ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সত্য বললে সরকারের ঘাড়ে যাবে: শাজাহান খান 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৯
সত্য বললে সরকারের ঘাড়ে যাবে: শাজাহান খান  অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। ছবি: বাংলানিউজ

নারায়ণগঞ্জ: সত্য কথা বললে তা সরকারের ঘাড়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। সত্য না বলে তার বদ হজম হয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, এখন কিছু সত্য না বললে জনগণের গালি খেতে হবে।

সড়কে দুর্ঘটনা ও সড়ক নিরাপত্তা আইন নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরেই অনেক কিছু হজম করেছি। এখন বদ হজম হয়ে গেছে।

সেজন্য কিছু সত্য কথা বলতে হবে। তবে সত্য বললে সরকারের ঘাড়ে যাবে, নয়তো বিআরটিএর ঘাড়ে যাবে। আর না বললে আমরা পাবলিকের গালি খাবো। ’ 

রোববার (০৮ ডিসেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে চালকদের উন্নত প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  

শাজাহান খান বলেন, একটা কথা আছে- যত দোষ নন্দঘোষ, সড়কে অ্যাক্সিডেন্ট হলেই দোষ ড্রাইভারের। একসময় দেখছি সড়কে অ্যাক্সিডেন্ট হলেই প্রেসক্লাবের সামনে আমার কুশপুতুল পোড়ানো হতো। অ্যাক্সিডেন্ট হলেই নাকি শাজাহান খান দায়ী! 

‘কী কারণে? আমি নাকি, আপনাদের (চালক) প্রশ্রয় দিই, আশকারা দিই। আমি বুঝলাম না, আমি কীভাবে আশকারা দিলাম?’

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বলেন, এত বছর ড্রাইভার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে উঠলো না কেন? এত বছরে বিআরটিএ-এর মাধ্যমে সারাদেশে ড্রাইভার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়নি কেন? বলা হচ্ছে- ১৩৫ টি ইনস্টিটিউট আছে, আমার জানা মতে, ১২০/১৩০ টার মতো হবে চালু আছে। এর মধ্যে আমাদের নির্দেশক আছেন ১২৮ জন। ১৩৫ টি ইনস্টিটিউট থাকলে ১২৮ জন দিয়ে চলে কীভাবে? সুতরাং তথ্যটি সঠিক নয়।  

নিরাপদ সড়ক চাই-এর প্রধান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইলিয়াস কাঞ্চনকে আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই- আপনি যে দেশ-বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা এনজিও এর নামে এনেছেন, তা দিয়ে কয়টা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন? সেখানে কতজন ড্রাইভারকে ট্রেনিং দিয়েছেন?

‘সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী গঠিত কমিটির সভাপতি ছিলাম আমি। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা ১১১ টা সুপারিশ তৈরি করে জমা দিই। সেই সুপারিশের অংশবিশেষ-ই এখন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করলে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ দুর্ঘটনা কমে যাবে। ’

চালকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে তিনি বলেন, ড্রাইভার তৈরি করার দায়িত্ব কার? ড্রাইভারের নিজের? এটা কী শ্রমিক ইউনিয়নের, মালিক সমিতির? না... এ দায়িত্ব সরকারের। সরকার ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করতে পারে, ডাক্তার তৈরি করতে পারে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালো ছাত্র তৈরি করতে পারে, যাদের পেছনে অর্থ খরচ করে, ভর্তুকি দেয়।

‘কিন্তু ড্রাইভার তৈরির জন্য কোনো ভর্তুকি আছে? নাই। তাহলে আজকে কেন বড় বড় গলায় একেকজন কথা বলবেন? দেখবেন না, সমস্যাটা কোথায়? সমস্যার মূলে যেতে হবে। ’

শ্রমিকনেতা শাজাহান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতদিন পর এসে শুরু করেছেন, ড্রাইভারদের জন্য ফ্রি ট্রেনিং ও ফ্রি লাইসেন্সের; তবে এটা কেবল প্রাথমিক পর্যায়ে। তাদের জন্য ৪ মাসের জন্য ৯ হাজার টাকা ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে।  

‘এত সরকার এলো-গেলো কেউ-ই তো এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এতদিন তো এটা ছিল না, একথা তো এতদিন কেউ বলেননি। ’ 

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, মাঝে মাঝে জাল টাকা ছাপানোর মেশিন, জাল পাসপোর্ট ছাপানোর মেশিন ধরা পড়ে, আপনারা কী কেউ বলতে পারবেন-ভুয়া লাইসেন্স ছাপানোর মেশিন কখনও ধরা পড়েছে? 

‘কারা ধরবে? বিআরটিএ-এর মাঝেই তো এসব লোক মুখ লুকিয়ে রয়েছে। সেখানেই যদি এসব লোক মুখ লুকিয়ে থাকে তাহলে এদের ধরবে কারা? বিষয়টাকে একটা শৃঙ্খলায় আনতে হলে অবশ্যই জাল লাইসেন্সধারীদের প্রথমে ধরতে হবে। ’

সাবেক নৌমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কমিটির দেওয়া ১১১ টি সুপারিশের মধ্যে সাতটি বিষয়ের ওপর আমরা অধিক গুরুত্ব দিয়েছি। এর মধ্যে সচেতনতা ও দক্ষতা অন্যতম। বিআরটিএ-এর দক্ষতা বাড়াতে হবে, জাল লাইসেন্স দেবে না, ঘুষ খাবে না-এসবও নিশ্চিত করতে হবে। ’

‘ট্রাকের বড় বড় বাম্পার কোন আইনে আছে, দিলো কেমনে, কে দিলো? বিআরটিএ দিয়েছে। এগুলো আমরা এখন বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু এত বছর থাকলো কীভাবে? এখানেই বিআরটিএ-এর কাহিনী। দরকার সক্ষমতা, পর্যাপ্ত জনবল। ’

বিআরটিএ-এর লোকবল সঙ্কটের কথা তুলে ধরে শাজাহান খান বলেন, বিআরটিএ-তে কম করে হলেও ৩ হাজারের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারী দরকার। কিন্তু উনাদের আছে মাত্র ৮২৩ জন। এ জনবল দিয়ে বিআরটিএ কীভাবে চলবে?

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান কামরুল আহসান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান এহছানে এলাহী,  বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সহকারী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী, ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টারের চেয়ারম্যান নূর নবী শিমু প্রমুখ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৯
আরআইএস/এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।