ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে বসুন্ধরার ‘স্বপ্নের রাজ্যে একদিন'

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৯
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে বসুন্ধরার ‘স্বপ্নের রাজ্যে একদিন' বসুন্ধরার 'স্বপ্নের রাজ্যে একদিনে' সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা। ছবি: বাংলানিউজ

নারায়ণগঞ্জ: সবসময় অবহেলায়, কখনো অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটায় নারায়ণগঞ্জের হাজারও সুবিধাবঞ্চিত শিশু। পরিবার, সমাজ এমনকি পথে-ঘাটেও অবহেলা লাঞ্ছনাই যাদের নিত্যসঙ্গী, হঠাৎ করে একটু সুখ একটু আনন্দই বদলে দিতে পারে তাদের মন মানসিকতা। পাল্টে দিতে পারে তাদের প্রতি সমাজের ধারণা আর যোগায় তাদের জীবনের পথে সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা।

সমাজের এসব অবহেলিত শিশুদের নিয়েই বসুন্ধরা গ্রুপের বসুন্ধরা এলপি গ্যাস আয়োজন করেছিল একটি বিশেষ দিনের, যেখানে এসব শিশুদের দিনব্যাপী আনন্দ ও পেটভরে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পাশাপাশি সমাজের প্রতিষ্ঠিত মানুষদেরও আহ্বান করা হয়েছিল এসব শিশুদের পাশে দাঁড়াতে যেন তারাও সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে।

শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পঞ্চবটীতে ফ্যান্টাসি পার্ক অ্যাডভেঞ্চার ল্যান্ডে ‘স্বপ্নের রাজ্যে একদিন’ নামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।  ঢাকা শহরের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ‘ব্যাচ-থার্টিন’ এর সহায়তায় নারায়ণগঞ্জের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে দিনব্যাপী একটি ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনটি করেছে বসুন্ধরা এলপি গ্যাস।

অনন্য এ আয়োজনে পথশিশুদের সঙ্গে ছিল বাংলানিউজও। উৎসবের এ দিনটিতে প্রতিটি শিশুর চোখে মুখে ছিল অন্যরকম এক আনন্দের ছাপ। সবাই ছিল উচ্ছ্বসিত ও প্রাণচঞ্চল। সকাল থেকেই উপহার পেয়ে বিভিন্ন রাইডে চড়ে এক উৎসবের মুহূর্তে সবাই নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিল। কিছুক্ষণের জন্য জীবনের সবকিছু ভুলে স্বপ্নের রাজ্যে অন্য শিশুদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছিল তারা।

সকাল থেকেই প্রথমে ফুল ও চকলেট পাবার পর শুরু হয় উৎসব। উৎসবের মাঝে শিশুদের নিয়ে ট্রেনে চড়া, ঘোড়ায় চড়া, ওয়ান্ডার উইংসে রাইডিং, দোলনায় চড়া, পুরো পার্ক ঘুরে দেখা, মাছ দেখাসহ পার্কের নানাদিক তারা উপভোগ করে। প্রতিটি রাইডে উঠেই শিশুদের আনন্দের পাশাপাশি হই-হুল্লোড় উৎসবের উদ্দেশ্যকে সার্থক করে তুলেছে।

বিভিন্ন রাইডে চড়েছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা।  ছবি: বাংলানিউজ

দুপুরে খাবারের পর শিশুরা আবার পার্কের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে পার্কের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জেনেছে। এছাড়াও সকলেই পেয়েছে বিশেষ উপহার। এ আয়োজনের পুরোটা সময়ই বসুন্ধরা এলপি গ্যাস ছিল তাদের পাশে। বাচ্চারা এমন আনন্দের একদিন পেয়ে আবারও এমন দিনের প্রত্যাশা করেছে।

চাষাঢ়া রেলস্টেশনের শিশু টাইগার বলে, আমরা তো ছোটবেলা থেকে পথেই মানুষ হয়েছি। স্টেশনেই আমাদের দিন কাটে। এমন পার্কে আমরা আসবো কীভাবে আমাদের তো এখানে ঢুকতে দেবে না। কীভাবে আমরা এতো মজার মজার খেলনায় উঠবো। আজকে আমি অনেক খুশি এখানে এসেছি, খেলেছি, খেয়েছি, আর সারাদিন আনন্দ করেছি। অনেক অনেক মজা করেছি, ভালো লেগেছে।

আরেক শিশু রহমানি আঞ্জুমা বলে, আমরা পার্কে আসবো কীভাবে এমনিতেই আমাদেরকে সবাই টোকাই বলে। ভালো কোনো দোকানের সামনে দাঁড়ালেও বকে, আর এটা তো পার্ক এখানে কি আমাদের আসতে দেবে! কোনোদিন এক বেলা খাই কোনোদিন না খেয়ে থাকি। মা মানুষের বাড়িতে কাজ করে। বাবা একদিন কাজ পায়, আরেকদিন পায়না। আমরা তো খেতেই পাই না পার্কে আসবো কীভাবে। তাই আজকে এখানে এসে অনেক মজা করেছি সবার সঙ্গে। আমি অনেক খুশি, যদি মাঝে মধ্যে এভাবে আমাদের নিয়ে কেউ আসতো তাহলে আমাদেরও অনেক ভালো লাগতো।

এদিকে এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজের বিত্তবানদের এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান করা হয়েছে। আমাদের সমাজের আশেপাশের অনেক বিত্তবান আছে তারা যদি এসব শিশুদের পাশে এসে দাঁড়ায় তাহলে এদের জীবনে হয়তো আরেকটু সুন্দর ও সাজানো গোছানো হতো কিংবা তাদের ভাগ্যে জুটতো আক্ষরিক শিক্ষা।

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে আয়োজিত এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের হেড অব সেলস জাকারিয়া জালাল এবং এজিএম (সেলস) আতাউর রহমান। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের সেক্টর ‘এ’ এর ম্যানেজার (মিডিয়া ও পিআর) কাজী রােকন উদ্দিন, বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের ব্র্যান্ড ম্যানেজার সজীব রাজ বর্মণ, ‘ব্যাচ-থার্টিন’র ফাউন্ডার ফাহিম শাহরিয়ার আদর, কো-ফাউন্ডার ফাহিম চৌধুরী প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৯
এমআরপি/এফএম 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।