ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

লবণের গুজব প্রতিরোধে কঠোর খুলনা জেলা প্রশাসন-পুলিশ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৯
লবণের গুজব প্রতিরোধে কঠোর খুলনা জেলা প্রশাসন-পুলিশ লবণের জন্য দোকানে ভিড়, ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: নানা গুজবে সারাদেশের মতো খুলনায়ও লবণ নিয়ে চলছে লঙ্কাকাণ্ড। দাম বাড়ানোর পাশাপাশি মজুত করার অভিযোগে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডাও চলছে।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত দোকানে লবণ কেনার জন্য ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। গুজবে চাহিদা বেশি হওয়ায় ডিলার ও অনেক পাইকারি ব্যবসায়ীর গোডাউন লবণ শূন্য হয়ে পড়েছে।

মহানগরীর বড় বাজার থেকে ফ্রেস লবণের কেজি কেনা হয়েছে ৩২ টাকায়। সেই লবণ সন্ধ্যায় ১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। মহানগরীর পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে এভাবে বিক্রি হচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে, লবণের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। আবার কোনো কোনো অসাধু ব্যবসায়ী লবণের দাম আরও বৃদ্ধি পাবে এ আশঙ্কায় মজুদ করে রেখেছেন।

সোনাডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা সাজু বাংলানিউজকে বলেন, নবপল্লী স্কুলের সামনের বাবুল স্টোরের মালিক নুরুল ইসলাম সন্ধ্যায় আমার কাছে প্রতি কেজি লবণের দাম চেয়েছেন ২০০ টাকা। আমি শুনে অবাক হয়ে গেছি। লবণ না কিনে ফিরে এসেছি।

মুসলমান পাড়ার বাসিন্দা আলিপাক বাজ জুয়েল বলেন, পেঁয়াজের মতো দাম বেড়ে যেতে পারে এই আশঙ্কায় পাঁচ কেজি লবণ কিনেছি।

মেসার্স মুরাদ ট্রেডিংয়ের পাইকারি বিক্রেতা জিয়াউল হক মিলন বাংলানিউজকে বলেন, লবণের দাম বাড়ার গুজব ছড়াচ্ছে একটি মহল। আর এ গুজব ছড়িয়ে পড়েছে শহর থেকে শুরু করে গ্রামে-গঞ্জে। লবণের দাম বাড়ার খবর পেয়ে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে দোকানে দোকানে ভিড় করছেন। আমাদের দোকানের লবণ সব বিক্রি হয়ে গেছে। আমরা আগের নির্ধারিত মূল্যে লবণ বিক্রি করেছি।

এদিকে, লবণ নিয়ে গুজব ছড়ানোর পর খবর পেয়ে প্রশাসন দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মাঠে নেমেছে। হঠাৎ করে এভাবে লবণ কেনার কারণে অনেক ডিলার বা পাইকারি ব্যবসায়ীরাও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

লবণ নিয়ে গুজবে কান না দিতে জেলা প্রশাসন ও তথ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কিন্তু তাতেও মানুষের মাঝে উদ্বেগ কমছে না।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্যার ইকবাল রোডের আনন্দ স্টোরে গিয়ে দেখা গেছে, আশপাশের বাড়ি থেকে গৃহিণীরা লবণ কিনতে আসছেন। কিন্তু লবণ না থাকায় সবাই খালি হাতেই ফিরছেন।

দোকানের মালিক আনন্দ সাহা বলেন, সোমবারও প্রতি কেজি লবণ ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে মানুষ লবণ কিনতে শুরু করে। বিকেলের মধ্যেই সব লবণ বিক্রি হয়ে গেছে। ৪০ টাকা দরে লবণ বিক্রি করেছি।

নগরীর বানরগাতি বাজারে দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি মুদি দোকানের সামনেই ক্রেতাদের ভিড়। দোকানের লবণের মজুদ শেষ। কিন্তু ভোক্তারা এই তথ্য বিশ্বাস করছেন না।

বাজারটির বিশ্বাস স্টোরের মালিক রহমান বিশ্বাস বলেন, দুপুরের পর থেকে মানুষ চার থেকে পাঁচ কেজি করে লবণ কিনে নিয়ে গেছে। অল্প সময়ের মধ্যেই লবণ শেষ হয়ে গেছে। এখন মানুষকে লবণ দেব কোথা থেকে। সবাই ভুল বুঝে গালাগাল করছে।

নগরীর বড় বাজার ও সন্ধ্যা বাজারে গিয়েও একই দৃশ্য দেখা গেছে। এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শিকদার শাহীনুর আলম বলেন, বুধবার আমরা অভিযানে নামব। অনিয়ম বা হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেলে জরিমানা করা হবে।

এদিকে, এই গুজব প্রতিরোধে কঠোর হয়েছে পুলিশও। নগরীর বড় বাজার এলাকায় কাউকে লবণ নিয়ে যেতে দেখলে তাকে ধরে থানায় নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।

খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বাংলানিউজকে বলেন, গুজব প্রতিরোধে বাজার তদারকির জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। মহানগরীর বাজার তদারকির জন্য এই তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন। অনুরূপভাবে উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওকে বাজার তদারকির জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সারাদেশে বিভিন্ন লবণ কোম্পানির ডিলার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার কাছে পর্যাপ্ত লবণ মজুদ রয়েছে। পাশাপাশি চলতি মাস থেকে লবণের উৎপাদন মৌসুমও শুরু হয়েছে। এ হিসেবে লবণের কোনো ঘাটতি নেই।

বাংলাদেশ সময়: ৯১১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৯
এমআরএম/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।