ইতিমধ্যে প্রচণ্ড বাতাসে বরগুনার পাথরঘাটার সমুদ্র ও সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামগুলোতে দুই শতাধিক কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। হাজারো গাছ উপড়ে পড়ায় বন্ধ হয়ে গেছে রাস্ত-ঘাট।
বরগুনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল চলাকালীন সময় বার্ধক্যজনিত কারণে ১ জন ও ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে উদ্ধার অভিযানের সময় ১ জন অর্থাৎ মোট দুই জন নিহত হয়েছেন।
৬টি উপজেলায় ঘূর্ণিঝড়ে আহত হয়েছে ১৭ জন। এছাড়াও বঙ্গোপসাগরে ১৫ জন জেলেকে বহনকারী একটি মাছ ধরা ট্রলার নিখোঁজ রয়েছে।
টানা বৃষ্টিতে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এর মধ্যে আমন ৯ হাজার ৮৬৩ হেক্টর, শীতকালীন শাকসবজি ৫শ’ ৫০ হেক্টর, গবাদি পশু নিহত ৩টি, আহত ৪১টি, ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি ৫ হাজার ২শ’ ৩৫টি, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৮৬টি, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ ৩৮.৫ কিলোমিটার। মৎস্য বিভাগের সূত্র অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত পুকুর ৬০টি, মৎস্য ঘের ৬৫টি, চিংড়ি ঘের ৩৫টি।
শনিবার ভোর রাতে ৫টার দিকে ঘুর্ণিঝড় বুলবুল বরগুনায় আঘাত হানে। এতে বরগুনা সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে মধ্য রাত থেকে ভারি বর্ষণ হয়। সঙ্গে দমকা হওয়া ও ঝড়ো বাতাস বয়ে যায়। তিন দিনের বর্ষণে বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বুড়ির চর রিংবাঁধ দিয়ে পায়রা নদীর জোয়ারের পানি উপচে পড়ে।
বরগুনা সদর উপজেলা বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে ঝড়ের তাণ্ডবে গাছপালা উপড়ে পড়ে বসত ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। গাছ পালা ভেঙে সড়কের উপর পড়ে আছে। ঝড়ে আমন ধান খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বরগুনা পৌর শহরের বাসিন্দা মো. রুবেল বলেন, ঝড়ের তাণ্ডবে গাছ ভেঙে পড়ে আমাদের বসতঘর ভেঙে গেছে। আমরা এখন খোলা আকাশের নিচে আছি।
বুড়িরচর ইউনিয়নের বাসিন্দা আফসার উদ্দিন বলেন, গাছ ভেঙে পড়ে একমাত্র বসতঘরটি মাটির সাথে মিশে গেছে। রাতে কোথায় থাকবো কি করবো কিছুই বলতে পারি না। সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে যতদ্রুত সম্ভব আমাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। তা না হলে আমাদের খোলা আকাশের নিচে থাকতে হবে।
বরগুনা সদর উপজেলার নলী গ্রামের কৃষক জয়নাল বলেন, ভারী বর্ষণে আমাদের আমন ধান তলিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে এবছর শীতকালীন যে সকল সবজির খেত করেছিলাম সেগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, আমরা সফলভাবে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি, পুলিশ, গণমাধ্যমকর্মী ও বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সমন্বিত প্রচেষ্টায় দুর্যোগে আমাদের বরগুনায় মারাত্মক কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি।
তিনি আরো বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ২৯৪ মেট্রিক টন চাল, ৭ লক্ষ টাকা, ৩৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার ও ৫০টি কম্বল বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা ক্ষয়-ক্ষতি নির্ধারণ করেছি। পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসিত করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৯
এমএইচএম