ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গাজীপুরে ডায়রিয়ার প্রকোপ, একজনের মৃত্যু 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৯
গাজীপুরে ডায়রিয়ার প্রকোপ, একজনের মৃত্যু 

গাজীপুর: সম্প্রতি গাজীপুর সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। গত ৫ দিনে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিন শতাধিক ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

এরই মাঝে ডায়রিয়ায় ভুগে এক রোগীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। যদিও ডায়রিয়ায় এ পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর ছড়িয়েছে।

কিন্তু সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।  

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় ভূষণ দাস জানান, গত ৮ ডিসেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩০৬ জন ডায়রিয়া রোগী সে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। বর্তমানে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ৯৪ জন ভর্তি রয়েছে। এদের মধ্যে ১০ ডিসেম্বর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সামন্তপুর এলাকার নুরুল ইসলাম (৫৫), ছোট দেওড়া এলাকার মোজাম্মেল হক (২২), মজিদ (৪০) ও চা বাগান এলাকার ফিরোজকে (২৩) ঢাকার কলেরা হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।  

এ চিকিৎসক জানান, কলেরা জীবাণুবাহিত পানি ছাড়াও আবহাওয়ার পরিবর্তন, খাবারের দূষণ, ড্রেনের নোংরা পানি থেকে ডায়রিয়া বিস্তার লাভ করতে পারে। বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা থেকে জাতীয় রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা সংস্থার ডায়রিয়া আউটব্রেক ইনভেস্টিগেশন টিমের সদস্য ডা. দেবাশিষ কুমার সাহা, অনুপম সরকারসহ ৬ সদস্যের একটি টিম শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ডায়রিয়া আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শণ এবং রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা আক্রান্ত এলাকার পানির স্যাম্পলও নিয়ে গেছেন।  

পূর্ব চান্দনা এলাকার বাসিন্দা মো. হাসান আলী জানান, তার শ্যালকের বউ সুমা আক্তার ৯ ডিসেম্বর ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়। পরে তাকে গত মঙ্গলবার তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে ঢাকার কলেরা হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে ঢাকায় যাওয়ার পথে সন্ধ্যায় সুমা আক্তার মারা যান।  

ঢাকা কলেরা হাসপাতালে পাঠানো রোগীদের ব্যাপারে এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা জানান, ছোট দেওড়া এলাকার আব্দুল মজিদ তার স্ত্রী, মেয়ে ও বাড়ির আরও কয়েকজন সিটি করপোরেশনের সরবরাহ করা পানি পান করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। পরে তাদের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে মজিদকে ১০ ডিসেম্বর ঢাকার কলেরা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া একই এলাকার মোজাম্মেল হক ৯ ডিসেম্বর দুপুরে জয়দেবপুর বাজারের হোটেলে ভাত খেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন বলে জানান তারা। পরেরদিন তাকে তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকেও ঢাকা কলেরা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।  

সিটি করপোরেশনের পানি দূষিত, এমন অভিযোগের ব্যাপারে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী (পানি) মো. নজরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, তাদের সরবরাহ করা পানি দূষিত হওয়ার মতো কোনো ঘটনা নেই, যা থেকে ডায়রিয়া হতে পারে। এরপরও তা নিশ্চিত হতে পানির নমুনা পরীক্ষা করতে ঢাকায় পাঠানো হবে। তবে বিশেষ কোনো এলাকায় পানি সংরক্ষণের ট্যাঙ্ক থেকে পানি দূষণের মতো ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানান তিনি।   

সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য অফিসার ডা. মো. রহমত উল্লাহ জানান, সিটি করপোরেশনের পূর্ব চান্দনা ও কাজীবাড়ি এলাকার লোকজন ডায়রিয়া আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে ওই এলাকার সোর্স লাইনের পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আগামী রোববার নাগাদ এর ফলাফল পাওয়া যাবে। এরই মাঝে ওই এলাকায় নাগরিকদের মাঝে ৫ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ২০ হাজার প্যাক স্যালাইন সরবরাহ করা হয়েছে। পানি ফুটিয়ে পান করাসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।  

এদিকে এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্যবিভাগের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিটি পরিবারে ১০টি স্যালাইনের প্যাকেট ও পানি বিশুদ্ধকরণের ট্যাবলেট বিতরণ করছে। আরও ৫০ হাজার ট্যাবলেট ও ২০ হাজার প্যাক স্যালাইন মজুত রয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।  

বাংলাদেশ সময়: ২২০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৯ 
আরএস/এইচজে 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।