ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘জলবায়ু পরিবর্তনে বাস্তুচ্যুত হলে বিশ্বকে ভার নিতে হবে’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৯
‘জলবায়ু পরিবর্তনে বাস্তুচ্যুত হলে বিশ্বকে ভার নিতে হবে’

স্পেন, মাদ্রিদ থেকে: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের জনগণ বাস্তুচ্যুত হলে বিশ্ব সম্প্রদায় তাদের সামঞ্জস্য ও জীবিকা নির্বাহের ভার নেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, আমি সতর্ক করে বলছি, আমাদের স্থিতিস্থাপকতা এবং অভিযোজনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমাদের শুধু প্রাক-শিল্পায়ন লেভেলের চেয়ে এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি বন্ধ করতে হবে।

এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের জনগণ বাস্তুচ্যুত হলে সেটা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেখবে বলে আমি আশা করি। যেহেতু আমাদের জনগণ নিজেদের কোনো দোষে বাস্তুচ্যুত হবে না।

সোমবার (০২ ডিসেম্বর) স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে জেনারেল রাউন্ডটেবিলে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে স্থানীয় সময় সকালে ‘অ্যাকশন ফর সারভাইভাল: ভালনারেইবল নেশন্স কপ-২৫ লিডার্স’ শীর্ষক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন তিনি।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কর্ম পরিকল্পনা সরবরাহে ব্যর্থতার দায়ভার অবশ্যই প্রতিটি দেশকে সমানভাবে নিতে হবে। তবে যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বেশি দায়ী, তাদের অবশ্যই পরিণতি বেশি ভোগ করতে হবে। কেননা, জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের নিষ্ক্রিয়তার মূল্য প্রতিটি মানুষের জন্য ভয়াবহ।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে আমরা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমাদের সভ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বিশ্বকে ধ্বংস করছে। বাংলাদেশের মতো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য এটা একটি অস্তিত্ব হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দুই দিক থেকে লড়াই করছি। প্রথমত: কার্বন নিঃসরণ হ্রাস এবং এমনকি ভবিষ্যতে নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা। দ্বিতীয়ত: যেখানে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, সেখানে অভিযোজনের ব্যবস্থা নেওয়া। দুই দিক থেকে আমরা যদি ব্যবস্থা না নিই, তবে কয়েক মিলিয়ন মানুষের জীবন-জীবিকা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। একইসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত আন্তঃসরকারি প্যানেলের (আইপিসিসি) পঞ্চম মূল্যায়ন প্রতিবেদনে (এআর-৫) স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস বা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নিলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব চলমান শতাব্দীতে আরও তীব্রতর হতে থাকবে।
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সময় খুবই দ্রুত চলে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতম প্রভাব থেকে বাঁচতে ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিন হাউম গ্যাসের নিঃসরণ ৪৫ শতাংশ হ্রাসের মাধ্যমে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখা আমাদের জরুরি প্রয়োজন। আর ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব এড়াতে হবে।
 
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আকারে ছোট এবং জনসংখ্যা বিবেচনায় জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ বাংলাদেশের ওপর। ২০৫০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বার্ষিক জিডিপির দুই শতাংশ হারাবে এই জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির কারণে এবং ২১০০ সালে অবিশ্বাস্যভাবে এর পরিমাণ হবে নয় শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের ফলে বাংলাদেশের প্রায় ১৬৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশ বা ১৩৪ মিলিয়ন মানুষের জীবনমান হ্রাস পাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের ছয় দশমিক সাত শতাংশ বা ১৭১ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০৮০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে প্রায় ৪০ মিলিয়ন মানুষ গৃহহীন হবে। ইউনিসেফ গত এপ্রিলে প্রকাশ করেছিল যে, স্থিতিস্থাপকতা ও অভিযোজনে চমৎকার অগ্রগতি সত্ত্বেও, বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ছয় মিলিয়ন জলবায়ু অভিবাসী রয়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে। বাংলাদেশে ১৯ মিলিয়ন শিশু ইতোমধ্যে হুমকির মধ্যে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বন্ধ না করা হলে আমরা কখনই এসডিজি অর্জন করব না এবং দারিদ্র্য বিমোচন করতে পারব না।

তিনি আরও বলেন, কার্বন নির্গমনকারী দেশ না হওয়া এবং গুরুতরভাবে সীমাবদ্ধ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। বদ্বীপের চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ সামগ্রী নিয়ে নেদারল্যান্ডসের সহায়তায় বাংলাদেশ প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের ভিত্তিতে টেকসই বদ্বীপের জন্য কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করছে। এর জন্য দীর্ঘমেয়াদী কৌশল, নীতি ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ (ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০) তৈরি করেছে।

‘স্থানীয়ভাবে আমরা একটি জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট তহবিল প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা এখন পর্যন্ত প্রশমন ও অভিযোজনমূলক উদ্দেশে নিজস্ব সম্পদ থেকে ৪১৬ মিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় করেছি। আমরা দেশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে কম ঝুঁকিপূর্ণ করতে ১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করার পরিকল্পনা নিয়েছি। ’

বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৯
এমইউএম/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।