বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন। তিনি জানান, ডা. মারুফ হোসেন নয়নের মৃত্যুতে কোনো ধরনের গাফিলতি ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখবে এ তদন্ত কমিটি।
তিনি আরো জানান, হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. জসীম উদ্দিন হাওলাদারকে প্রধান করে চার সদস্যের ওই কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।
কমিটির বাকী সদস্যরা হলেন, অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. শফিকুল ইসলাম, মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ইমরুল কায়েস ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মাশরেকুল ইসলাম।
শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যার কারণে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ও ডায়বেটিক হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মারুফ হোসেন নয়ন গত ১০ ডিসেম্বর শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হন। পরের দিন সকালে তার অবস্থার অবনতি হলে কৃত্রিমভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস দেয়ার জন্য আইসিইউ ইউনিটে নেয়া হয়।
স্বজনদের অভিযোগ, তাকে ওই ইউনিটে নেয়ার পর কৃত্রিম উপায়ে শ্বাসপ্রশ্বাস দেয়ার সবকয়টি যন্ত্র অর্থাৎ ভেন্টিলেটর মেশিন নষ্ট থাকায় তা আর সম্ভব হয়নি। পরে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বললে দ্রুত তাকে ওয়ার্ড থেকে ঢাকায় নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু এরআগেই তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন প্রয়াত চিকিৎসকের বাবা মোশারেফ হোসেন।
নয়নের মৃত্যুতে চিকিৎসক সমাজের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হলে তদন্ত কমিটি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি শোক জানিয়েছে স্থানীয় বিএমএ ও স্বাচিপসহ বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন।
অভিযোগ উঠেছে, দুই বছরের ব্যবধানে ১০ ভেন্টিলেশন মেশিন নষ্ট হলেও একটিও মেরামতের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এতো অল্প সময়ে মেশিনগুলো নষ্ট হওয়ার পেছনে কারো হাত ছিলো কিনা তাও খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে।
এ বিষয়ে হাসপাতাল পরিচালক জানান, ভেন্টিলেটর মেশিন নষ্ট হওয়ার বিষয়ে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে আগে থেকেই জানিয়ে আসা হচ্ছে। মেশিন সরবরাহকারী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা একবার এসে তিনটি ভেন্টিলেটর সচল করে দিয়ে যান। কিন্তু কিছুদিন পরে তা আবার বিকল হয়ে পড়ে। আর আইসিইউ’র বর্তমান অবস্থাও কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে, যাতে দ্রুত এর সমাধান ঘটে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শেবাচিম হাসপাতালের পূর্ব দিকের নতুন দ্বিতল ভবনের নিচতলায় ২০১৭ সালের ২৩ জুলাই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) চালু করা হয়। ইউনিটটি চালুর সময় থেকেই রোগীদের জন্য ১০টি আইসিইউ বেড, ১০টি বড় আকারের ভেন্টিলেটর মেশিন, তিনটি ছোট আকারের ভেন্টিলেটর ও মনিটর সরবরাহ করা হয়। কিন্তু একে একে সবকয়টি ভেন্টিলেটর মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে এখানে আসা মুমূর্ষু রোগীদের চলে যেতে বলা হয় ঢাকায়। আর গোটা দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র বিভাগীয় এ হাসপাতাল ছাড়া আর কোথায় আইসিইউ ইউনিট না থাকায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মুমূর্ষু রোগীদের মৃত্যুর শঙ্কা রয়েছে।
ওয়ার্ডটির দায়িত্বরত সাবেক ও বর্তমান সেবক-সেবিকারা বাংলানিউজকে বলেন, গত ২ অক্টোবর আইসিইউ’র নতুন নার্সিং ইনচার্জ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ওইদিন তিনি ১০টির মধ্যে দুইটি ভেন্টিলেটর মেশিন সচল অবস্থায় পান। তার দায়িত্ব নেওয়ার এক মাস পর আরও একটি ভেন্টিলেটর মেশিন নষ্ট হয়ে যায় এবং সর্বোশেষ ১০ ডিসেম্বর বাকী একটিতেও যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে এখন এ ওয়ার্ডটিতে রোগীর সেবা প্রদান একরকম বন্ধই রয়েছে।
স্বয়ংসম্পূর্ণ আইসিইউ’র জন্য সময়ের তাগিদে এখন যেমন ইলেকট্রিক ভেন্টিলেশন মেশিন, উন্নতমানের মনিটর (যেখানে হার্টবিট, ব্লাড প্রেসার, ফুসফুসের-লিভারের কার্যকারিতা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ সম্ভব) প্রয়োজন; তেমনি এজিবি মেশিন, ইলেক্ট্রোলাইট পর্যবেক্ষণ মেশিন, পোর্টেবল এক্সরে, পোর্টেবল আল্ট্রাসনোগ্রাম, পোর্টেবল ভেন্টিলেটর মেশিনেরও প্রয়োজন রয়েছে।
পাশাপাশি আইসিইউ রুম বা এর পাশেই ডায়ালাইসিস ফ্যাসিলিটেট রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং মেশিন, সিটি স্ক্যান, ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিন থাকা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
অপরদিকে ওয়ার্ডটিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবক-সেবিকা ছাড়া চিকিৎসক নিয়েও রয়েছে সংকট। ওয়ার্ডটিতে কমপক্ষে ১০ জন চিকিৎসক প্রয়োজন থাকলেও রয়েছেন মাত্র একজন। অধ্যাপক থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও মেডিক্যাল অফিসার কোনো পদেই নেই চিকিৎসক।
বাংলাদেশ সময়: ০২১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৯
এমএস/এমআইএইচ/এমএমএস