মাথাপিছু স্টিল ব্যবহার কত, সেটা গণনা করে। যে দেশকে আমরা যুদ্ধ করে হারিয়েছি, মাথাপিছু স্টিল ব্যবহারে ইতোমধ্যে সেই দেশকেই পেছনে ফেলেছি। বাংলাদেশের মাথাপিছু স্টিল ব্যবহারের গড় ৪৫ কেজি, যা পাশের দেশ নেপাল-শ্রীলঙ্কার চেয়েও বেশি। 

শনিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড মিলনায়তনে দৈনিক কালের কণ্ঠ-শাহরিয়ার স্টিল (এসএসআরএম) আয়োজিত ‘স্টিল/ইস্পাত শিল্পের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।  

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে বড় বাজেট দেওয়া হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের সেদিকে লক্ষ্য রেখে ভ্যাট দিতে হবে। স্টিল বাইরে রপ্তানির চিন্তাও করতে হবে। সেজন্য নতুন প্রোডাক্ট উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে। এতে দাম বেশি হবে, আয়ও বেশি হবে।  

তিনি বলেন, পরিবেশ ঠিক রেখে আমাদের শিল্পায়ন করতে হবে। এসডিজি অর্জনের অন্যতম শর্ত সবুজ পরিবেশ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য দেশ গড়তে টেকসই উন্নয়ন করতে হবে।  

টিপু মুনশি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনরাত কাজ করেন। মন্ত্রীদেরও প্রচুর কাজ করান। সবকিছু অতিক্রম করে দেশটাকে এগিয়ে নিতে হবে। কারণ, দেশ আপনার আমার সবার। সুতরাং, সবাই মিলেই দেশটাকে গড়বো।  

বক্তব্য রাখছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।  ছবি: শাকিল আহমেদ

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে দেশ। তবে, এখনো অনেক অবকাঠামো উন্নয়ন বাকি। তাই ইস্পাত শিল্পের ভবিষ্যৎ অনেক। মানুষ ভালো স্টিল চায়। এজন্য গুণগত মানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।  

তিনি বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি যখন হয়, তখন কথা ছিল বিদেশি তথা ভারতীয় স্টিল-সিমেন্ট ব্যবহার করবে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। তারপরও আমরা সুযোগ পেলেই দেশীয় স্টিল-সিমেন্ট ব্যবহারের জন্য তাদের বলি। দেশীয় শিল্প বিকাশের জন্যই আমরা কাজ করি।  

জাহাজভাঙা শিল্পে প্রণোদনা সবচেয়ে বেশি জানিয়ে মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, জাহাজভাঙা ও স্ক্র্যাবের দাবি বিবেচনা করা হবে। স্টিলে অগ্রিম আয়কর সাড়ে সাত শতাংশ, রডে তিন শতাংশ। সিমেন্ট ও রড খাতে আয়কর কমানো হয়েছে। স্টিল-সিমেন্ট ব্যবসায়ীরা পাঁচ শতাংশের যে অগ্রিম আয়কর দেন, সাড়ে চার শতাংশ ফেরত দিতে হয়। কারণ, তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায় ক্ষতি দেখান। তারা মোটেও আয়কর দিতে চান না। সুতরাং, অগ্রিম আয়কর নিয়ে আগামী বাজেটের আগেই বসবো।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, দেশের চার কোটি লোক আয়কর দেওয়ার কথা। কিন্তু, মাত্র ৪০ লাখ লোক টিআইএনধারী। কর দেন ২২ লাখ লোক। ট্যাক্স বাড়াতে হবে। বড় শিল্পের বিকাশে বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। বড় শিল্প বাড়লে জিডিপি বাড়বে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নারায়ণ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, সরকারের অগ্রাধিকার খাত জাহাজভাঙা শিল্প। সুতরাং এ শিল্প এগিয়ে যাক, আমরা সেটা চাই। তবে, প্রকৃতি-পরিবেশ ঠিক রেখেই শিল্পায়ন করতে হবে। প্রকৃতি ধ্বংস করে কোনো শিল্প নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে এটা খুব দরকার। এসডিজিরও অন্যতম শর্ত পরিবেশ। তাই এ বিষয়ে কোনো আপস নয়।  

কালের কণ্ঠ-শাহরিয়ার স্টিল আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে অতিথিরা।  ছবি: শাকিল আহমেদ

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব অরিজিৎ চৌধুরী বলেন, বড় শিল্পে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন সহায়তা করতে সরকার কমিটি গঠন করেছে। নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরিবেশ ঠিক রেখেই আমাদের সব করতে হবে। শিল্পের সব কর্মচারী-কর্মকর্তাদের ইনস্যুরেন্সের আওতায় আনতে হবে।

কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলনের সঞ্চালনায় বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা কামাল, বিএসটিআইয়ের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজুল হক, বুয়েটের অধ্যাপক ড. ফাহমিদা গুলশান, বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মনোয়ার হোসেন, শাহরিয়ার স্টিল মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মাসুদুল ইসলাম মাসুদ, বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইকেলার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মো. আবুল কাশেম, রানিং রি-রোলিং মিলসের চেয়ারম্যান সুমন চৌধুরী, দেশীয় স্ক্র্যাব সাপ্লায়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আজহার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ওসমান ভূঁইয়া, তিতাস গ্যাসের জিএম আব্দুল ওহাব তালুকদার, রিহ্যাবের সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী, এনার্জি প্যাকের এমডি হুমায়ুন রশিদ, পিডিপির সদস্য সাঈদ আহমেদ, বিএসটিআইয়ের পরিচালক সাজ্জাদুল বারি প্রমুখ।

আরও পড়ুন> স্টিলের গুণগত মান নিশ্চিতে গুরুত্বারোপ

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৯
টিএম/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।