ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সৌদিতে নারীশ্রমিক নির্যাতন বন্ধের দাবিতে মিছিল-সমাবেশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৯
সৌদিতে নারীশ্রমিক নির্যাতন বন্ধের দাবিতে মিছিল-সমাবেশ

ঢাকা: সৌদি আরবে নারী গৃহশ্রমিক নির্যাতন-ধর্ষণ-হত্যা বন্ধ ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে মিছিল-সমাবেশ করেছে কয়েকটি নারী সংগঠন।

রোববার (১৭ নভেম্বর) প্রগতিশীল নারী সংগঠনসমূহের ব্যানারে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। পরে নানা দাবিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একটি স্মারকলিপি দেওয়ার কথা রয়েছে।

সিপিবি নারী সেল, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, শ্রমজীবী নারী মৈত্রী, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র, নারী সংহতি, বিপ্লবী নারী ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের উদ্যোগে সিপিবি নারী সেলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক লক্ষ্মী চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে সমাবেশ ও মিছিল করা হয়।

এসময় বক্তব্য রাখেন শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর সভাপতি বহ্নিশিখা জামালী, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দও, নারী সংহতির সহ-সভাপতি তাসলিমা আক্তার, বিপ্লবী নারী ফোরামের আহ্বায়ক আমেনা আক্তার, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেত্রী নীতি চকমা ও সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সম্পা বসু প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরবে নারী গৃহশ্রমিকদের নির্যাতনের খবর নিয়ে মানুষ উদ্বিগ্ন। এ বছর জানুয়ারি থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮ মাসে ৮৫০জন নারী সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে এসেছেন। এর মধ্যে আগস্টের ১ দিনেই ১০৯ জন ফিরেছেন। নির্যাতনের অভিযোগে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন সৌদিতে গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধ করে দিলে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে সৌদি আরব। এরপর থেকে গত জুলাই মাস পর্যন্ত ৩ লাখ নারী কর্মী গেছেন সৌদি আরবে। দুই বছরের চুক্তিতে যাওয়া নারী গৃহকর্মীরা মাসে বেতন পান বাংলাদেশি টাকায় মাত্র ১৭ হাজার টাকা।

তারা আরও বলেন, চুক্তি অনুযায়ী নারী কর্মীদের বিনা খরচে সৌদি আরব যাওয়ার কথা; কিন্তু দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা লেগেছে সৌদি আরব যেতে। তারা সেখানে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, মৃত্যুও হচ্ছে অনেকের। প্রবাসী কল্যাণ সংস্থা ও প্রবাসে দূতাবাসগুলো এ বিষয়ে তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না। এমন অনিয়ম ও দায়িত্বে অবহেলার বিচার যদি হতো তাহলে হয়তো গৃহশ্রমিকরা এমন নির্যাতনের শিকার হতেন না। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে মিছিল করে নারী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বেশ কিছু দাবিসহ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- অনতিবিলম্বে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে নারী গৃহকর্মীসহ অভিবাসী নারী শ্রমিক পাঠানো হয়েছে তাদের প্রয়োজনীয় আইনি সুরক্ষা, নিরাপত্তা নিশ্চিত, শ্রম আইন ও বিধি অনুযায়ী উপযুক্ত মজুরি আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অভিবাসী নারী গৃহকর্মী ও শ্রমিকদের শারীরিক মানসিক অত্যাচার ও যৌন নির্যাতন বন্ধে বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের মধ্যে প্রয়োজনীয় দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সই ও এর দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। যে ঘটনাগুলো ঘটেছে এতে দূতাবাস ও কনস্যুলেটের দায়িত্বহীনতার বিষয়ে কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নিতে হবে। দূতাবাসের কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়া গৃহকর্মী ও নারীশ্রমিকদের অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক ডেস্ক চালু করতে হবে। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর তথ্য মন্ত্রণালয়ের রাখতে হবে এবং প্রতারক রিক্রুটিং এজেন্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। কর্মস্থলে আত্মহত্যা, নিহত হওয়া এবং যৌন নিপীড়নসহ নির্যাতনের শিকার নারীশ্রমিকের বকেয়া মজুরি আদায় এবং বিচার নিশ্চিতে দুই দেশের মধ্যে চুক্তির পদক্ষেপ নিতে হবে। কর্মীসহ অভিবাসী যেসব নারী দেশে ফিরে এসেছেন তাদের আর্থিক, সামাজিক ও পারিবারিক অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। এসব নিশ্চিত করা না গেলে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলাতে নারী গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধ করতে হবে। সৌদি আরবসহ প্রবাসে ধর্ষণ, নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়ে যেসব নারীশ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৯
পিএস/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।