আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে বলা হচ্ছে খুলনার উপকূলের বাসিন্দাদের। চলছে মাইকিং।
মহাবিপদ সংকেত জারির পরও আশ্রয় কেন্দ্রে যায়নি উপকূলের স্থানীয় লোকজন। তাদের জোর করে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
খুলনার কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সিডর-আইলাসহ বিভিন্ন দুর্যোগের কবলে পড়া এসব এলাকার সাধারণ মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধে দিন কাটিয়েছেন আতঙ্কে। ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হলে বাড়িঘর, ফসল, মাছের ঘের ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
দাকোপ উপজেলার বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে আতঙ্কিত উপকূলীয় প্রায় সব মানুষ। কিন্তু আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছেন না উপকূলের বেশির ভাগ মানুষ। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা উপজেলার বানিশান্তার আমতলা আশ্রয়কেন্দ্রে কিছু অসহায় পরিবারের সদস্যরা আশ্রয় নিয়েছেন। এ খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হয়েছে।
যারা আশ্রয় কেন্দ্র যেতে চাচ্ছেন না তারা বলেন, আশ্রয় কেন্দ্র গেলে ঘর-বাড়িতে চুরি হতে পারে। এছাড়া আশ্রয় কেন্দ্র থাকতে ও খেতে অসুবিধা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি হওয়ার পরও আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছে না অনেকে। বিশেষ করে শহর এলাকার মানুষজন। তবে বিভিন্ন উপজেলার কিছু দুর্গম এলাকার মানুষজন সাইক্লোন শেল্টারে যেতে শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। আবার অনেকে সন্ধ্যার দিকে যাবেন বলে জানিয়েছেন। কেউ কেউ গবাদি পশু সাইক্লোন শেল্টারে রেখে যাচ্ছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন খুলনা সদা জাগ্রত ভূমিকায় রয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় খুলনায় ৩৪৯টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও নয়টি উপজেলায় মোট ১০টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। স্থানীয় মানুষকে সচেতন করার জন্য দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় দুপুর থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সাইক্লোন পিপাডনেস প্রোগ্রাম (সিপিপি) এর কর্মীরা প্রস্তুত রয়েছেন।
এদিকে, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি খুলনা জেলা ও সিটি ইউনিটির আয়োজনে দুপুরে খুলনা সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবিলায় প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ হেলাল হোসেন।
সভায় জেলা প্রশাসক হেলাল বলেন, মোংলা বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বালা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ রাত আটটায় খুলনা উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। খুলনা জেলার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা ও রূপসা উপজেলার কিছু এলাকা ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে এসব এলাকায় সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া সব সাইক্লোন শেন্টার প্রস্তুত রয়েছে এবং সাধারণ জনগণ এ শেন্টারে আসতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে মাইকিং করে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যেতে বলা হচ্ছে। পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, নগদ অর্থ, ওষুধ এবং পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন দেশের এ দুর্যোগের সময় সরকারের পাশাপাশি সবাইকে পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
সভায় জানানো হয়, অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকের পাশাপাশি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রায় ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
খুলনা সিটি রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের সহ-সভাপতি হালিমা ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা ইউনিটের ভাইস চেয়ারম্যান জোবায়ের আহমেদ খান জবা, খুলনা জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের সম্পাদক মকবুল হোসেন মিন্টু, সিটি ইউনিটের সম্পাদক মল্লিক আবিদ হোসেন কবির, সিপিপির ডেপুটি পরিচালক গোলাম কিবরিয়া, ইউনিট কর্মকর্তা মো. মইনুল ইসলাম পলাশ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৯
এমআরএম/আরআইএস/