বাদীর আইনজীবী নুরুল আমিন জানায়, সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে খালেক আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে বিচারক দ্রুব জ্যোতি পাল আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
খালেক সোনাগাজী পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের তুলাতুলি গ্রামের ছৈয়দ আহমদের ছেলে।
এর আগে চলতি বছরের ৪ জুলাই ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালতে কৃষক আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ভূমি অধিগ্রহণের টাকা উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগে নালিশি মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি সোনাগাজী পৌরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল খালেক, গোলাম আজম ও সিরাজুল ইসলামকে আসামি করেন।
মামলায় আব্দুল্লাহ উল্লেখ করেন, ১৯৮৮ সালের ১৪ এপ্রিল আসামি আব্দুল খালেক দলিল নম্বর ৩৪৩৭, ৩৪৩৮ মূলে জনৈক রেজিয়া আক্তার ও আবুল হাসেমের কাছে ১৭৮ শতক ভূমি বিক্রি করেন। পরে ক্রেতা আবুল হাসেম ১৯৯০ সালের ৩১ জানুয়ারি সাব-রেজিস্ট্রি করা ৭৬৬ দলিলমূলে অপর ক্রেতা রেজিয়া আক্তারের কাছে তার অংশের ৮৯ শতক ভূমি বিক্রি করেন।
রেজিয়া আক্তার ১৭৮ শতক ভূমি একক মালিকানা দাবিদার থেকে উচিতমূল্য গ্রহণ করে সাব-রেজিস্ট্রি করা দলিল মূলে মামলার বাদী মো. আব্দুল্লাহর কাছে বিক্রি করেন। উক্ত তফসিল ভূমি সরকার বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য কেইস নম্বর-০৩/১৫-১৬ মূলে অধিগ্রহণ করেন। তফসিল ভূমির মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র ও খতিয়ানাদি মামলার এক নাম্বার আসামী আব্দুল খালেকের নামে থাকায় অধিগ্রহণের টাকা উত্তোলন করতে বর্তমান মালিক মামলার বাদী মো. আব্দুল্লাহ আইনি জটিলতায় পড়েন। স্থানীয় সাক্ষীদের উপস্থিতিতে আমোক্তারনামা দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার শর্তে বাদী আব্দুল্লাহ অধিগ্রহণের টাকা থেকে আড়াই লাখ টাকা আসামি আব্দুল খালেককে দেওয়ার লিখিত চুক্তি করেন।
চুক্তি অনুযায়ী বাদী আব্দুল্লাহ জনতা ব্যাংক সোনাগাজী শাখায় আসামির অ্যাকাউন্টে আড়াই লাখ টাকা দেন। কিন্তু জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আম মোক্তারনামা গোপন করে আসামি আব্দুল খালেক ও অপর দুই আসামি পরস্পরের যোগসাজশে ফেনী এল.এম অফিস থেকে গত ১৮ সালের ২৫ জুন ০৩৭৬৫০৯ নম্বর চেকে ১৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। পরবর্তীতে বাদী ফেনী এল.এম অফিসে গিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে তার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করার খবর জানতে পেরে আসামি আব্দুল খালেকের কাছে টাকা ফেরত চায়। বিভিন্ন সময় টাকা ফেরত দেওয়ার অঙ্গিকার করলেও এক পর্যায়ে টাকা চাইলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
আদালতের বিচারক জাকির হোসেন মামলাটি আমলে নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ফেনীকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন। পিবিআই'র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান আদালতের আদেশ পেয়ে উপ-পরিদর্শক আবুল খায়েরকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। দায়িত্ব পেয়ে তিনি তদন্ত করে গত ২৩ সেপ্টেম্বর আব্দুল খালেককে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেন। গত ১২ নভেম্বর আদালত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
মামলার বাদী মো. আব্দুল্লাহ বলেন, ফেনী ভূমি অধিগ্রহণ শাখার অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে আসামিরা আমার টাকা উত্তোলন করেছে। এ বিষয়ে টাকা উদ্ধার করার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে একাধিক লিখিত অভিযোগ দিলেও কোন প্রতিকার পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করেছি।
তিনি আরও বলেন, আসামি আব্দুল খালেক চিহ্নিত প্রতারক। সে এলাকার আরও কয়েক ব্যক্তির ভূমি অধিগ্রহণের টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৯
এসএইচডি/এফএম