ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রূপপুর-পারমাণবিক প্রকল্পের রেলরুট পরিদর্শনে রেলসচিব

উপজেলা করসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৯
রূপপুর-পারমাণবিক প্রকল্পের রেলরুট পরিদর্শনে রেলসচিব

ঈশ্বরদী (পাবনা): পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের মালামাল ও যন্ত্রপাতি পৌঁছাতে ঈশ্বরদী-পাকশী রেললাইনের নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেছেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।    

সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে এ প্রকল্প পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন সচিব মো. মোফাজ্জল হোসেন।      

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে রাজশাহীর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প কর্মকর্তা আসাদুল হক বাংলানিউজকে জানান, দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প  পাকশীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প।

ব্রিটিশ আমলের বিনা পয়সার ট্রেন 'পাইলট' চলাচলের পরিত্যক্ত রেললাইন সরিয়ে  আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। ঈশ্বরদী-পাকশী পর্যন্ত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে মালামাল ও যন্ত্রপাতি পৌঁছাতে প্রায় 'তিনশ' কোটি টাকা ব্যয়ে এ রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে।

ভারতের জিপিটি এবং বাংলাদেশের এসইএল ও সিসিসিএল অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে (জয়েন্ট ভেঞ্চার) ২৯৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকায় ডুয়েল গেজ এ রেলপথ হবে। এছাড়াও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ প্রকল্পের আওতায় যে ২৬ দশমিক ৫২ কিলোমিটার নতুন রেললাইন হবে, তার মধ্যে ২২ দশমিক ০২ কিলোমিটার হবে মূল লাইন, আর ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার হবে লুপ লাইন।  

এছাড়া ১৩টি লেভেল ক্রসিং গেট, একটি ‘বি’ শ্রেণির স্টেশন ভবন, একটি প্ল্যাটফর্ম এবং সাতটি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।

পাকশী বিভাগীয় দফতরের প্রকৌশলী-২ আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। মাটি ভরাট শেষে রেললাইন প্রস্তুত করে বসানোর পর পাথর ফেলার কাজ শেষের দিকে। তবে কয়েকটি লেভেল ক্রসিং গেট করতে নির্ধারিত সময় থেকে আরও কিছু সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।            

এসময় উপস্থিত ছিলেন- রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল রাজশাহীর মহাব্যবস্হাপক (জিএম) মিহির কান্তি গুহ, প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুল হক পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্হাপক আহছান উল্লা ভূঞা, পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন, বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মাসুদ সরোয়ার, বিভাগীয়  প্রকৌশলী-১ মো. মনিরুজ্জামান মনির, বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ আব্দুর রহিম, বিভাগীয় বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী খাইরুল ইসলাম, সংকেত ও টেলিকম প্রকৌশলী রুবাইয়াত শরীফ প্রান্ত প্রমুখ।                  

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্হাপক (ডিআরএম) মোহাম্মদ আহছান উল্ল্যা ভূঞা বাংলানিউজকে জানান, ঈশ্বরদী থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করতে ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশন থেকে পরিত্যক্ত পাইলট লাইন হয়ে মোট ২২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ চলছে। এ প্রকল্পের আওতায় ২২ কিলোমিটার রেলপথ ছাড়াও সাড়ে চার কিলোমিটার লুপপথ নির্মাণ হবে।

রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোফাজ্জল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখেছিলেন,  স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা রেলওয়ের কর্মকর্তা- কর্মচারীসহ সবাই সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের কারণেই এ অঞ্চলে স্কুল-কলেজ, মসজিদসহ ব্যাপক উন্নয়ন হবে। পাকশী বিভাগীয় দপ্তর আছে একসময় এ দপ্তর রেলওয়ে জোন হতে পারে, যেহেতু কাছেই পদ্মা নদী, নদী বন্দরও হতে পারে। মূলতঃ ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে এ অঞ্চলের। এতে এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে।              

উল্লেখ্য  ১৯১৫ সালে পাকশীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ স্থাপনের কিছুদিন পর তৎকালীন সাঁড়াঘাটের বরফকল থেকে বরফ পরিবহন করার জন্য ব্রিটিশ রেল কর্তৃপক্ষ প্রথমে এখানে রেলপথ স্থাপন করে। পরে রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে যাতায়াতের প্রয়োজনে এ রেলপথ দিয়ে 'পাইলট' নামে বিনা পয়সার একটি ট্রেন চালু করা হয়। টিকিট কাটার প্রয়োজনীয়তা না থাকায় রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে স্থানীয় সাধারণ মানুষও বিনা পয়সায় চলাচল করতেন এ পাইলট ট্রেনে।  

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে তৎকালীন সরকার কোনো কারণ ছাড়াই পাইলট ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। তারপর এ রেলপথে শুধু রেলের বিভাগীয় কর্মকর্তাদের মোটর ট্রলি মাঝে মধ্যে চলাচল করত। দীর্ঘ দুই যুগেরও পর আবার এ রুটে চলাচল করবে ট্রেন। এতে করে এ অঞ্চলে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত হবে। আর সেই অপেক্ষাতেই রয়েছে এই এলাকার মানুষ।  

বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।