ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বেঁচে যাবো কখনো ভাবিনি...

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৯
বেঁচে যাবো কখনো ভাবিনি... হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার সুব্রত চৌধুরী

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ‘গভীর রাত, ঘুমে মগ্ন ছিলেন অনেকেই। পাশের আসনে জেগে থাকা কয়েকজনের সঙ্গে গল্প করছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ! মুহূর্তেই উল্টে গেল ট্রেন। অন্য একজনের ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে যাই। ধোয়া আর অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছিল না। শোনা যাচ্ছিল শুধু অপরিচিত কণ্ঠের চিৎকার। কীভাবে বের হবো, পথ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কিছুক্ষণ পর একটি জানালা পেয়ে বেরিয়ে পড়ি। বেশ কয়েকটা নিথর দেহ পায়ে লাগে তখন। এরপর দেখি লোকজনের ছোটাছুটি আর স্বজন হারানোর আত্মচিৎকার। এসবের মধ্যে আমার বেঁচে যাওয়াটাও ছিল বিভীষিকাময়’।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ‘ভাগ্যক্রমে’ বেঁচে যাওয়া হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার সুব্রত চৌধুরী। সোমবার (১১ নভেম্বর) দিবাগত রাতে শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন থেকে উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনে করে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফেরা ৪৫ বছর বয়সী এ মানুষটি।



তিনি বলেন, অপর ট্রেনের ধাক্কা লাগার পর মুহূর্তের মধ্যেই ট্রেনের তিনটি বগি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। মিনিটের মধ্যেই সৃষ্টি হয় বিভীষিকাময় পরিস্থিতির। আমার ডানপাশের সিটেই বসা ছিল ছোট্ট শিশু আদিবা আক্তার সোহা। মেয়েটির বাবা তাকে বুকে আগলে রেখে ঘুম-ঘুম ভাব অবস্থায় ছিল। আদিবার ভাই ছিল তার মায়ের কোলে। প্রথম ঝাকুনিতেই একেকজন একেকদিকে গিয়ে পড়েন। মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত ছিলাম। বেঁচে যাব ভাবিনি। সবাই যদি বেঁচে যেতে, তাহলে আমার বেঁচে যাওয়াটাও স্বার্থক হতো। এ কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন মধ্যবয়সী ওই লোকটি।

সুব্রত বলেন, আমি ছিলাম ট্রেনটির ‘ঝ’ বগিতে। এটিতে আসন সংখ্যার চেয়ে যাত্রী বেশি ছিল। এক সিটে দুইজন অথবা তিনজনও বসে ছিলেন। দাঁড়িয়েও ছিলেন বেশ কিছু যাত্রী। যে কারণে দুর্ঘটনার পর হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে। দুর্ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রেল কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান তিনি।

এ দিকে ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত সুব্রত চক্রবর্তীকে রেলওয়ের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুব্রতর হাতে ওই টাকা তুলে দেওয়া হয়। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (পূর্ব) শওকত হোসেনসহ সংশ্লিষ্টরা তার হাতে ওই টাকা তুলে দেন। এ সময় সুব্রত’র চিকিৎসার খোঁজ নেওয়া হয়।

সোমবার (১১ নভেম্বর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার মন্দবাগ এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা অভিমুখী ‘তূর্ণা নিশীথা’র সঙ্গে সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে যাত্রা করা ‘উদয়ন এক্সপ্রেস’ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নারী-পুরুষসহ ১৬ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিক।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৯
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।