এ ঘটনায় সোমবার (০২ ডিসেম্বর) রাত ৯টায় মনোহরদী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ রানা ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) বজলু রহমানকে জেলা পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করেছেন পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার।
মৃত মুক্তিযোদ্ধা উপজেলার চরমান্দালিয়া ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ও পশ্চিম চরমান্দালিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোববার (০১ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টায় বার্ধ্যক্যজনিত কারণে নিজ বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম মারা যান। মৃত্যুর পর চরমান্দালিয়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার শহিদুল্লাহ উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানান। তখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে সোমবার (০২ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় জানাজা নামাজের সময় নির্ধারণ করে দেন। সে অনুযায়ী এলাকায় প্রচারণাও চালানো হয়। একঘণ্টা পর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মতিউর রহমান তারা মৃত মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে জানান সকাল ১১টায় জানাজা পড়ানোর জন্য।
সোমবার সকাল ১১টার আগেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কার্যালয়ের প্রধান অফিস সহকারী আব্দুল হালিম সেখানে উপস্থিত হন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে পুলিশের জন্য মরদেহ নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন মুক্তিযোদ্ধার পরিবার এবং জানাজায় আগত লোকজন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও থানা পুলিশের পক্ষ থেকে কেউ উপস্থিত না হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও স্থানীয় লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে সাড়ে ১১টার দিকে জানাজা শেষে মরদেহ দাফন করেন। জানাজা নামাযের নির্ধারিত সময়ের প্রায় একঘণ্টা পর সেখানে পুলিশ উপস্থিত হলে অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা এবং এলাকাবাসী পুলিশের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে নানা মন্তব্য করেন।
মৃত মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেমের ছেলে কামরুল ইসলাম বাবুল বাংলানিউজকে বলেন, বাবার মৃত্যুর পর উপজেলা প্রশাসন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জানানো হলে তাদের নির্ধারণ করে দেওয়া সময় মতো আত্মীয়-স্বজন, মুক্তিযোদ্ধা এবং এলাকাবাসী উপস্থিত হন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের ৩৩ মিনিট পরেও পুলিশের পক্ষ থেকে কেউ না আসায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়া বাবাকে দাফন করা হয়েছে।
চরমান্দালিয়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার শহিদুল্লাহ বলেন, আবুল হাসেমের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পরই আমি উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। জানাজা নামাজের নির্ধারিত সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা এবং এলাকাবাসী উপস্থিত থাকলেও পুলিশের কোনো লোক উপস্থিত না থাকায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই মরদেহ দাফন করতে হয়েছে।
মনোহরদী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাফিয়া আক্তার শিমু বলেন, বিজয়ের মাসে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে শেষ বেলায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে না পারা খুবই দুঃখজনক।
মনোহরদী থানার ওসি মনিরুজ্জমান বাংলানিউজকে বলেন, জেলা পুলিশ লাইন্স থেকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ার জন্য বিউগল আনতে দেরি হয়। যে কারণে সময় মতো জানাজায় উপস্থিত হতে পারেনি পুলিশ। এ বিষয়ে আমরা মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এবং স্থানীয়দের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি।
আবুল হাসেম মনোহরদী উপজেলার তালিকাভুক্ত একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ এবং নিজ এলাকায় মুক্তিযোদ্ধে অংশ নেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৯
এনটি