ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নাটোরে ৩৩ কোটির সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের উপকরণ 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৯
নাটোরে ৩৩ কোটির সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের উপকরণ  সড়ক সংস্কারে নিম্নমানের ইট ও খোয়া। ছবি: বাংলানিউজ

নাটোর: নাটোরের গুরুদাসপুর-নাজিরপুর সড়কের সংস্কার কাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে সড়কে থাকা পুরোনো ইট তুলে খোয়া তৈরি করে আবার সড়কেই বিছানো হচ্ছে।

সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে পোড়ামাটির ইটের খোয়াও। আর এসব মানহীন খোয়া দিয়ে নির্মাণকাজ ঢাকতে শহরের সরকার কনস্ট্রাকশন নামে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রাতের অন্ধকারে কাজ করারও অভিযোগ উঠেছে।

 

গুরুদাসপুর-নাজিরপুর প্রায় ১১ কিলোমিটার এ সড়ক সংস্কার কাজে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৩ কোটি টাকা।  প্রতি কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে ৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও এমন নিম্নমানের খোয়া দিয়ে কাজ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। এছাড়া ধীরগতিতে কাজ করায় কবে নাগাদ সংস্কার কাজ শেষ হবে সে বিষয় নিয়েও নানা সংশয় প্রকাশ করেছেন তারা।  

নাটোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্রে জানা যায়, গুরুদাসপুরের নাজিরপুর বটতলা থেকে শুরু হয়ে নাড়িবাড়ি মোড় পর্যন্ত মোট ১১ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করছে নাটোর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।

এ সড়ক সংস্কার কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা। মেসার্স সরকার কনস্ট্রাকশন নামে নাটোরের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ সড়কটি সংস্কার কাজ করছেন। এ সংস্কার কাজে এক কিলোমিটার সড়কে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি টাকা। আগামী ২০২০ সালের জুন মাসে এর নির্মাণকাজ শেষ হবে।

সরেজমিনে শনিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে ওই সড়কের সংস্কার কাজ দেখতে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পুরোনো ইটগুলো অনেক আগেই তোলা হয়েছে। সেই ইট দিয়ে খোয়া তৈরি করে আবার সড়কেই বিছানো হচ্ছে। সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে নিম্নমানের ইটের খোয়া। আর নিম্নমানের এসব ইট ও খোয়া সড়কের পাশেই স্তুপাকারে রাখা হয়েছে।
  
স্থানীয় হামলাইকোল গ্রামের বাসিন্দা আজগর আলী বলেন, সেপ্টেম্বরের শুরুতে এ সড়ক সংস্কারে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়। পুরোনো এ সড়কের খোয়া তুলে রাখা হয় বেশ কিছুদিন। এতে দুর্ভোগ বাড়ে পথচারীদের। এখন আবার নিম্নমানের খোয়া বিছিয়ে রাতারাতি রোলার করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কাজের শুরু থেকেই হামলাইকোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠটি দখল করে নিম্নমানের খোয়া, বালি ও পোড়ামাটি ইটের স্তুপ করা রাখে ঠিকাদার। সড়কটি সংস্কারে নিয়ম মানা হচ্ছে না। কিছু জায়গায় সড়কের পাশ ধসে গেলেও তা ঠিক না করে জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা হচ্ছে।  

হামলাইকোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ রীতা অভিযোগ করে বাংলানিউজকে জানান, তাদের চোখের সামনেই নিম্নমানের ইটের খোয়া তৈরি করে সড়ক সংস্কার করা হচ্ছে। নিম্নমানের এ নির্মাণ কাজের ফলে সড়কের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এছাড়া তার বিদ্যালয়ের মাঠে নির্মাণ সমগ্রী রাখায় খেলাধুলাসহ শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সরকার কনস্ট্রাকশনের স্বত্ত্বাধিকারী সুজিত সরকার নিম্নমানের কাজের কথা স্বীকার করে মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে বলেন, দুই ট্রাক খোয়া নিম্নমানের ছিল। পরে তা ফেরত দেওয়া হয়েছে। তবে এখন কোনো নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে না।  

প্রকল্পের দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসএই) মো. মজনু মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, নিম্নমানের খোয়া দিয়ে কাজ করার সময় বাধা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ভাল খোয়া দিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে।  

নাটোর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী এএইচএম জাবেদ হোসেন তালুকদার বাংলানিউজকে নিম্নমানের কাজের কথা স্বীকার করে জানান, স্থানীয়দের অভিযোগ পাওয়ার পর এসওকে পাঠানো হয়েছিল। পরে নিম্নমানের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ভাল খোয়া না দিলে ঠিকাদারকে কাজ করতে দেওয়া হবে না। এছাড়া নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ দেখে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।