তবে জায়গা বদলের কারণে এফ-৬ যুদ্ধবিমানের এ মডেলটি এখন আর সিঅ্যান্ডবি মোড়ে দেখা যাবে না। তার নতুন ঠিকানা এখন শহরের অপরপ্রান্ত আলিফ-লাম-মীম ভাটায়।
‘রাজশাহী মহানগরের রাজশাহী-নওগাঁ ও রাজশাহী-নাটোর সড়ক পূর্ব-পশ্চিম সংযোগ সড়ক নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সড়কটি নির্মাণ কাজ শেষ হতে চলেছে। নতুন সড়কটি রাজশাহীর শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দর সড়কে গিয়ে মিলিত হয়েছে। দুই সড়কের সংযোগস্থলে থেকে এফ-৬ মডেলের ‘যুদ্ধবিমান’ নির্দেশনা দেবে এদিকে ‘বিমানবন্দর’। পাশাপাশি নতুন এ সড়কের দাঁড়াবে মূল আকর্ষণ হয়ে। কারণ আকাশ পথে রাজশাহী এলে শহরের নওদাপাড়ার (আমচত্বর) প্রবেশমুখে যেমন তিনটি আমের ভাস্বর্য রাজশাহীর ইতিহাস এতিহ্যের জানান দেয়। তেমনিভাবে আলিম-লাম-মীম ভাটা এলাকার নতুন ফোরলেন সড়কটির শোভাবর্ধন করবে এ যুদ্ধবিমানটি। তাই জায়গা বদল হলেও মানুষের মনের খোরাক মেটাবে ঠিকই।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সকালে যুদ্ধবিমানটি সিঅ্যান্ডবি মোড়ের নির্ধারিত স্ট্যান্ড থেকে নামানোর কাজ শুরু হয়। যত্নসহকারে স্থানান্তরের কাজ শেষ হয় রাতে। আপাতত আলিফ-লাম-মীম সড়কের পাশে রাখা হয়েছে। সংস্কার শেষে শিগগিরই তা প্রতিস্থাপন হবে। নতুন সড়কের স্ট্যান্ডে ওঠানোর পর আবারও সৌন্দর্যবর্ধন করবে বিমানটি।
আর সিঅ্যান্ডবি মোড়ের ওই নির্ধারিত স্থানে নির্মাণ করা হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ম্যুরাল নির্মাণ। আগামী বছর জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর আগেই রাজশাহীতে ৬ থেকে ৭টি ম্যুরাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরমধ্যে সিআ্যান্ডবি মোড়ে জেলা পরিষদের জমিতে নির্মাণ হবে ৭২ ফুট উঁচু একটি ম্যুরাল। এর ডিজাইন ইতোমধ্যেই প্রস্তুত হয়েছে। এটি হবে দেশে বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে উঁচু ম্যুরাল। মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি দলের অধীনে এর স্থানান্তর কার্যক্রম শুরু হয়। বিশাল ক্রেনে করে যুদ্ধবিমানটিকে স্ট্যান্ডের ওপর থেকে নামানো হয়। এর পর পুরো প্রক্রিয়া শেষে রাতে বিশেষ যানে করে নেওয়া হয় নতুন ঠিকানায়।
স্থানান্তর কার্যক্রম পরিচালনায় থাকা বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার কাজী শাহজাহান জানান, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের আকাশসীমার সুরক্ষায় এফ-৬ মডেলের যুদ্ধবিমানটি কেনা হয়েছিল। এরপর কেটে গেছে টানা ১৬ বছর।
এ বিমানটি ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সার্ভিস দিয়েছে। পরে শহরের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য রাজশাহী সিটি করপোরেশন একটি অব্যবহৃত বিমান সিঅ্যান্ডবি মোড়ে স্থাপনের আবেদন জানায়। অনুমোদনে পর ১৯৯৪ সালে রাজশাহী মহানগরের সিঅ্যান্ডবি মোড়ে কংক্রিটের তৈরি স্ট্যান্ডের ওপর বিমানটি স্থাপন করে সিটি করপোরেশন।
দীর্ঘ ২৫ বছর পর আবারও বিমানটি স্থানান্তরের জন্য আবেদন করা হয়। এরপর তারা কাজ শুরু করেন। সকাল থেকে কাজ শুরু হয়। লুপ তৈরি করে তার মধ্যে নিয়ে ক্রেনের সাহায্যে দুপুরে বিমানটি সেই স্ট্যান্ড থেকে নামানো হয়। এরপর রাতে বিশেষ যানে করে নিয়ে যাওয়া হয় নতুন স্থানে। শিগগিরই এটি প্রতিস্থাপন হবে।
উইং কমান্ডার কাজী শাহজাহান জানান, যুদ্ধবিমানটি অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি। এ মডেলের বিমানের ইঞ্জিন সাধারণত ভেতরেই থাকে। তবে এটিতে ইঞ্জিন নেই। কিন্তু দুই পাখার সঙ্গে ড্রপ ট্যাংক এখনও আছে। এছাড়া পরবর্তী সময়ে যুদ্ধবিমানটি মডেল হিসেবে রূপ দেওয়া হলেও এর পাইলটের বসার স্থানটি ঠিক রাখা হয়।
যদিও স্থানান্তরের কারণে এখন বিমানটির পাখা এবং ড্রপ ট্যাংকগুলো খুলে নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রতিস্থাপনের সময় আবারও তা যথাস্থানে লাগিয়ে দেওয়া হবে। এ স্থানান্তর কাজটির জন্য তারা যশোর থেকে রাজশাহী গেছেন।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক জানান, বিমানটি স্থানান্তরের মাধ্যমে ম্যুরাল নির্মাণের কাজ শুরু হলো। আগামী মাসের মধ্যেই স্ট্যান্ড নির্মাণ করে নতুন ফোরলেন সড়কের মুখে যুদ্ধবিমানটি প্রতিস্থাপন করা হবে।
‘মহানগরের রাজশাহী-নওগাঁ থেকে মোহনপুর, রাজশাহী-নাটোর সড়ক পূর্ব-পশ্চিম সংযোগ সড়ক নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রেলওয়ে ক্রসিংয়ের ওপর র্যামসহ ফ্লাইওভার নির্মাণ করছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। ২০২ দশমিক ৫০ মিটারের ফ্লাইওভার এবং ১২০ মিটার দৈর্ঘ্যের র্যাম নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯ কোটি ২৮ লাখ ৭৭ হাজার ৫৩২ টাকা। এর সঙ্গে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আলিফ-লাম-মিম ভাটা থেকে বিহাস পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার ফোরলেন সড়ক নির্মাণ হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৯
এসএস/আরবি/