ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ার ইমেরিটাস স্যার ফজলে হাসান আবেদ বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবী থেকে অতিদারিদ্র্য নির্মূলের যে অঙ্গীকার করা হয়েছে, সেই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে বাকি ১০ বছরে আমাদের সবাইকে আরও জোরদার ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি বলেন, ব্র্যাক সবসময়ই বড় আকারে কর্মসূচি পরিচালনা করে বহু মানুষের মধ্যে তার কাজের প্রভাব ছড়িয়ে দিতে চেয়েছে।
ব্র্যাকের বৈশ্বিক কর্মকৌশলের তিনটি মূল লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী অন্তত ২৫ কোটি মানুষ যাতে নিজেদের জীবিকার সংস্থান করতে পারে সেজন্য তাদের সক্ষম করে তোলা, এর মধ্যে অন্তত ৩০ শতাংশ মানুষকে একের অধিক উদ্যোগের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা এবং বৈশ্বিক উন্নয়ন পরিমণ্ডলে উদ্ভাবন ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ে নেতৃত্ব দেওয়া।
ব্র্যাকের বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জনে ও এ সংক্রান্ত কর্মকৌশল বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য ব্র্যাক তার গ্লোবাল বোর্ড গঠন করেছে। যেখানে প্রাথমিকভাবে তিনজন সদস্য মনোনীত হয়েছেন। ব্র্যাক যাতে তার লক্ষ্য অর্জনে সঠিক পথে এগিয়ে যেতে পারে সেজন্য স্বচ্ছ দিকনির্দেশনা নিশ্চিত করাই গ্লোবাল বোর্ডের প্রধান দায়িত্ব হবে।
ব্র্যাকের বিদ্যমান বোর্ড এবং পরিচালন কাঠামোতে আপাতত কোনো পরিবর্তন ঘটছে না। ব্র্যাকের রূপকল্প বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাপী অনুসৃত ‘ওয়ান ব্র্যাক’ ধারণাকে সুসংহত করতে ভবিষ্যতে গ্লোবাল বোর্ডের পক্ষ থেকে প্রয়োজনবোধে এর পরিচালন পদ্ধতি ও কার্যক্রম পর্যালোচনা করে যথাযথ নির্দেশনা দেওয়া হবে।
ব্র্যাক গ্লোবাল বোর্ডের চেয়ারের দায়িত্ব পালন করবেন ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের সুপারভাইজরি বোর্ডের বর্তমান চেয়ার আমিরা হক। তিনি ইতোমধ্যে জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্ড সাপোর্টের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল (২০১২-২০১৪) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৯ সাল থেকে অবসর গ্রহণের আগ পর্যন্ত তিনি জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেই সময়ে তিনি ছিলেন জাতিসংঘে জ্যেষ্ঠতম পদে কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিক।
ব্র্যাকের বর্তমান চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান গ্লোবাল বোর্ডের সিনিয়র ট্রাস্টি হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। তিনি একজন স্বনামধন্য গবেষক, অর্থনীতিবিদ এবং নেতৃস্থানীয় নীতিনির্ধারক। ২০০৮ সালে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিক্ষা ও বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। খ্যাতনামা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) তিনি প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক।
বোর্ডের তৃতীয় সদস্য হলেন লর্ড মার্ক ম্যালক ব্রাউন কেসিএমজি। কফি আনান জাতিসংঘের মহাসচিব থাকাকালে তিনি ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এবং চিফ অফ স্টাফ হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন সংস্থাটিতে। এর আগে তিনি ইউএনডিপির প্রশাসক হিসেবে বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘ পরিচালিত উন্নয়ন উদ্যোগে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পরে তিনি যুক্তরাজ্যে গর্ডন ব্রাউন সরকারের আফ্রিকা ও এশিয়া বিষয়ক পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হন।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ এবং ব্র্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক ডা. মুহাম্মাদ মুসা গ্লোবাল বোর্ড গঠনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। ব্র্যাকের কার্যক্রমের প্রভাবকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে তারা উল্লেখ করেন।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠার পর ব্র্যাক বর্তমানে এশিয়া ও আফ্রিকার ১১টি দেশে ১০ কোটিরও বেশি মানুষের মধ্যে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর কার্যক্রমভুক্ত দেশগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ফিলিপাইন, নেপাল, মিয়ানমার, লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিয়ন, দক্ষিণ সুদান, তানজানিয়া, উগান্ডা ও রুয়ান্ডা। এর পাশাপাশি চরম দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ব্র্যাকের আলট্রা পুওর গ্র্যাজুয়েশন মডেল বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশের সরকার, বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
আমিরা হক বলেন, ব্র্যাক গ্লোবাল বোর্ডের চেয়ারের দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পাওয়া এবং ব্র্যাকের মতো একটি জনকল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠানের কাজের ধারার সঙ্গে একাত্ম হতে পারা আমার জন্য অত্যন্ত সম্মানের ও গর্বের। আমাদের লক্ষ্য, এ পর্যন্ত অর্জিত অভিজ্ঞতা এবং পরীক্ষিত পদ্ধতিগুলো দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে কার্যকরভাবে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া এবং এর মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গতিসঞ্চার করা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৯
টিএ