ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সন্ধ্যা হলেই হাতি, আতঙ্কে সীমান্তের মানুষ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৯
সন্ধ্যা হলেই হাতি, আতঙ্কে সীমান্তের মানুষ ছবি: বাংলানিউজ

জামালপুর: সন্ধ্যা নামলেই হাতি নেমে আসে জামালপুরের বকশীগঞ্জ সীমান্তে। বিচরণ করে পুরো সীমান্তে। বিশেষ করে নভেম্বর ও ডিসেম্বরের এই হাতির বিচরণ অন্যান্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি।

গত ১ সপ্তাহ ধরে ভারতীয় কাঁটাতারের বেড়া পাড়ি দিয়ে ৭০/৭৫টি বন্যহাতির পাল বাংলাদেশের সীমান্তে অবস্থান করছে। বন্যহাতির প্রবেশের কারণে বকশীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী কামালপুর ইউনিয়নের সোমনাথপাড়া, গাঢ়োপাড়া, টিলাপাড়া, যদুরচর, সাতানীপাড়া ও মীর্ধাপাড়াসহ ৬ গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নির্ঘুম রাত যাপনসহ হাতি আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পাহাড়ে অবস্থান করছে হাতির দল। প্রতিদিন সন্ধ্যায় এরা লোকালয়ে প্রবেশ করে চলতি আমন মৌসুমের ধান খেয়ে নিচ্ছে।

ভারতীয় হাতি প্রবেশ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে রয়েছে চরম ক্ষোভ। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে তাদের গেট খুলে দেওয়ায় হাতিগুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। পরে তারা সেই গেটটি বন্ধ করে দেয়।

সারারাত হাতির দল বাংলাদেশের জনবসতিতে তাণ্ডব চালিয়ে ভোরের দিকে আবারও ভারতে প্রবেশ করে। এ সময় বিএসএফ তাদের গেটটি খুলে দেয়।

কিন্তু এবার ব্যতিক্রম। গত সাতদিন ধরে ভারতীয় কাঁটাতারের বেড়ার পার্শ্বে গেটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে হাতিগুলো আর ভারতে প্রবেশ করতে পারছে না। তাতে দিনরাত সমানতালে তাণ্ডব চালাচ্ছে বন্যহাতির দল। এর মধ্যে ভারতের অভ্যন্তরে হাতির প্রবেশ বাঁধা দেওয়ার জন্য সীমান্তে ফ্লাড লাইটের ব্যবহারের পাশাপাশি উচ্চ ক্ষমতা ও আলো সম্মলিত বাতি ব্যবহার করছে ভারতীয় অংশের সাধারণ মানুষ।

প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসীরা জানান, প্রায় ৭দিন ধরে ভারতীয় বন্য হাতির দলটি সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের লোকালয়ে প্রবেশ করে। এদিকে হাতির তাণ্ডব ঠেকাতে স্থানীয় লোকজন জেনারেটর এর মাধ্যমে আলো ছড়িয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করছেন। কিন্ত তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় হাতি তাড়ানো সম্ভব হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল, সোলায়মান, রাশেদসহ অনেকেই জানান, হাতির দল তাড়ানোর জন্য আমাদের কোণো প্রশিক্ষণ নেই। কিছু বিদ্যুতিক তার ছড়ানো হয়েছে, কিন্তু বিদ্যুতের অভাবেই সেগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এছাড়া একটি জেনারেটর থাকলেও জ্বালানির অভাবে সেটিও অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে।

এদিকের সর্দার মিয়া, সবুজ মিয়া, খালেকসহ অধিকাংশ গ্রামবাসীরা জানান, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী গেট খোলার কারণেই এইসব হাতি বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। কিন্তু হাতি ফেরত যাওয়ার জন্য আর গেটগুলো খুলে না দেওয়ায় হাতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই থেকে যাচ্ছে। হাতি তাড়ানোর প্রস্তুতি সম্পর্কে এলাকাবাসী জানান, স্থানীয়ভাবে কেরোসিন তেলের মাধ্যমে গোলক, টিন দিয়ে শব্দ করে হাতি তাড়ানো হয়ে থাকলেও বর্তমানে এই পদ্ধতিও অকর্যকর হয়েছে। এখন হাতি গুলো আগুন দেখলেই আরও হিংস্র হয়ে তেড়ে আসে।

স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও হাতি তাড়ানোর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আ.স.ম জমশেদ খন্দকার হাতির অবস্থানের এলাকা পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের জানান, সীমান্ত এলাকায় মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ডিজেল সরবরাহ করেছি। এছাড়া উচ্চ শব্দের কিছু পটকা ও গোলক বিতরণ করা হয়েছে। স্থায়ীভাবে এর সমাধানের জন্য উচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৯
এমআরপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।