আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (৯ নভেম্বর) দিনগত রাতে উপকূলে আছড়ে পড়া বুলবুল রোববার (১০ নভেম্বর) সকাল পর্যন্ত উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে এগিয়ে চলেছে। এটি ঘণ্টায় ৮-১০ কিলোমিটার গতিতে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
ভারী বর্ষণের কারণে নগরের শান্তিধাম মোড়, রয়্যাল মোড়, বাইতি পাড়া, তালতলা, মডার্ন ফার্নিচার মোড়, পিকচার প্যালেস মোড়, পিটিআই মোড়, সাতরাস্তার মোড়, শামসুর রহমান রোড, আহসান আহমেদ রোড, দোলখোলা, নিরালা, বাগমারা, মিস্ত্রিপাড়া, ময়লাপোতা, শিববাড়ি মোড়, বড় বাজার, মির্জাপুর রোড, খানজাহান আলী রোড, খালিশপুর মেঘার মোড়, দৌলতপুর, নতুনবাজার, পশ্চিম রূপসা, রূপসা স্ট্যান্ড রোড, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, বাবুখান রোড, লবণচরা বান্দা বাজারসহ প্রায় সব এলাকার রাস্তায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এসব এলাকার অনেক ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানিও ঢুকে গেছে। নিম্নাঞ্চলের বস্তি ঘরগুলোতে দেখা গেছে হাঁটুপানি। অনেক এলাকার ভবনের নিচতলায়ও পানি ডুকে গেছে।
নগরের বাইরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়রা, দাকোপ ও দীঘলিয়া উপজেলা। কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজের কাছে দাবি করেন, কয়রায় দুই সহস্রাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ে উত্তর বেদকাশী, দক্ষিণ বেদকাশী ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নে আধাপাকা ঘরবাড়ি এবং গাছপালা বেশি ভেঙে গেছে। তবে কোথাও বেড়িবাঁধ ভাঙেনি। এছাড়া মহানগরের মুজগুন্নী সড়কে গাছ উপড়ে পড়েছে। এতে বন্ধ হয়ে গেছে যান চলাচল।
কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের আংটিহারা এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বাধীন সমাজকল্যাণ যুব সংস্থার সভাপতি মো. আবু সাঈদ খান বাংলানিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের আংটিহারা, জোড়শিং, গোলখালী, ঘড়িলাল, দক্ষিণ বেদকাশী, পাতাখালি, চরামুখা, হলুদবুনিয়া, বিনাপানি গ্রামে ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। বড় ধরনের গাছ ভেঙে পড়েছে। রাত ৩টা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ভারী থেকে দমকা হাওয়া বইছে, চলছে বৃষ্টিও। নদীতে এখন জোয়ার শুরু হয়েছে। ঝড় না কমলে যে কোনো মুহূর্তে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হতে পারে। অনেকের বসতবাড়ি ও মাছের ঘের বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। স্বাধীন সমাজকল্যাণ যুব সংস্থার পক্ষ থেকে আটিহারা এলাকায় আতঙ্কিত ও উৎকণ্ঠায় থাকা সাধারণ মানুষের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে এবং তাদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও জানান আবু সাঈদ খান।
দাকোপ উপজেলার কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের বাসিন্দা ইমরান আলম বলেন, গতকাল থেকে বিদ্যুৎ নেই, তবে মধ্য রাত থেকে আমার বাড়িসহ এলাকার বিভিন্ন স্থানে একটির পর একটি গাছ উপচে পড়ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে শীতকালীন সবজির ক্ষেত, ধানের ক্ষেত, মৎস্য ঘেরসহ ফসলি জমি। এসব জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। এ যেন ‘পাকা ধানে মই দিয়ে গেল’ বুলবুল। তারপরও মাছ রক্ষায় ঝড় উপেক্ষা করে পুকুরে এবং ঘেরে খাদ্য দেওয়া হচ্ছে, যেন মাছ পানির স্রোতের সঙ্গে ভেসে না যায়।
খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ার্দ্দার বাংলানিউজকে বলেন, বুলবুলের আঘাতে দাকোপ ও কয়রায় এক হাজার কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এখনো বৃষ্টি হচ্ছে, ঝড়ো হাওয়া আছে। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন তৎপর রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৯
এমআরএম/এইচএ/
** রাতে ছিলেন শেল্টারে, সকালে বাড়ি গিয়ে গাছচাপায় মৃত্যু