ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বৃত্তির নামে কিন্ডারগার্টেনে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯
বৃত্তির নামে কিন্ডারগার্টেনে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ

হবিগঞ্জ: বৃত্তি পরীক্ষা আয়োজনের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে হবিগঞ্জ কিন্ডারগার্টেন ফোরাম নামে একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে। এছাড়া পরিক্ষার আগেই নির্দিষ্ট পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র প্রদান ও তাদের পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, গত তিন বছর ধরে বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করে আসছে হবিগঞ্জ কিন্ডারগার্টেন ফোরাম। কিন্তু এ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিশেষ পরিমাণ অর্থ নেওয়া হচ্ছে।

এ নিয়ে নানারকম শহরজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

জানা যায়, সর্বশেষ চলতি বছরের ২৯ নভেম্বর হবিগঞ্জ কিন্ডার গার্টেন ফোরামের বৃত্তি পরীক্ষায় ৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ১ হাজার ৪৪ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মাঝে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২০০ এবং তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৮৪৪ জন। পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২০০ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৪শ টাকা করে মোট ৮০ হাজার এবং তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীর ৮৪৪ জনের কাছ থেকে ৫শ টাকা করে মোট ৪ লাখ ২২ হাজার টাকা নেওয়া হয়। সব মিলিয়ে অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ লাখ ২ হাজার টাকা।

হবিগঞ্জ কিন্ডারগার্টেন ফোরামের নিয়মানুযায়ী বৃত্তিতে রয়েছে দুটি গ্রেড। একটি সাধারণ, অপরটি ট্যালেন্টপুল। ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় ৮০ থেকে ৯০ পেলে সাধারণ গ্রেড, অন্যদিকে যারা ৯০ থেকে ১০০ নম্বরের মধ্যে থাকে তাদের দেওয়া হয় ট্যালেন্টপুল বৃত্তি। এবারের পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ১ হাজার ৪৪ জনের মধ্যে বৃত্তি পেয়েছে ৫২০ শিক্ষার্থী। এদের প্রত্যেককে দেওয়া হবে ১টি করে ক্রেস্ট ও সনদপত্র।

ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি ক্রেস্ট তৈরিতে ১শ টাকা ও সনদপত্র তৈরিতে খরচ হয় ২০ টাকা। এ হিসেবে ৫২০ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিতে সর্বমোট খরচ দাঁড়ায় ৬২ হাজার ৪শ টাকা। এ খরচ বাদে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উত্তোলিত ৫ লাখ ২ হাজার টাকার মধ্যে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬শ টাকা চলে যাচ্ছে হবিগঞ্জ কিন্ডার গার্টেন ফোরামের ফান্ডে।

এদিকে পরীক্ষা গ্রহণ থেকে শুরু করে খাতা মূল্যায়ন পর্যন্ত সার্বিক প্রক্রিয়া নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। অনুসন্ধানে জানা যায়, বৃত্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কিন্ডারগার্টেনের বাইরের শিক্ষক দিয়ে তৈরি করা হলেও এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ থাকে সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ নেতাদের। এরই সূত্রে সংগঠনের  নেতাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র পেয়ে যায় এমন অভিযোগ অনেক অভিভাবকের। এছাড়া পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের দায়িত্বও থাকে নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষকের হাতে।

ফলাফল পর্যবেক্ষণে জানা গেছে, বৃত্তিপ্রাপ্তদের অধিকাংশই হবিগঞ্জ কিন্ডারগার্টেন ফোরামের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতিসহ অন্য নেতাদের নিযুক্তদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে সর্বশেষ বৃত্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের মধ্য থেকে ৭ পরীক্ষার্থী নিজেদের খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করে। পরবর্তীতে তার মধ্যে ৫ জনই বৃত্তি লাভ করে। কম্পিউটার অপারেটরের ভুলের কারণে প্রথমে তারা বৃত্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছিল বলে জানান কিন্ডার গার্টেনের এক কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষুব্ধ কয়েক অভিভাবক বলেন, বিশেষ কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হয়। কিন্তু, হবিগঞ্জ কিন্ডারগার্টেন ফোরামের বৃত্তি প্রদানের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। ১ হাজার ৪৪ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ৫২০ জনকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের একাংশকে বৃত্তি দেওয়া কতটুকু যৌক্তিক এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা।

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চত করে হবিগঞ্জ কিন্ডারগার্টেন ফোরামের হিসাব রক্ষক আব্দুস সাত্তার বলেন, শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়ার সব খরচ শেষে অবশিষ্ট টাকা সংগঠনের ফান্ডে জমা থাকে।

হবিগঞ্জ কিন্ডারগার্টেন ফোরামের সভাপতি এখলাছুর রহমান বলেন, বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ শিক্ষার উন্নয়নে ব্যয় করা হবে। ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষামুখী করাই তাদের সংগঠনের উদ্দেশ্য।

এ নেতা আরো জানান, প্রায় ৩ বছর পূর্বে হবিগঞ্জ কিন্ডারগার্টেন ফোরাম প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতি বছরই তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করা হয়।

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার ব্যাপারে বানিয়াচং সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক মঈনুল হোসেন বলেন, কোমলমতী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এভাবে টাকা নেওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে অনৈতিক। এতে অভিভাবকদের ওপর বাড়তি বোঝার পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এ ধরনের অবস্থা কোনোভাবেই চলতে দেওয়া উচিত নয়।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে, লিখিতভাবে এমন অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৪১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯
এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।