ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দুর্যোগ সহনীয় বসতঘর নির্মাণে অনিয়ম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৯
দুর্যোগ সহনীয় বসতঘর নির্মাণে অনিয়ম

লালমনিরহাট: সুবিধা ভোগীদের কাঠ, রড, বাঁশ ও বালু নিয়ে দুর্যোগ সহনীয় বসতঘর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাটের এক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। তালিকায় নাম নিতেও গুনতে হয়েছে হাজার হাজার টাকা। পাশাপাশি শ্রমিকদের খাওয়ার দায়িত্বও নিতে হয়েছে দুস্থ সুবিধাভোগীদের। 
 

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুস্থ ও অসহায় ভূমিহীন (যার ১০ শতাংশের নিচে জমি) পরিবার থেকে সুবিধাভোগীদের তালিকা করা। এ তালিকায় নাম তুলতে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৫-৪০ হাজার পর্যন্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে।

এমনকি টাকার বিনিময়ে এলাকার ধনী পরিবারের নামও তালিকায় উঠানো হচ্ছে।  

জানা যায়, সুবিধাভোগীদের জন্য সামনে বারান্দাসহ দুই রুম বিশিষ্ট একটি ঘর, করিডোর, রান্নাঘর, টয়লেট নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয় জনপ্রতি দুই লাখ ৫৮ হাজার ৫৩১ টাকা। এ প্রকল্পের তালিকা প্রণয়নে আত্মীকরণ ও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বসুনিয়া স্বপনের বিরুদ্ধে। এ তালিকায় চেয়ারম্যান তার চাচা আনোয়ার হোসেন বসুনিয়া ও চাচি আফরোজা বেওয়ার নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

দুর্যোগ সহনীয় বসতঘর নির্মাণে নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরেন মরিয়ম।  ছবি: বাংলানিউজ

মহেন্দ্রনগর ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বসুনিয়া স্বপনের চাচা সুবিধাভোগী ধনজঞ্জয় গ্রামের আনোয়ার হোসেন বসুনিয়া বাংলানিউজকে বলেন, তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়ারম্যাকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। অন্যদের কাছে আরো বেশি টাকা নিয়েছে। ঘর নির্মাণ শুরু হলে কাজের বালু, রড, ছাউনির কাঠ, বাঁশ নিজেকে সরবরাহ করতে হয়েছে। এছাড়াও শ্রমিকদের দুই বেলা ভাত খাওয়াতে হয়েছে। সরকারিভাবে শুধু ইট, টিন, সিমেন্ট ও শ্রমিক মজুরি সরবরাহ করা হয়েছে। এসব না দিলে কাজ বন্ধ রাখা হয়।

সুবিধাভোগী আনোয়ার হোসেন বসুনিয়ার স্ত্রী মরিয়ম বেগম বাংলানিউজকে বলেন, কাজ শুরু করেই বালু, রড, কাঠ দাবি করেন। না দিলে কাজ বন্ধ রাখেন চেয়ারম্যান। বাধ্য হয়ে দুই এনজিও থেকে ৬৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে এসব সরবরাহ করেছি। নামে সরকারি ঘর, বাস্তবে এ ঘর পেতে প্রায় লাখ টাকা গুনতে হচ্ছে।

একই গ্রামের অপর সুবিধাভোগী আফরোজা বেওয়ার ছেলে বেসরকারি একটি ফার্মের প্রকৌশলী হলেও টাকা নিয়ে তার নাম দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান স্বপন। এমনটাই জানান আফরোজা বেওয়া।

দুর্যোগ সহনীয় বসতঘর নির্মাণে নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরেন আনোয়ার হোসেন।  ছবি: বাংলানিউজ

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিম্নমানের ইট দিয়ে করা হচ্ছে ঘর। বারান্দা ও করিডোরে ইটের পিলার দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে জিআই তারের তৈরি করা বাজারের নিম্নমানের পিলার। দরজা জানালায় দেওয়া হচ্ছে নিন্মমানের কাঠ।  

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বসুনিয়া স্বপন বাংলানিউজকে বলেন, টাকার বিনিময়ে বা আত্মীকরণে নয়, মানবতার পরিচয় দিতে নামগুলো দেওয়া হয়েছে। কাজের অনিয়ম মনে হলে ইউএনওকে অভিযোগ করেন। যা করার তিনি করবেন।

আদিতমারী উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মফিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বালু বা রড ইস্টিমেটে ধরা নেই, তাই সুবিধাভোগীদের কাছে নিতে পারে। তবে কাঠ, বাঁশ, কাজের বালু ও খাওয়ার খরচ নেওয়া ঠিক হয়নি। সার্বিক বিষয়ে খোঁজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা আলী হায়দার বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম পর্যায়ে ২৭৫টি ঘর নির্মাণের বরাদ্দ এসেছে। যার কাজ এখনো চলছে। পরে আরো নতুন ৩৩০টি ঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্দ এসেছে। তবে সুবিধাভোগীদের কাছে কোনো কিছু সরবরাহ নেওয়া অন্যায়। ঘর নির্মাণে সব খরচ সরকার বহন করছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৯
কেএএস/পিএস/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।