খুলনার খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের বিআইডিসি রোডে আমরণ অনশনরত স্টার জুট মিলের শ্রমিকদের বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে দেখতে গেলে সুলতানের এমন করুণ অবস্থা দেখা গেছে। প্রচণ্ড শীত ও ক্ষুধায় অনেকটা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন সুলতান।
সুলতান বলেন, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যদি চাকরি করে টাকা পয়সা না পাই, তাহলে অনশনে মরাও ভালো। মজুরি নেই, ঘরে চাল-ডাল-তেল নেই। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসার নিশ্চয়তা নেই। পরিবারে চলে হাহাকার। এভাবে কি জীবন চলতে পারে?
একই মিলের শ্রমিক এম এ রাজু তার বুকে প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে রেখেছেন, ‘আমি একজন শ্রমিক। রক্ত দেব, জীবন দেব, তবু আমাদের সব দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবো না, ফিরবো না, ফিরবো না ইনশাআল্লাহ। ’
প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক প্রান্ত বলেন, কাঁথা-বালিশ নিয়ে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) রাত কাটিয়েছি অভুক্ত থেকে। বুধবার রাতও চলে এসেছে। কিন্তু আমাদের সমস্যার সমাধান হয়নি। আমরা হয়তো এভাবে আন্দোলন করতে করতেই মারা যাবো।
একই সড়কে সামিয়ানা টানিয়ে ক্রিসেন্ট ও দৌলতপুর জুট মিলের শ্রমিকরা আমরণ অনশন করছেন। এসব স্থানে অনশনরত শ্রমিক মো. আহাদ আলী, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. শাহাবুদ্দিন, আবুল খায়ের হেমায়েত, মো. হিরন, মো. সাজেদুল ইসলাম ওসিম, মো. জব্বার হাওলাদার, আব্দুল সত্তার, আবুল হোসেন হারুন, কাওসার, জাগাঙ্গীর, তৌয়েব আলী, মন্টু, খুকি, রেহেলাসহ আরও অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদের স্যালাইন দিতে দেখা গেছে।
এদিকে অনশন কর্মসূচির কারণে পাটকলগুলোতে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। একইসঙ্গে বন্ধ রয়েছে বিআইডিসি সড়কের দোকানপাটও। পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলনে খুলনার শিল্পাঞ্চল উত্তাল হয়ে পড়েছে। অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে গোটা শিল্পাঞ্চলে।
রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ডাকে খুলনা অঞ্চলের মোট রাষ্ট্রায়ত্ব ৯টি পাটকলের শ্রমিকরা অনশন পালন করছেন। এর মধ্যে খুলনায় রয়েছে সাতটি ও যশোরে রয়েছে দু’টি পাটকল। খুলনায় থাকা পাটকলগুলো হলো ক্রিসেন্ট জুট মিল, খালিশপুর জুট মিল, দৌলতপুর জুট মিল, প্লাটিনাম জুট মিল, স্টার জুট মিল, আলিম জুট মিল ও ইস্টার্ন জুট মিল। যশোরের দু’টি জুট মিল হলো- কার্পেটিং ও জেজেআই।
রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান বুধবার বিকেল ৫টার দিকে বাংলানিউজকে বলেন, আমরণ অনশনে প্রায় অর্ধশত শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এদের মধ্যে ১৫/১৬ জনকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ফুলতলা হাসপাতাল ও পথের বাজার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের অনশনস্থানে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. মুরাদ হোসেন বলেন, শ্রমিকরা মজুরি না পাওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তারা তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ, ঘরভাড়া দিতে পারছেন না। এ অবস্থায় বাধ্য হয়েই আন্দোলনে নেমেছেন। সব সেক্টরে মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন হলেও পাটকল শ্রমিকদের বেলায় অনীহা করা হচ্ছে। মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, পাটখাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ও পিপিপি বাতিলসহ ১১ দফা দাবিতে আমরা আন্দোলনে নেমেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ আমরণ অনশন চলবে।
বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের সমন্বয়কারী বনিজ উদ্দিন মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। শ্রমিকদের বকেয়া একশ’ কোটি টাকা মজুরি দেওয়া হয়েছে। এখন শ্রমিকরা মজুরি কমিশন নিয়ে আন্দোলন করছেন।
মজুরি কমিশন দ্রুত বাস্তবায়ন হতে পারে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা তো আমি বলতে পারবো না। এটা মন্ত্রণালয় ও সরকারের নীতি-নির্ধারকদের ব্যাপার।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৯
এমআরএম/এফএম