২০১৫ সাল থেকে সৌদি আরবে বাংলাদেশ থেকে নারী কর্মী পাঠানো শুরু হয়। এ পর্যন্ত দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার নারী কর্মী গেছেন।
আর লাশ হয়ে ফিরেছেন ৫৩ জন নারী। সৌদি আরব থেকে দফায় দফায় নারী বাংলাদেশে ফিরে এসে সেখানে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় সমালোচনা হলেও নারী কর্মী পাঠানো নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি সরকার।
জানা যায়, শুরু থেকেই সৌদি আরবে নারী কর্মী পাঠানো নিয়ে সমালোচনা চলছিল। দিনে দিনে তা আরও বাড়ছে। অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও নারী সংগঠনের পক্ষ থেকেও সৌদি আরবে নারী কর্মী পাঠানো বন্ধের দাবি উঠেছে।
এমনকি গত সপ্তাহে জাতীয় সংসদেও তিনজন সংসদ সদস্য সৌদি আরবে নারী কর্মী পাঠানো বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। দিনে দিনে সরকারের ভেতর-বাইরে এ দাবি আরও জোরালো হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। নারীরা ঘরে-বাইরে কাজ করুক এটাই সরকারের চাওয়া। যে কারণে সৌদি আরবে নারী কর্মী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এখন নির্যাতনের শিকার হলে নতুন করে এ নিয়ে চিন্তার সুযোগ রয়েছে। তবে নারী কর্মীরা যেন সেখানে নির্যাতনের শিকার না হন, সে বিষয়ে নানা উদ্যোগও নিয়েছে সরকার।
সৌদি আরবে এখনই কেন নারী কর্মী পাঠানো বন্ধে হচ্ছে না, সেটারও বেশ কয়েকটি যুক্তি দিয়েছেন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
তাদের মতে, একজন নারী সৌদি আরবে গেলে, তারা পরবর্তীতে আরো কয়েকজন পুরুষকে নিতে পারেন। এসব পুরুষেরা তাদের পরিবারের লোক বা নিকটাত্মীয় হয়ে থাকেন। কেননা এখন সৌদি আরবে পুরুষ কর্মী পাঠানো বন্ধ রয়েছে, তাই এভাবেই নারীদের মাধ্যমেই পুরুষেরা সৌদি আরবে যেতে পারছেন।
এদিকে সৌদি আরবে থাকা নারীদের পরিবারগুলো বাংলাদেশে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। তাদের আয়ে পরিবারগুলো দরিদ্রতা কাটিয়েও উঠতে শুরু করেছে। তবে নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেকের দেশে ফিরে আসায় সৌদি আরবে থাকা নারীদের ইতিবাচক অর্জনগুলো ম্লান হয়ে পড়ছে। সে কারণে নারী কর্মীদের পাঠানোর বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্তে যাচ্ছে না সরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সৌদি আরবে নারী কর্মী পাঠানো বন্ধ বা সেখান থেকে নারীদের ফিরিয়ে আনার চেয়ে, সেখানে নির্যাতন বন্ধে-ই সরকারের আগ্রহ বেশি।
এ বিষয়ে নানা উদ্যোগও নিয়েছে সরকার। সেখানে শেল্টার হোম নির্মাণ, হটলাইন চালু, নারীদের নিকটাত্মীয়দের পাঠানো, ঠিকানাসহ ডাটাবেজ তৈরি, নির্যাতনের শিকার হলে অভিযোগ করা, দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, সৌদি আরবে নারী কর্মী পাঠানো নিয়ে সরকার ঝামেলায় আছে। তবে এখনই সেখানে নারী কর্মী পাঠানো বন্ধে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সেখানে নারীরা নির্যাতনের শিকার হলে, তা প্রতিরোধে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। আমরা তাদের পেছনে ফেলে রাখতে চাই না। তারা সেখানে যেতে চাইলে আমরা বাধাও দেবো না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৮
টিআর/এমএ