ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৭০৩ যাত্রী নিয়ে সিলেট ছাড়ে উদয়ন

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৯
৭০৩ যাত্রী নিয়ে সিলেট ছাড়ে উদয়ন দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেন দুইটি। ছবি: বাংলানিউজ

সিলেট: ৭০৩ জন যাত্রী নিয়ে চট্রগ্রামের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছিল উদয়ন এক্সপ্রেস। সোমবার (১১ নভেম্বর) রাত পৌনে ৯টায় সিলেট রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে যায় ট্রেনটি।

প্রতিদিনের মতো এদিনও ১৬টি কোচ (বগি) নিয়েই রওয়ানা হয় উদয়ন। ট্রেনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় পৌঁছালে ঢাকামুখী ‘তূর্ণা নিশীথা’র সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।

এতে এখন পর্যন্ত ১৬ যাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন, আহত শতাধিক।

দুর্ঘটনার পর উদয়ন এক্সপ্রেস দুর্বল কোচ দিয়ে চালানোর অভিযোগ উঠেছে। তবে, নড়বড়ে কোচ দিয়ে সিলেট রুটে শুধু উদয়নই নয়, সব ক’টি ট্রেন চলাচল করছিল বলে অভিযোগ যাত্রীদের। তাছাড়া, ডাবল লেন না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই ট্রেন চলাচল করছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, তূর্ণা নিশীথার চালক সিগন্যাল অমান্য করায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়া, তুর্ণার ইঞ্জিন সরাসরি উদয়ন ট্রেনের পেছনের তিনটি কোচে আঘাত করে। এতে কোচগুলো দুমড়ে-মুচড়ে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে।   

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এক কর্মকর্তা নামপ্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, উদয়নের কোচগুলো বেশি লক্কড়-ঝক্কড় (পুরনো)। এ কারণে দুর্ঘটনায় বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক আতাউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, উদয়নের ১৬টি কোচে রয়েছে ৬২২টি আসন। তবে, দুর্ঘটনার সময় এতে মোট যাত্রী ছিলেন ৭০৩ জন।  

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান সাংকেতিক ও যোগাযোগ প্রকৌশলী অসীম কুমার তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, তুর্ণা নিশীথা সিগন্যাল অমান্য করায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

তবে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল পাহাড়তলীর বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (কারখানা) কাজী মোহাম্মদ ওমর ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, উদয়নের কোচগুলো পুরনো বলা যাবে না। বিভিন্ন সময় কোচগুলো যুক্ত করা হয়েছে। মূলত তুর্ণার ইঞ্জিন উদয়নের পেছনের তিনটি কোচে আঘাত করেছে। সে কারণে উদয়নের কোচগুলোই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেলওয়ে সিলেট-চট্রগ্রাম রুটে উদয়ন ও পাহাড়িকা নামে দু’টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। উদয়ন ও পাহাড়িকার যাত্রা শুরু ১৪টি কোচ নিয়ে। বিগত বছরগুলোতে এ সংখ্যা কমিয়ে করা হয় নয়টি। তাছাড়া, নড়বড়ে কোচ দিয়ে ট্রেনগুলো চলাচল নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অবশেষে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিদের ডিও লেটারের প্রেক্ষিতে এসব ট্রেনে কোচ সংখ্যা ১৬টি করা হয়।

জানা যায়, ২০১৪ সালে সিলেট-ঢাকা রুটে ১৪টি কোচ নিয়ে যাত্রা শুরু করে কালনী এক্সপ্রেস। এরপর কোচ কমিয়ে আনা হয় চারটিতে। ২০১৭ সাল পর্যন্ত ওই চারটি কোচ নিয়েই যাত্রী পরিবহন করে ট্রেনটি। ২০১৮ সালের শুরুর দিক থেকে আটটি কোচ করা হয়েছিল। পরে আরও একটি কোচ কমিয়ে দেওয়া হয়। জয়ন্তিকা ও উদয়ন এক্সপ্রেস মধ্যখানে কমে ১২টি কোচ নিয়ে চলাচল করে। পরে অবশ্য আরও চারটি কোচ যুক্ত করা হয়। পারাবত এক্সপ্রেসে ১৫টি থেকে তিনটি কমানো হলেও এখন ১৬টি কোচ নিয়ে চলছে।

১৮৯১ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে বাংলার পূর্ব দিকে রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হয় আসামে চা রোপণকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে। ধীরে ধীরে এই অঞ্চলে রেল যোগাযোগ ছড়িয়ে পড়ে। ১৯১২-১৫ সালে কুলাউড়া-সিলেট রুট খোলা হলে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন চালু হয়। এই রুটে মিটার গেজে চলাচল করছে ট্রেন।

আরও পড়ুন
** কসবায় দুই ট্রেনের সংঘর্ষে নিহত ১৫
** কসবায় ট্রেন দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটি​
** সকাল ১১টার পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে পূর্বাঞ্চলে​
** দুর্ঘটনায় চট্টগ্রামের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ
** চালকের ভুলেই ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা

বাংলাদেশ সময়: ১২০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৯
এনইউ/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।