ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

তবুও সড়কে ফেরেনি শৃঙ্খলা

তামিম মজিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৯
তবুও সড়কে ফেরেনি শৃঙ্খলা

ঢাকা: নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কার্যকর হয়েছে। তারপরও ঢাকার সড়কে ফেরেনি শৃঙ্খলা। সড়কে শৃঙ্খলা না থাকায় হরহামেশা দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়কে লেন মেনে গাড়ি চালানোর দৃশ্য নেই, আছে শুধু প্রতিযোগিতা করে গণপরিবহন তথা বাস চালানোর দৃশ্য। সেই সঙ্গে সড়কের মাঝখানে যাত্রী উঠা-নামাও বন্ধ হয়নি।

যাদের প্রাণের বিনিময়ে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সূচনা, সেই শহিদ রমিজ উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজীবকে চাপা দেওয়া জাবালে নূর পরিবহনের বাসের চালকের রায় হচ্ছে রোববার (০১ ডিসেম্বর)।

২০১৮ সালের ২৯ জুলাই পাল্লা দিয়ে বাস চালাতে গিয়ে বিমানবন্দর সড়কে নির্মমভাবে এই দুই শিক্ষার্থীকে হত্যা করে জাবালে নূর পরিবহনের চালক।

বাসচাপায় শিক্ষার্থীদের এ হতাহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে ওইদিনই রাস্তায় নামেন রমিজ উদ্দিনসহ আশপাশের কয়েকটি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। রাজধানীসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এ আন্দোলনের ঢেউ। সারাদেশের রাস্তায় নামেন লাখো লাখো শিক্ষার্থী। সেখান থেকে সূত্রপাত হয় নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের।

তৎকালীন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবি ওঠে। রাস্তায় শৃঙ্খলা ফেরাতে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। গণপরিবহনসহ ব্যক্তিগত গাড়ির কাগজ চেক করাসহ সব ধরনের যানবাহনকে নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শুরুতে এ আন্দোলনে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নিলেও পরে যুক্ত হন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রথম কয়েকদিনের অহিংস এই আন্দোলনে পুলিশ বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বাধা না দেওয়া হলেও পরে পুলিশি বাধা আসে। হেলমেটধারীদের হামলার শিকার হন আন্দোলনকারীরা।

এরইমধ্যে ৬ আগস্ট মন্ত্রিসভায় একটি খসড়া ট্রাফিক আইনের অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ইচ্ছাকৃতভাবে গাড়ি চালিয়ে মানুষ হত্যায় মৃত্যুদণ্ড ও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে কারও প্রাণহানি ঘটালে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়। আন্দোলনকারীদের ৯ দফা দাবির মধ্যে কয়েকটি পূরণ ও বাকিগুলো পূরণের আশ্বাসে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।

শিক্ষার্থীরা ফিরে যান শ্রেণিকক্ষে। এতে ৮ আগস্টের মধ্যে ঢাকাসহ সারাদেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও ২ সিটি করপোরেশনের তরফে বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চলাকালেই ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। চলে ৫ আগস্ট থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত। সেপ্টেম্বরজুড়ে সচেতনতা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। এরপর ২৪ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পালন করা হয় ট্রাফিক সপ্তাহ। এসব উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও দৃশ্যমান পরিবর্তন খুব বেশি হয়নি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

চলতি বছর আবার নতুন করে ট্রাফিক আইন বিষয়ে সচেতনতা ও আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে লাগাতার কর্মসূচি হাতে নেয় পুলিশ। ১৫ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পালন করা হয় ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ। ১৭ মার্চ থেকে শুরু হয় ট্রাফিকের বিশেষ অভিযান, চলে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এরই মধ্যে ২৪ মার্চ থেকে ঢাকায় নামে স্পেশাল টাস্কফোর্স। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে কাজ করে ১০ মে পর্যন্ত।

এই বিশেষ উদ্যোগ চলাকালে ফিটনেসবিহীন গাড়ি, লাইসেন্স ছাড়া ড্রাইভিং কিংবা নবায়ন না করা, হেলপারের গাড়ি চালানো, অর্থাৎ ট্রাফিক আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মোটরসাইকেলে ৩ জন আরোহী, চালকের পাশাপাশি যাত্রীর হেলমেট ব্যবহার, সিগন্যাল না মানা, উল্টোপথে যাওয়া এবং প্রভাবশালীদের আইন না মানার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তারপরও সড়কে দৃশ্যমান উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকাল ১১টা। রাজধানীর প্রগতি সরণি এলাকা। রাইদা পরিবহনের দু’টি বাস দিয়াবাড়ি থেকে প্রগতি সরণি হয়ে রামপুরার দিকে যাচ্ছে। দেখা যায়, একটি অপরটিকে পেছনে ফেলার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। নতুন বাজার সড়কের মাঝ বরাবর থামে একটি বাস। পিছু পিছু আসা অন্যটি বাম পাশ দিয়ে আগে আসা বাসটির দরজার ঠিক সামনে এসে দাঁড়ায়। ফলে প্রথম বাস থেকে নামতে গিয়েও নামতে পারেন না বেশ কয়েকজন যাত্রী। দ্বিতীয় বাসটি যাত্রী উঠিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। প্রথম বাসটি মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়েই যাত্রী নামায় এবং দ্রুতগতিতে ছুটতে থাকে।

বেসরকারি সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির (এনসিপিএসআরআর) প্রতিবেদন অনুযায়ী, চালকদের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, দৈনিক চুক্তিতে চালক, কন্ডাক্টর বা হেলপারের কাছে গাড়ি ভাড়া দেওয়া, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগ, সড়কে চলাচলে পথচারীদের অসতর্কতাসহ ১০টি কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য সবচেয়ে বড় অংশীদার গণপরিবহনের মালিক ও চালকরা। তাদের আন্তরিকতায় ঘাটতি আছে। তাদের যে ভূমিকা রাখার কথা, সেটা দেখা যায় না। আরও বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। সরকারের এ সমস্যা সমাধানে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, পথচারী চলাচল ও চালকদের মধ্যে শৃঙ্খলা আনাটাই এই সময়ের বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা চালক ও পথচারীদের সচেতন করতে ক্যাম্পেইন করছি। এটা চলমান প্রক্রিয়া। ক্রমে অবস্থার উন্নতি হবে।

সার্বিকভাবে আগের তুলনায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে মনে করেন পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, সড়কে নিরাপত্তা আনতে মালিক-চালক-পথচারী সবাই জড়িত। সুতরাং আমরা কাজ করছি। নানা উদ্যোগ নিয়েছি, এটা চলমান থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৯
টিএম/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।