ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

উপকূলের জন্য হোক একটি দিবস

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৯
উপকূলের জন্য হোক একটি দিবস

ফেনী: উপকূলবাসীর জীবনমান উন্নয়নসহ উপকূল সুরক্ষার দাবিতে ১২ নভেম্বরকে ‘উপকূল দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ১৯৭০ সালের এ দিনকে স্মরণ করে অনেক জায়গায় তৃতীয়বারের মতো পালিত হতে যাচ্ছে দিবসটি। যদিও সরকারিভাবে এর কোনো স্বীকৃতি নেই। দিবস উপলক্ষে আয়োজন করা হচ্ছে আলোচনা সভা, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচির।

ইতোমধ্যে দিবস পালনের জন্য উপকূল দিবস বাস্তবায়ন সমন্বয় কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী উপকূল সন্ধানী সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টু।

১২ নভেম্বরকে উপকূল দিবস ঘোষণার প্রাসঙ্গিক বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন বাংলানিউজের সঙ্গে।

বাংলানিউজ: উপকূল দিবস পালনের প্রাসঙ্গিকতা কী?

রফিকুল ইসলাম মন্টু: আমি একজন সাংবাদিক হিসেবে দেখলাম যে, বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোতে উপকূলের সংবাদগুলো খুব কম আসছে। প্রান্তিক জনপদের যে ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টগুলো, তা আসলে গণমাধ্যমে দেখতে পাই না। অথচ বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চল অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই অঞ্চল আরও বেশি ঝুঁকিতে আছে। এখানে ১৯ জেলার প্রায় ৫ কোটি মানুষ নানাভাবে বিভিন্ন সমস্যায় রয়েছে। আমি উপকূল ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন খবর সংগ্রহ করি এবং সে খবরগুলো মানুষকে জানানোর চেষ্টা করি। এরই একটা পর্যায়ে আমি দেখলাম, অনেক দিবস থাকার পরও বাংলাদেশের উপকূল নিয়ে কোনো দিবস নেই। এই কারণেই উপকূল দিবসের চিন্তাটা।

উপকূলের জন্য একটা দিন থাকলে, প্রতিবছর আমরা যদি একটা প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করি, সবাই মিলে যদি উপকূলের কথাগুলো বলি, তাহলে উপকূলের বিষয়গুলো আরও বেশি দৃশ্যপটে আসবে।

বাংলানিউজ: উপকূল দিবস ১২ নভেম্বরেই কেন?

রফিকুল ইসলাম মন্টু: উপকূল দিবসের চিন্তাটা মাথায় আসার পর আমি চিন্তা করলাম, কোন দিনটিকে উপকূল দিবস হিসেবে প্রস্তাব করা যায়। তখন দেখলাম, ১২ নভেম্বর হচ্ছে বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলের মানুষের জন্য স্মরণীয় একটি দিন। এ দিনটির কথা মনে হলে এখনও কাঁদে সেদিনের ক্ষতিগ্রস্তরা। অনেক স্মৃতি এখনো রয়ে গেছে তাদের। যা আমাদের জীবন-সমাজ অনেক কিছু ভেঙে দিয়ে গেছে। দিনটিকে তারা স্মরণ করে। তাই এই দিনটিকেই যদি উপকূল দিবস হিসেবে রাখি, তাহলে বিষয়টি আরও জোরদার হয়। এ কারণেই প্রস্তাব করা হয়েছে, ১২ নভেম্বর উপকূল দিবস হোক। এটা উপকূলের প্রান্তিক মানুষগুলোরই দাবি।

বাংলানিউজ: বাংলাদেশের কোন কোন এলাকা উপকূলের আওতায় রয়েছে?

রফিকুল ইসলাম মন্টু: বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চল হচ্ছে ৭১০ কিলোমিটার তটরেখা। এর পূর্বে হচ্ছে টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপ এবং পশ্চিমে হচ্ছে সাতক্ষীরার শ্যাম নগরের কালিঞ্চি গ্রাম। এখানে রয়েছে ১৯টি জেলা। ১৯টি জেলার মধ্যে আবার দু’টো ভাগ আছে। একটি প্রত্যক্ষ উপকূল, অপরটি পরোক্ষ উপকূল। এই ১৯ জেলার প্রায় ৫ কোটি মানুষ উপকূলের বিভিন্ন সমস্যায় আছেন।

বাংলানিউজ: এ প্রস্তাবের সঙ্গে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে কিভাবে সম্পৃক্ত করেছেন?

রফিকুল ইসলাম মন্টু: প্রথমে আমি স্থানীয় সাংবাদিকদের এ বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা করেছি এবং সংবাদপত্রে কীভাবে বেশি রিপোর্ট করা যায়, সে চেষ্টা করেছি। আমি হয়তো মাঠে যাচ্ছি, ৫ জন রিপোর্টার সঙ্গে নিচ্ছি প্রতিবেদন লেখার জন্য। এভাবে করেছি। আর শিক্ষার্থীদের একটা গ্রুপ করেছি, যাদের আমি দেওয়াল পত্রিকার মাধ্যমে চারপাশের বিষয় নিয়ে লেখালেখি করাচ্ছি। আমি নিজেই এ উদ্যোগ নিয়েছি এবং অনেকেই আমাকে এ কাজে সহায়তা করেছেন। উপকূলের প্রায় শতাধিক স্কুলে এই দেওয়াল পত্রিকা ‘বেলাভূমি’ বের হচ্ছে। এরসঙ্গে বিরাট সংখ্যক তরুণ যুক্ত রয়েছে। আমি এভাবে উপকূলের ইস্যুগুলোকে দৃষ্টিসীমায় আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এরই একটা ধারাবাহিক অংশ হিসেবে এ দিবসের প্রস্তাব।

বাংলানিউজ: ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উপকূলের পরিস্থিতি কেমন হতে পারে- এ বিষয়ে সেখানকার মানুষ কী জানে?

রফিকুল ইসলাম মন্টু: ভবিষ্যতে কী হবে সেটা তারা হয়তো অনেকে জানে। অনেকে আবার জানে না। বাস্তবেই তারা এটা অনুভব করছে। আমি উপকূলের অন্তত ২০টি স্থানের নাম বলতে পারবো, যেখানকার অবস্থা প্রতি বছর বদল হচ্ছে। প্রতি বছর মানুষজন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যাচ্ছে। সেইসব মানুষগুলো কোথায় যাচ্ছে, সেটাও আমি ট্র্যাকিং করছি। এই পরিবর্তনে তাদের জীবন-জীবিকা বদলায়। অবশেষে তারা সেই ঢাকার পোড়া বস্তি বলে পরিচিত কল্যাণপুর বস্তিতে অথবা চট্টগ্রামের কোনো বস্তিতে জায়গা করে নেয়। প্রতিনিয়ত কিন্তু উপকূলের মানুষ জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, পানিবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ধরণের দুর্যোগ ঝুঁকিতে পড়ছেন। এগুলো কিন্তু আমরা দেখছি, দৃশ্যমান।

বাংলানিউজ: উপকূলের বিষয়ে গণমাধ্যম কেমন ভূমিকা পালন করতে পারে?

রফিকুল ইসলাম মন্টু: গণমাধ্যম শুধু ঘূর্ণিঝড় এলে, কিংবা ঘূর্ণিঝড়ে সব শেষ হয়ে গেলে উপকূলের দিকে চোখ ফেরায়। কিন্তু স্বাভাবিক সময়েও উপকূলের মানুষের জীবন যে কতটা অস্বাভাবিক, সে বিষয়ে দেখার জন্য গণমাধ্যমের সবার আগে এগিয়ে আসা উচিত। গণমাধ্যম আরও বেশি অনুসন্ধানী রিপোর্ট, আরও বেশি ভেতরের রিপোর্ট নিয়ে আসতে পারে। এর ফলে উপকূলের ফোকাস বাড়বে এবং নীতি নির্ধারণী মহলে এ বিষয়গুলো যাবে।

কারণ উপকূলের কণ্ঠস্বর যদি কেন্দ্রে না যায়, তাহলে সমস্যার সমাধান করতে পারা যাবে না। এ বছরও বাংলাদেশে উপকূল দিবস পালিত হচ্ছে, এটা তৃতীয়বারের মতো প্রস্তাব করা হয়েছে। অনেকের সঙ্গে কথা বলে জনমত সৃষ্টি করে, এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনেকেই এর সঙ্গে যুক্ত আছেন।

বাংলানিউজ: সরকারিভাবে কী ভূমিকা রয়েছে?

রফিকুল ইসলাম মন্টু: সরকার স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সবচাইতে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। এ দিনকে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে উপকূল ‍দিবস ঘোষণা করে এতে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করতে পারে। ফলে উপকূলের প্রান্তিক জনপদের মানুষের মধ্যে দুর্যোগ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি হবে। যেকোনো দুর্যোগে কমে আসবে জান ও মালের ক্ষতি। এ দিবসটিকে কেন্দ্র করে উপকূলের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের জন্য কাজ করতে পারে সরকার।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৯
এসএইচডি/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।