ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৯
এলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর জাতীয় পতাকা

ঢাকা: মহান বিজয়ের মাস, ডিসেম্বর শুরু হয়েছে। পাকিস্তানিদের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র সংগ্রাম করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল বাঙালিরা। ত্রিশ লাখ শহীদ আর দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হওয়ায় বাঙালি জাতির ইতিহাসে স্মরণীয়-বরণীয় এই মাস। বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করা হয় পুরো মাসটি। 

বাঙালি জাতির ইতিহাসে অনন্য গৌরবময় ডিসেম্বরে বিজয় অর্জনের পেছনে রয়েছে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত। পশ্চিম পকিস্তানের সামরিক জান্তাদের শোষণ-বঞ্চনা এবং বিমাতা সুলভ আচরণের শিকার হয়ে আসছিল বাংলার মানুষ।

 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন, স্বাধীনতা অর্জন ছাড়া বাঙালি জাতির ওপর অত্যাচার, নির্যাতন ও বঞ্চনার অবসান হবে না। তাই তিনি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে দীপ্তকণ্ঠে ঘোষণা দেন বাংলার স্বাধীনতার।  

‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’- ১৮ মিনিটের তার এই কালজয়ী ঘোষণার মধ্য দিয়ে মূলত সেদিন থেকেই শুরু হয় স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত অধ্যায়। বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। চলতে থাকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিও। এরই ধারাবাহিকতায় সংগঠিত হতে থাকে বাংলার মানুষ।  

প্রতিবাদী বাঙালিকে দমাতে পাকিস্তান বাহিনী একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পূর্ব পাকিস্তানে চালায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। ‘অপারেশ সার্চ লাইট’ নামে পরিচালিত ওই অভিযানে নিরস্ত্র মানুষকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। এর পরপরই রাতের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ।  

বাংলাদেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করেন। বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করা হয়। এই সরকার ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে শপথ গ্রহণ করে এবং মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে।  

স্বাধীনতার বিজয়ের ঠিক দু’দিন আগে ১৪ ডিসেম্বর জাতির ইতিহাসে অত্যন্ত বেদনা বিধুর একটি দিন। মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় যখন ঠিক সুনিশ্চিত তখনই পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা ১৪ ডিসেম্বর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের রাতের আঁধারে নির্মমভাবে হত্যা করে।  

দেশকে মেধাশূন্য করার অপচেষ্টা হিসেবে বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা হাতে নেয় পাকবাহিনী। এই হত্যাকাণ্ড ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম এক বর্বর ঘটনা যা বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষকে স্তম্ভিত করেছিল। এ দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে বাংলাদেশ।  

বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ও নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় ১৬ ডিসেম্বর। ওই দিন বিকেলে পাকিস্তানি বাহিনী রেসকোর্স ময়দানে মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। জাতি পায় স্বাধীন রাষ্ট্র, নিজস্ব পতাকা ও জাতীয় সংগীত। বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম ত্যাগ ও আপোষহীন নেতৃত্বে পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। ৩০ লাখ শহিদ এবং দুই লাখ মা-বোনের অসামান্য আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ।  

দীর্ঘ ৪৮ বছরে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার পথও মসৃণ ছিল না। বাংলাদেশ যখন ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী) ও শেখ রেহানা।  

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে দেশে সামরিক স্বৈরশাসন ও অগণতান্ত্রিক সরকারের উত্থান ঘটে। শেখ হাসিনা দীর্ঘ নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে প্রত্যাবর্তন করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলন শুরু করেন। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯৬ সালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে। পরে ক্ষমতার পালাবদলে আসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। এরপর আবারো ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে পুনরায় বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ।  

মাসের প্রথম দিনটি মুক্তিযোদ্ধা দিবস হিসেবে পালন করেন মুক্তিযোদ্ধারা। এছাড়া নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে পুরো মাস উদযাপিত হবে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান।  


বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৯
এসই/এসআইএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।