দেশের গভীরতম খরস্রোতা পদ্মানদীতে দিন-রাত পাইলিং করে তার উপর খুঁটি বসিয়ে তৈরি করা হয়েছে একের পর এক কংক্রিটের পিয়ার। পিয়ারগুলোর উপর বসছে স্টিলের তৈরি বিশালাকার স্প্যান।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রমত্তা পদ্মাকে ‘বশ’ করে দেশি-বিদেশি শ্রমিকেরা পদ্মার উপর ২ দশমিক ৪ কিলোমিটার মূল সেতুর কাঠামো তৈরি করে ফেলেছেন। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দূরত্বের এই সেতুর কাজ শেষ হওয়া এখন কেবল সময়ের ব্যাপার বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও শ্রমিকেরা।
>>>আরও পড়ুন...কোয়ালিটি- হান্ড্রেড পারসেন্ট, মাস্ট!
ঢাকার পার্শ্ববর্তী মাওয়া ও পদ্মানদীর ওপারে জাজিরা পয়েন্টে সেতু নির্মাণের মহাযজ্ঞ চললেও মূলত জাজিরা পয়েন্টে মূল সেতুর অনেকটাই দৃশ্যমান হয়েছে।
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মোহাম্মদ আব্দুল কাদের জানান, ওপারে জাজিরা পয়েন্টে ৩৩ থেকে ৪২ নম্বর পিয়ার এবং ২৩ থেকে ২৫ নম্বর পিয়ারের উপরে স্প্যান বসানো শেষ হয়েছে। সর্বশেষ দুইটি পিয়ারের কাজ চলছে।
আর মোট ৪২টি পিয়ারের মধ্যে ৩৩টির কাজ সম্পন্ন শেষ হয়েছে। বাকি ৮, ১০, ১১, ২৬, ২৭ ও ৩১ নম্বর পিয়ারের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ৬, ৭ এবং ৩০ নম্বর পিয়ারের কাজও দ্রুত শেষ হবে।
তিনি জানান, পদ্মা সেতুর মাওয়া পয়েন্টে মূল নদীর মধ্যে বসানো ৬ ও ৭ নম্বর পিয়ার বসানোর কাজ সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ, এই এলাকায় নদীর গভীরতা ও স্রোতও বেশি থাকে সব সময়।
আব্দুল কাদের জানান, ৪০টি স্প্যানের মধ্যে ১৬টি তৈরির কাজও শেষ হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ২২ ও ২৩ নম্বর পিয়ারের উপর বসবে আরেকটি স্প্যান।
এদিকে মূল সেতুর পাশাপাশি চলছে পদ্মার দুই পাড়ে নদী শাসনের কাজও। দুই পাড়ে ১১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদীশাসন করা হবে। ওপারে ১১ কিলোমিটার এপারে দুই কিলোমিটার।
ওপারের মাটির ভঙ্গুরতার পাড় বেশি ভেঙে যায়। এজন্য এলাকাও বেশি। ওপারের প্রায় ৬ কিলোমিটার নদী শাসনের কাজও শেষ হয়েছে। নদী শাসনের কাজ প্রায় ৬৪ শতাংশ শেষ হয়েছে।
আগামী বছরের জুনের মধ্যেই পুরো কাজ শেষ হবে বলে জানান নদীশাসন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
পদ্মা সেতুতে রেলওয়ের উপর সড়ক তৈরি করা হচ্ছে, এর মাঝেই চলবে যানবাহন।
পদ্মা নদীর মধ্যে শুধু স্প্যানের উপর রোডওয়ে ও রেলওয়ে স্ল্যাব বসছে। শুকনো জায়গায় বসছে টি-গার্ডার ও আই-গার্ডার। টি-গার্ডারের উপর দিয়ে চলবে যানবাহন আর আই-গার্ডার দিয়ে চলবে রেলগাড়ি।
তবে রেলওয়ে স্ল্যাবের কাজ বেশি এগিয়েছে। ৩৭ নম্বর পিয়ার থেকে ৪২ নম্বর পর্যন্ত ৩৮৬টি রেলওয়ে স্ল্যাবের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এতে দৃশ্যমান হয়েছে রেলওয়ে দৈর্ঘ্য ৭৫০ মিটার। রেলওয়ের জন্য প্রয়োজন মোট ২ হাজার ৯৫৯ টি স্ল্যাব। ইতোমধ্যেই দুই হাজার ৯৪৬ টি তৈরি হয়ে গেছে। বাকি ১৩ টি স্ল্যাবের কাজ চলমান।
আর পুরো সেতুতে দরকার পড়বে মোট দুই হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাব। ইতোমধ্যে এক হাজার ৭৪৩টি স্ল্যাব তৈরি করা হয়েছে। বাকি এক হাজার ১৩৪টি স্ল্যাবের নির্মাণকাজ চলছে। সবমিলিয়ে এখন ১৫০ মিটার রোডওয়ে দৃশ্যমান পদ্মার বুকে।
অন্যদিকে, মোট ৪৩৮ টি টি-গার্ডার প্রয়োজন। যার মধ্যে তৈরি হয়েছে ৪৫ টি। এছাড়া ৭১ টি টি-গার্ডার ইতোমধ্যেই বসে গেছে পিয়ারের উপর। আর আই-গার্ডার প্রয়োজন ৮৪ টি। যার মধ্যে ৪২ টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ৬০ টি আই-গার্ডার ইতোমধ্যেই বসে গেছে।
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী (২০২১) বছরের জুনের মধ্যে স্বপ্নের পদ্মাসেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে বলে আশা করছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।
সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মোহাম্মদ আব্দুল কাদের জানান, যে গতিতে কাজ এগোচ্ছে তাতে আগামী বছরের মধ্যেই পদ্মা সেতু চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৯
এমআইএইচ/এমএ