অপরদিকে ভিক্ষাবৃত্তি করেন ষাটোর্ধ মনোয়ারা, কাঞ্চন, হাওয়া বেগমসহ অনেকেই। আবার স্টেশনের দিনমজুর ও হকারি করেন বাবলু মিয়া ও কালু শেখরা।
ছিন্নমূল এসব মানুষের মূল ঠিকানা রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্ম। এটাই তাদের বাড়ি এটাই তাদের ঘর। দিনভর নিজ নিজ পেশায় ব্যস্ত থাকেন। সন্ধ্যায় ফিরে আসেন ওই প্ল্যাটফর্মে।
চলমান টানা শৈত্যপ্রবাহে সচ্ছল ও স্বাভাবিক মানুষগুলোর অবস্থাই যখন ত্রাহি ত্রাহি তখন ছিন্নমূল এসব মানুষ কেমন আছেন? জানতে শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে সরেজমিনে সিরাজগঞ্জ বাজার রেলস্টেশনে গেলে ফুটে ওঠে তাদের অসহায়ত্বের চিত্র।
স্টেশনের ঠাণ্ডা মেঝেতে মাদুর কিংবা চট বিছিয়ে বসে আছেন অনেকেই। পুরনো ছেঁড়া-ময়লা পড়া শীতের পোশাক গায়ে জড়িয়ে ঘুমানোর অপেক্ষায় রয়েছেন কেউ কেউ। অনেকেই জীর্ণ কাঁথায় প্রস্তুত করছেন নিজ নিজ বিছানা। কেউ আবার পুরনো ছেঁড়া চাদরে শরীর মুড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন।
কথা বলতে চাইলে ৭০ বছর বয়সি বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগম ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, শীতের ঠ্যালাই বাইচত্যাছি না বাপু, তুমি আবার ফটোক তুইলব্যার আইচ্যাও। আমাগোরে ফটোক তুইল্যা কী অইবো। শীতে মইরত্যাচি, তাও কেউ একটা কম্বল দেয় না।
বিছানায় বসে নিজের দুর্বিষহ জীবনের বর্ণনা দিতে গিয়ে এক সময়ে কামারখন্দের জামতৈল এলাকার বাসিন্দা এই বৃদ্ধা বলেন, প্যারালাইসে পঙ্গু হওয়া সোয়ামির চিকিৎসার জন্যি ৩০ বছর ধইর্যা ভিক্ষা কইর্চি। ১৪ বছর আগে সোয়ামি মইর্যা গেছে। একটা মেইয়্যা আচিলো ১১ বছর আগে সেও মইর্যা গেছে। এখন দেহার কেউ নাই। থাকার কুন জাগা নাই, তাই স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে থাকি।
আয়মনা বেগম ও হালিমা খাতুন বলেন, সারাদিন চরের মধ্য থেকে শাকপাতা তুলে এনে বাজারে বিক্রি করেন তারা। দেড়শ, দুশো যা আয় হয় তা দিয়ে নিজেদের খাবার যোগাড় হয়। শীতের পোশাক কেনার মতো টাকা যোগাড় সম্ভব হয় না তাদের।
স্টেশনের মজুর কালু শেখ বলেন, আগের মতো আর স্টেশনে কুলি-মজুরদের আয় নেই। সারাদিনে দু-একটি কাজ মিললেও মানুষ বেশি মজুরি দিতে চায় না। তা দিয়ে কোনোমতে খাবারের যোগাড় হয়। শীতের পোশাক কেনার সাধ্য হয় না।
হকার বাবলু মিয়া বলেন, এই শীতে খুউব কষ্ট করে টাকা যোগাড় করে একটা চাদর কিনেছিলাম। চাদর মুড়িয়ে প্ল্যাটফর্মে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় মাদকাসক্ত চোরেরা সেটা নিয়ে গেছে।
আক্ষেপের সুরে এসব ছিন্নমূল মানুষেরা বলেন, কষ্টের মধ্যেই আমাগোরে জীবন তাই আমাগোরে সবকিছুই অভ্যেস অইচে। আমাগোরে কম্বল না দিয়্যা যাগোরে আচে তারাই বেশি বেশি কইর্যা নিক। এবার একটু বেশি শীত পইড়চে তাই কষ্টটা বাইরা গেচে। আল্লায় এই শীতও পার কইর্যা নেবো।
স্থানীয় ট্রাক ও ট্যাংকলরি পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক দিদার আলমসহ অনেকেই বলেন, রেলস্টেশনে অর্ধশতাধিক মানুষ শীতে কষ্ট করে রাতযাপন করে। যারা শীতবস্ত্র বিতরণ করে, তারা আগে থেকেই তালিকা করে। ওই তালিকায় এসব মানুষের নাম ওঠে না।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরকার অসীম কুমার বাংলানিউজকে জানান, রেলস্টেশন এলাকায় ছিন্নমূল মানুষের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে কোনো কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কিনা সেটা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। যদি এখন পর্যন্ত তারা কোনো কম্বল না পেয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে সময় বুঝে তাদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৯
এএটি